ঢাকায় নানা আয়োজনে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন শুরু

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শুক্রবার জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা -যাযাদি
রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় নানা আয়োজনে শুরু হয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন। তিন দিনের এই আয়োজনে সারাদেশ থেকে আসা ৭শ'র বেশি শিল্পী ও সঙ্গঠক অংশ নিচ্ছেন। শুক্রবার সকালে অধিবেশনের উদ্বোধন করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। জাতীয় নাট্যশালায় 'আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে' সঙ্গীতের সঙ্গে প্রদীপ প্রজ্বলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। বোধনসঙ্গীত ছিল 'নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে'। স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আজ প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের মধ্যে একদিকে বিশ্বব্যাপী কালান্তর ঘটে চলেছে। অন্যদিকে বিশ্বের নানা প্রান্তে চলছে মানবতার চরম লাঞ্ছনা। গাজায় হত্যাযজ্ঞে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।' দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানবতার বিপর্যয় নিয়ে যে আর্তি প্রকাশ করেছিলেন, তা থেকে যেন কিছুই শেখা হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। উদ্বোধনী বক্তব্যে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, 'নিবেদিত প্রাণের শিল্পী জাহিদুর রহিমকে স্মরণ করার সূত্র ধরে সূচনা হয়েছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের। আজ দেশের রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার শুদ্ধ ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলা অন্যতম প্রতিষ্ঠান এটি। নজরুলসঙ্গীত, পঞ্চকবির গান ও লোকসঙ্গীত প্রচারেও তাদের কাজ গুরুত্বপূর্ণ।' রামেন্দু মজুমদার আরও বলেন, 'প্রতিবছর এই বার্ষিক অধিবেশনের মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নবীন প্রতিভাদের সামনে নিয়ে আসা হয়। আবার ঢাকা থেকে শিক্ষকরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে যে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজটি শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম বিশেষ রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী প্রয়াত ওয়াহিদুল হক।' উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওয়াহিদুল হকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান রামেন্দু মজুমদার। তার বক্তব্যে আরও উঠে আসে- 'রবীন্দ্রনাথ শুধু উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া নয়, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের পাওয়া হয়েছে' সে কথাও। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, 'তবুও মানুষের প্রতি ভরসাই এনে দিতে পারে অন্ধকার সরিয়ে আলো। তাই বোধনসঙ্গীত হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের নিশিদিন ভরসা রাখিস গানটি।' এত বছর পরেও রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে কেন সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, সে উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আজকের বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক ঘটে, তবে সবচেয়ে বড় দুর্যোগটি ঘটে গিয়েছে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে। প্রতিটি পর্যায়ে আমরা সংখ্যা বাড়িয়েছি, কিন্তু গুণমান নিয়ে খুব সচেতন ছিলাম না। এখনো আমরা মানবিক, সৃষ্টিশীল ও অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দিয়ে উঠতে পারছি না। রবীন্দ্রনাথ বলতেন, শিক্ষার পাঠক্রম শিক্ষালয়ের বাইরের জগৎ নিয়েও। তাই স্বদেশের পাশাপাশি গোটা বিশ্বকে বুঝতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।' এরপর শুরু হয় গীতি-আলেখ্য: সত্যের আনন্দ রূপ এই তো জাগিছে। দুপুরের আয়োজন ছিল কিশোর বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। প্রথম দিনের সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বলন, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও নৃত্য-আলেখ্য অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে, 'জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ' নামে। ১৯৮১ সালে বিভাগীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রতিযোগিতা ও সম্মেলন অনুষ্ঠানসহ প্রথম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজন করে 'জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ'। ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে এই সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপকতর ভিত্তিতে 'দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদ' গঠন করে দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এরপর থেকে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই সম্মেলন। এবারও বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে যথারীতি প্রকাশিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক এবং সংস্কৃতি বিষয়ে বিশিষ্টজনের লেখা প্রবন্ধের সংকলন 'সঙ্গীতসংস্কৃতি'। তিন দিনের এ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আজ সকালে আছে সাধারণ বিভাগের প্রতিযোগিতা, প্রতিনিধি সম্মেলন, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। আগামীকাল রোববার সমাপনী অধিবেশন সকাল ৯টায় শুরু হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পরে থাকবে সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে সনদ ও পুরস্কার প্রদান। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় প্রদীপ প্রজ্বলন, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের ৪২তম এই অধিবেশন।