গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয়ে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের মধ্যে একজনের মৃতু্য হয়েছে।
সোলাইমান মোলস্না (৪৫) নামে ওই ব্যক্তির শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
শুক্রবার সকাল ১০টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক মৃদুল সরকার।
তিনি বলেন, 'উনার শরীরের ৯৫ শতাংশ ফ্লেইম বার্ন, সঙ্গে ইনহেলেশন ইনজুরি (শ্বাসতন্ত্র পুড়ে যাওয়া) ছিল। অবস্থা খারাপ হওয়ায় গত রাতে আইসিইউতে আনা হয়েছিল।'
কালিয়াকৈরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে এটিই প্রথম মৃতু্য। চিকিৎসকরা বলছেন, ওই দুর্ঘটনায় দগ্ধ সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক
ও আইসিইউ কনসালটেন্ট একরামুল হক সজল বৃহস্পতিবার রাতেই বলেছিলেন, আইসিইউতে যারা আছেন তাদের কারও অবস্থাই ভালো না।
তিনি বলেন, 'তাদের সবার অবস্থাই খুব খারাপ। তাদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তার মধ্যে আবার ৮০ শতাংশ, ৯০ শতাংশ এমনকি ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই এদের কামব্যাক করার সুযোগ কম।
বৃহস্পতিবার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় রাব্বি নামে ১৩ বছরের এক কিশোরকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। রাব্বির শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুড়ে গেছে শ্বাসনালিও।
এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আজিজুল হক নামে ২৪ বছর বয়সি একজনকে বৃহস্পতিবার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তার শরীরের ৩ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, বুধবার সন্ধ্যায় ইফতারের আগে আগে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ওই ঘটনা ঘটে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক তেলিরচালা এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, যে বাসায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে গ্যাস বের হতে থাকা গরম সিলিন্ডার ভেজা চট দিয়ে মুড়িয়ে বাইরে রেখে যান পরিবারের কেউ একজন। স্থানীয়দের অনেকে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন কী হচ্ছে সেটা দেখতে। সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বেরিয়ে যে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে তা বুঝতে পারেনি কেউ।
সে সময় পাশের আরেকটি বাসায় চুলা ধরাতে গেলে পুরো রাস্তায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাতেই দগ্ধ হয় সবাই।
ওই ঘটনার পর মারাত্মকভাবে দগ্ধ ৩২ জনকে রাতেই ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। তাদের অর্ধেকেরই পোড়ার মাত্রা ৫০ শতাংশের বেশি।
রোগীদের প্রায় সবার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যারা এসেছেন তার মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি বার্ন আছে ১৬ জনের। ৯০ শতাংশ দগ্ধের রোগী ১০ জনের বেশি, তার মধ্যে বাচ্চা আছে।