রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল

অনিয়ম ও দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনের বেহালদশা!

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে রেল দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে একের পর এক ঘটে চলেছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে গঠিত হয় কমিটি, যাদের নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু দিন যায়, মাস গড়ায়, তবুও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয় না। হলেও প্রতিবেদন নিয়ে চলে লুকোচুরি। একে অন্যকে বাঁচাতে আশ্রয় নেওয়া হয় নানা ছলচাতুরির। তদন্ত প্রতিবেদনের এই বেহালদশা নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ঘিরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সম্প্রতি চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে রেলওয়ের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের তহবিলের ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা লোপাটের ঘটনা নিয়ে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়েও চলছে কানা-ঘুষা। জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রম্নয়ারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের শেষ দিন ছিল। কিন্তু এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। যদিও এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার কথা বলছে তদন্ত কমিটি। তবে তাদের নাম প্রকাশ নিয়েও চলছে লুকোচুরি। এমনকি এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়রিও করা হয়নি। সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা জয়শ্রী মজুমদার রশ্মি বলেন, 'তদন্ত শেষ হয়েছে। জড়িতদের আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। প্রতিবেদন ইতোমধ্যে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (অর্থ) বরাবরে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলতে পারব না।' রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. সাইদুর রহমান সরকার বলেন, 'আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়তো আরও সময় লাগতে পারে। এরপর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। তাছাড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স দি কসমোপলিটন করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে রেলের বেশকিছু সরঞ্জাম কেনা হয়। এর মধ্যে চারটি দরপত্রের বিল ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা কসমোপলিটনকে পরিশোধের জন্য হিসাববিভাগকে চিঠি দেন প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ উদ্দীন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিলের অর্থ উঠিয়ে নিয়েছে। তবে এই অংকের বাইরে আরও ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা ওই প্রতিষ্ঠানের নামে তুলে নেওয়া হয়। রেলওয়েকে কোনো পণ্য সরবরাহ না করে এত টাকা তুলে নেওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আলোচনা-সমালোচনার মুখে গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জয়শ্রী মজুমদার রশ্মিকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে রেলওয়ে। এছাড়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগে গত ৮ মাসে ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজনের মৃতু্য হয়েছেন, আহত হয়েছেন শতাধিক। এসব দুর্ঘটনার পর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল নিয়েও চলছে লুকোচুরি। ফলে অপরাধ করেও অনেকে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ বিষয়ে ফৌজদারহাট স্টেশন দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটির সদস্য বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ আবদুল হানিফ বলেন, 'আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্তারিত খোঁজ নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরই বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের (ডিআরএম) কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।' অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে নানা অনিয়ম ও দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারাও একাধিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এসব কর্মকর্তার অনেকেই দুদকের মামলার আসামি। ফলে তদন্তের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের একে অপরকে বাঁচাতে ছল চাতুরির আশ্রয় নেন তারা। এতে অপরাধ করেও শাস্তি থেকে রেহাই পান এসব কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিআরএম মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ছাড়াও যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। আর ঘটনাগুলো তদন্ত করতে গিয়ে হয়তো যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়ে ওঠে না। আবার অভিজ্ঞ জনবল সংকটের কারণে দোষীদের কঠিন শাস্তি দেওয়া যায় না। এজন্য সাময়িক বহিষ্কার বা বেতন আটকানোর মতো শাস্তি দেওয়া হয়।'