পোড়া চিনির বর্জ্য
কর্ণফুলীতে মরছে মাছ, পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা
প্রকাশ | ০৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামে এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানার পুড়ে যাওয়া চিনির বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়তেই এর বিরূপ প্রভাব শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই নদীতে মারা যাচ্ছে মাছ, কাঁকড়াসহ নানা জলজ প্রাণী। এদিন রাত থেকে স্থানীয় লোকজন নদীতে নেমে মাছ ধরছে। আর পরিবেশবিদরা বলছেন, পোড়া চিনির বর্জ্য নদীতে মেশায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
বুধবার সকালে মাছ ধরায় জড়িত স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, 'মঙ্গলবার রাত থেকে নদীতে মাছ মরে যাচ্ছে। এস আলমের পোড়া চিনি নদীতে পড়ার পর মাছ মরছে। এর আগে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটেনি। পোড়া চিনির বর্জ্যগুলো কারখানা থেকে সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এভাবে চললে নদীর মাছ একটিও থাকবে না। সব মরে ভেসে উঠবে।'
স্থানীয়রা জানান, এস আলমের পোড়া চিনির বর্জ্য কারখানা থেকে সরাসরি ড্রেনের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে। পোড়া চিনির বর্জ্যে নদীর পানির রং পরিবর্তন হয়ে লালচে বর্ণে রূপ নিয়েছে। নদীর কয়েক কিলোমিটার জুড়ে পানির রং পরিবর্তন হয়েছে। যেসব স্থানে পানি দূষিত হয়েছে শুধু সেসব স্থানেই মরছে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী।
তবে এ বিষয়ে এস আলম গ্রম্নপের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি বুধবার কোনো সংবাদকর্মীকে কারখানা এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গেটের সামনে দায়িত্বরত কর্মচারীরা জানান, কর্মকর্তারা বলে দিয়েছেন যাতে কোনো সাংবাদিক ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, 'সুগার মিলের পোড়া চিনি কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে এমন তথ্য পেয়ে মঙ্গলবার আমাদের ল্যাব থেকে লোকজন গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ল্যাবের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।'
তিনি বলেন, 'পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে মাছসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য মারা যাচ্ছে বা দুর্বল হয়ে পড়ছে। অবশ্যই এটি নদীর জন্য ক্ষতির কারণ।'
পরিবেশবিদ ড. ইদ্রিস আলী বলেন, 'শিল্পকারখানা গড়ে তোলার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত ছিল। তারা ডাম্পিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখেনি। এ কারণে কারখানা থেকে পোড়া বর্জ্য পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে নদীর পানি দূষিত হবে। ক্ষতি হবে মৎস্যসম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য। এস আলম গ্রম্নপ হয়তো পুড়ে যাওয়া সম্পদের ক্ষতি একসময় পোষাতে পারবে। পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা আর পূরণ হবে না। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সজাগ হতে হবে।'
হালদা নদী গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, 'পুড়ে যাওয়া চিনি নদীতে পড়লে অবশ্যই নদীর ক্ষতি হবে। চিনি হোক আর যা হোক এগুলো এক্সট্রা কেমিক্যাল। এগুলো পানির কোয়ালিটি নষ্ট করবে। এতে পানিতে অক্সিজেনের শূন্যতা সৃষ্টি হবে। এ কারণে পানিতে থাকা জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তাই এসব যাতে নদীতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে জোয়ার-ভাটার কারণে এই সমস্যা একসময় পূরণ হবে। তাও সময় সাপেক্ষ।'
মঙ্গলবার এস আলম গ্রম্নপের জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) আকতার হাসান সাংবাদিকদের বলেন, 'আগুনে পোড়া চিনি কর্ণফুলীতে যাচ্ছে না। এসব নিজস্ব জমিতে ডাম্পিং করা হচ্ছে। আর নদীতে গেলেও তা নদী কিংবা জীববৈচিত্র্যের কোনো ক্ষতি হবে না। কেননা, এখানে কোনো ক্ষতিকারক রাসায়নিক নেই।'
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক বলেন, 'বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নির্বাপণে কাজ করছে। গুদামটির চারপাশ থেকে পানি দেওয়া হচ্ছে। গুদামটির টিন খুলে ফেলা হচ্ছে।'
এস আলম গ্রম্নপের মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. হোসেন বলেন, 'সোমবার ১ নম্বর গুদামে আগুন লাগে। গুদামটিতে এক লাখ মেট্রিক টনের বেশি অপরিশোধিত চিনি ছিল। যার সবটুকুই পুড়ে গেছে। যার বাজারমূল্য এক হাজার কোটি টাকার বেশি। এখনো আগুন জ্বলছে।'