শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ জয় শ্রীলংকার

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ জয় শ্রীলংকার

চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের ম্যাচে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ও পেস বোলার তাসকিনের অবিশ্বাস্য সুন্দর ব্যাটিং। এই দুই বোলারের ব্যাটিং শৈলীর পরও সিরিজ বাঁচাতে পারেনি বাংলাদেশ। স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে টাইগারদের।

শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথমটিতে তিন রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ উইকেটের জয়ে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। তবে শনিবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ব্যাটারদের হতাশাজনক পারফরম্যান্সে ২৮ রানের শোচনীয় পরাজয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।

তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে তিন রানে জিতেছিল শ্রীলংকা। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ উইকেটের বড় জয়ে ১-১ সমতায় ফেরে শান্তরা। এতে তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচটি পরিণত হয় অলিখিত ফাইনালে। এর আগে শ্রীলংকার বিপক্ষে কখনোই টি২০ সিরিজ জেতেনি বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, এই সিরিজের আগে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে লংকানদের বিপক্ষে এর কোনো ম্যাচও জেতেনি টাইগাররা। তাই শান্ত বাহিনীর সামনে সুযোগ ছিল সিলেটে সিরিজের শেষ ম্যাচটি জিতে ইতিহাস গড়ার।

সিলেটে শনিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০তে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে কুশল মেন্ডিসের ৮৬ রানে ভর করে ৭ উইকেট হারিয়ে করে লংকানদের সংগ্রহ ১৭৪ রান। এরপর নুয়ান থুশারার হ্যাটট্রিকসহ ফাইফারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। এতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ। ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন নুয়ান থুশারা। সিরিজসেরা হয়েছেন কুশল মেন্ডিস। বাংলাদেশের লেগ স্পিনার ৩০ বলে ৫৩ ও পেসার তাসকিন আহমেদ ২১ বলে ৩১ রান করেন।

সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক করেন নুয়ান থুশারা। স্স্নিঙ্গিং অ্যাকশনের পেসারের কোনো জবাবই দিতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউলস্নাহ।

সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে কুশল মেন্ডিস

একাই ভুগিয়েছেন বাংলাদেশি বোলারদের। তার ঝড়ো ইনিংসে ভর করে লড়াইয়ের জন্য ভালো পুঁজি পেয়েছে শ্রীলংকা। ইতিহাস গড়ার ম্যাচে তাই জয়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দাঁড়ায় শান্ত বাহিনীর সামনে। শ্রীলংকার হয়ে একাই ক্রিজে আধিপত্য করেছিলেন কুশল মেন্ডিস। ৮৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। টাইগার বোলারদের মধ্যে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও রিশাদ হোসেন।

লংকানদের ছুঁড়ে দেওয়া ১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেখেশুনেই শুরু করেছিলেন দুই টাইগার ওপেনার। তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ রানেই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার লিটন। ওভার শেষ না করেই উঠে যান ম্যাথুস। এরপর তার অসম্পন্ন ওভার করতে আসেন ধনাঞ্জয়া। এসেই লিটনকে ফিরিয়েছেন তিনি। ধনাঞ্জয়ার অফ-স্ট্যাম্পের ডেলিভারিতে ওপরে ক্যাচ তুলেন লিটন। লিটন ফেরার পর রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন নুয়ান থুশারা। নিজের প্রথম ওভারে এসেই হ্যাটট্রিক করেছেন লংকান এই পেসার।

শুরুটা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর হৃদয় এবং সবশেষে মাহমুদউলস্নাহ! ৩ বল ব্যবধানে ১৫/১ থেকে বাংলাদেশ ১৫/৪!

লিটনকে হারিয়ে বিপদে পড়া লাল-সবুজ শিবিরকে আরও হতাশায় ডুবান শান্ত। থুশারার চমকপ্রদ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন শান্ত। ঠিক পরের বলে ভাঙল তাওহিদ হৃদয়ের স্ট্যাম্পও। এবার লেংথের সিম ডেলিভারি বুঝে উঠতেই পারেনি মিডল-অর্ডার এই ব্যাটার। এরপর হ্যাটট্রিকও পেয়েছেন থুশারা। তার লেংথ থেকে নিচু বলে স্কয়ারড-আপ হয়ে ফিরেছেন মাহমুদউলস্নাহ। রিভিউ নিয়েও ফায়দা হয়নি। আম্পায়ার্স কলের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ফলে পঞ্চম লংকান বোলার হিসেবে টি২০তে হ্যাটট্রিক পান থুশারা। এরপর দলের হাল ধরতে পারেননি সৌম্যও। থুশারার আঘাত থেকে রক্ষা পাননি এই ওপেনার। নিজের ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে তাকেও বোল্ড করেছেন লংকান এই পেসার।

এমন বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন জাকের আলী ও মেহেদী হাসান জুটি। তবে হাসারাঙ্গার গুগলিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে কাটা পড়েন জাকের। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিলেও বহাল থেকেছে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্ত।

ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মেহেদী-রিশাদ জুটি। তবে সেটিও টেকেনি বেশিক্ষণ! ৩১ বলে ৪৪ রানে ভেঙেছে এই জুটি। মেহেদীকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছেন লংকান অধিনায়ক হাসারাঙ্গা। এরপর টপ-অর্ডার ও মিডল-অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন স্পিনার রিশাদ হোসেন। দলীয় বিপর্যয়ের মুহূর্তে ব্যাট করতে নেমে ২৬ বলে ৭ ছক্কায় ফিফটি করেন এই স্পিনার। তবে এরপর আর সেভাবে হাসেনি তার ব্যাট। শেষ পর্যন্ত ১৪৬ রানে থেমেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের ইনিংস।

এদিন টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। নবম ওভার পর্যন্ত ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রেখেছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম সাফল্য এনে দেন তাসকিন। টাইগার পেসারের গুড লেংথের বল তুলে মারতে গিয়ে বৃত্তের ভেতরই সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন লংকান ওপেনার ধনাঞ্জায় ডি সিলভা। ১২ বলে ১ চারের মারে ৮ রানে থামে তার ইনিংস।

অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে কুশলের বিপক্ষে ছক্কা হজম করলেও কামিন্দুকে পরাস্ত করেন রিশাদ হোসেন। তার বল সামনে এসে তুলে মারলেও তাতে নিয়ন্ত্রণ ছিল না কামিন্দুর। লং অফে শরিফুল ইসলামের হাতে ওঠে ক্যাচ। ১২ বলে ১২ রানে থামেন কামিন্দু। তবে ক্রিজের একপ্রান্ত আগলে রাখেন আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিস।

নবম ওভার পর্যন্ত ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দশম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের এক ওভারে ছন্দ হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। বাজে বোলিংয়ের খেসারত দিয়ে ১৮ রান খরচ করেন মুস্তাফিজ। চার-ছক্কা হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে চলে যান কুশল মেন্ডিসও। এরপর লংকান এই ব্যাটার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে শাসন চালান টাইগার বোলারদের ওপর। তৃতীয় উইকেটে জুটিতে হাসারাঙ্গা-কুশল দলকে এনে দেন ৫৯ রান। ১৩তম ওভারে মুস্তাফিজের বাউন্সার ডিপ থার্ড ম্যান অঞ্চলের ওপর দিকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে শরিফুলের হাতে ধরা পড়েন হাসারাঙ্গা। ১৩ বলে ১৫ রানে থামে তার ইনিংস। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট হাতে দাপট চালিয়ে যান কুশল। চতুর্থ উইকেট জুটিতে অবশ্য তাকে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন চারিথ আসালাঙ্কা। ৫ বলে ৩ রান করে শরিফুলের বাউন্সারে ব্যর্থ হয়ে ক্যাচ তুলে দেন মুস্তাফিজের হাতে।

অন্যদিকে তাসকিন যখন কুশলের ঝড় থামান ততক্ষণে ১৬.৫ ওভারে শ্রীলংকার সংগ্রহ ১৪০ রান। ৫৫ বলে ৬ ছক্কা ও ৬ চারের মারে ক্যারিয়ারসেরা ৮৬ রান করে আউট হন কুশল। শেষদিকে দাসুন শানাকার ৯ বলে ১৯ ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ৭ বলে ১০ রানের ইনিংসে ভর করে ১৭০ ছাড়ানো সংগ্রহ পায় লংকানরা। যদিও কুশল যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন- সংগ্রহটা দুইশ ছাড়িয়ে যাওয়ার বার্তাই দিয়েছিল। কিন্তু শেষদিকে তাসকিন ও রিশাদ দারুণভাবে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছেন।

বাংলাদেশের পক্ষে ২৫ রান খরচায় ২ উইকেট নেন তাসকিন। ২ উইকেট নিতে রিশাদের খরচ ৩৫ রান। ২৮ রান খরচায় ১ উইকেট নেন শরিফুল। সবচেয়ে বেশি ৪৭ রান খরচ দিয়ে ১ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

শ্রীলংকা: ২০ ওভারে ১৭৪/৭ (ধনাঞ্জয়া ৮, কুশল ৮৬, কামিন্দু ১২, হাসারাঙ্গা ১৫, আসালাঙ্কা ৩, ম্যাথিউস ১০, শানাকা ১৯, সামারাউইক্রামা ৭*; শরিফুল ১/২৮, তাসকিন ২/২৫, মেহেদি ০/২২, মুস্তাফিজ ১/৪৭ রিশাদ ২/৩৫, সৌম্য ০/১১)।

বাংলাদেশ :১৯.৪ ওভারে ১৪৬ (লিটন ৭, সৌম্য, শান্ত ১, হৃদয় ০, মাহমুদউলস্নাহ ০, জাকের ৪, মেহেদী ১৯, রিশাদ ৫৩, তাসকিন ৩১, শরিফুল ৪, মুস্তাফিজ ৭*; ম্যাথুস ০/৫, ফার্নান্দো ০/৩৯, ডি সিলভা ১/২, নুয়ান থুশারা ৫/২০, হাসারাঙ্গা ২/৩২, থিকসানা ১/৩৫, শানাকা ১/১১)।

ফল : শ্রীলংকা ২৮ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা : নুয়ান থুশারা

সিরিজসেরা : কুশল মেন্ডিস।

ক্যাপসন: সিলেটে শনিবার তৃতীয় টি২০ ম্যাচে সফরকারী শ্রীলংকার বিপক্ষে অর্ধশতক রান করেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন -ওয়েবসাইট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে