বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জুয়া খেলা নিয়ে রণক্ষেত্র

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ০৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জুয়া খেলা নিয়ে রণক্ষেত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিরাসার গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকালে দুই গোষ্ঠীর (বড়গোষ্ঠী ও মহাজোট) মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে অন্তত ৪০টি ঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও কয়েকটি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ৫ পুলিশসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বিরাসার গ্রামে সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক লাঠিপেটা, ৩ রাউন্ড কাঁদানো গ্যাস এবং ১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ চলাকালে গুলি চালানোর সময় পুলিশ মো. জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া ৩টি ককটেল, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। প্রেপ্তার করা হয় আরও ৭ দাঙ্গাবাজকে।

স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, রোববার রাতে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে বিরাসার গ্রামের পশ্চিমপাড়ার বড়গোষ্ঠীর কাসেম মাস্টার ও চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক বাবুল মিয়ার গোষ্ঠীর আল-আমিনের সঙ্গে একই এলাকার মহাজোট হিসেবে পরিচিত পৌরসভার প্যানেল মেয়র মিজান আনসারীর গোষ্ঠী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তাজ মোহাম্মদ ইয়াছিন ও সৈয়দ আলী মিয়ার গোষ্ঠীর নূরুলস্নাহ ও সুজনের প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে হাতাহাতি হয়।

এ ঘটনার জেরে সোমবার বিকালে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরই জেরে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উভয় পক্ষ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন।

আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৪০টি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট এবং ৪/৫টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে দাঙ্গাবাজরা। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। নারী ও শিশুরা ভয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন জানান, সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. বিলস্নাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ লাইন্স থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক লাঠিপেটা, ৩ রাউন্ড কাঁদানো গ্যাস এবং ১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ সময় পুলিশ গুলি করার সময় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং ৫ রাউন্ড গুলিসহ বড়গোষ্ঠীর মো. জসিম উদ্দিন (৩৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে আরও ৭ দাঙ্গাবাজকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংঘর্ষে ইটের আঘাতে সময় টিভির ব্রাহ্মণবাড়িয়া অফিসের বু্যরো চিফ উজ্জ্বল চক্রবর্তী, সদর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মো. সোহেলসহ ৫ পুলিশ সদস্য এবং উভয় পক্ষের আরও ৩০ জন আহত হন।

নাটাই উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু সাঈদ জানান, জুয়া খেলার ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত। সোমবার সংঘর্ষের বিষয়টি আমরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। তিনি বলেন, 'বিরাসার গ্রামের কয়েকটি গোষ্ঠী এই সংঘর্ষে জড়িত হয়েছে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।'

এ ব্যাপারে বড়গোষ্ঠীর নেতা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মো. বাবুল মিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইলে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও আনসারী গোষ্ঠীর নেতা মো. মিজানুর রহমান আনসারী বলেন, 'মঙ্গলবার সকালে বড়গোষ্ঠীর আহত একজন মারা গেছেন এমন গুজব তুলে বড়গোষ্ঠীর দাঙ্গাবাজরা মহাজোটের লোকদের বাড়িঘরে হামলা করলে সারা গ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে