আইন সংশোধন করে নির্দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থায় ফেরার দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন। সংগঠনটি মনে করে এতে প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাড়বে।
বুধবার অনলাইনে ময়মনসিংহ ও কুমিলস্না সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুজনের নেতারা এমন দাবি তোলেন।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা আগেও দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের বিপক্ষে ছিলাম। কাজেই নির্দলীয় নির্বাচনের কথা যা বলা হচ্ছে তা আইন সংশোধন করে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত। নির্দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন হলে প্রার্থী সংখ্যা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, নির্দলীয় বলতে দলে মনোনয়ন নয়, বিষয়টি এমন নয়। কোনো প্রার্থীকে কোনো দল সমর্থনও দিতে পারবে না।
সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, আমরা আগেও দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরোধিতা করেছি। এখন যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিত তাহলে কি আওয়ামী লীগ নির্দলীয় প্রার্থী দিত তাই নির্দলীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় আইনে সংশোধন করে ফিরে যেতে হবে।
আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় ময়মনসিংহ ও কুমিলস্না সিটি নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে সুজনের পক্ষ থেকে ভোটার, দল, প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি একগুচ্ছ আহ্বান জানায় সুজন।
প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রতি আহ্বান : অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাই যেন নিজের অবস্থানে থেকে যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করেন, সে লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করুন।
নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন। অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে ভোট ক্রয় থেকে বিরত থাকুন।
ভোটার বা অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন বা কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকুন। নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন এবং যেকোনো ধরনের ফলাফল স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিন।
ভোটারদের প্রতি আহ্বান : ভোটদানকে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দায়িত্ব মনে করে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করুন। অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন।
দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, কালো টাকার মালিক অর্থাৎ কোনো অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেবেন না।
রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান : যেকোনো মূল্যে বিজয়ী হওয়ার মনোভাব পরিত্যাগ করে নির্বাচনকে একটি প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন।
মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান : নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন। আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য কোনোভাবেই প্রভাবিত করবেন না।
নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান : নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন। কোনো বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে বা কোনো দলের অনুগত হয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম সৃষ্টিকারীদের পুলিশে সোপর্দ করুন।
অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের আওতার বাইরে গেলে ভোট গ্রহণ বন্ধ করুন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান : যথাযথভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করুন। পক্ষপাতমূলক আচরণ বা দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান : নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন। প্রার্থীদের সম্পর্কে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করুন। আয়োজন সংগঠনের নেতারা এ সময় বলেন, আশা করি নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন নিজেদের অবস্থানে থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আসন্ন সিটি নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন।