গাজীপুরের শ্রীপুরে বেতন বৃদ্ধি ও সরকার নির্ধারিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জমজম স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শ্রমিকরা। অভিযোগ উঠেছে, গাজীপুরের অন্যান্য স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন সাড়ে নয় হাজার টাকা নির্ধারিত হলেও তাদের সর্বনিম্ন বেতন ৭ হাজার টাকাই রয়ে গেছে। এ নিয়ে জমজম স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ম্যানেজার, জিএম'র সঙ্গে কথা বলেও কোনো আশ্বাস পাননি তারা। তবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভ থামিয়েছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জমজম স্পিনিং মিলস লিমিটেড কারখানার সহস্রাধিক শ্রমিক ভোর ছয়টা থেকে আটটা পর্যন্ত সেখানে বিক্ষোভ করেন। পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা পৌনে আটটার দিকে সড়ক থেকে সরে যান।
এদিকে মহাসড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ করায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। চার লেনের সড়কটির দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। তবে শ্রমিকরা সরে গেলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের ভাষ্য, ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ গত জানুয়ারি, ফেব্রম্নয়ারি ও সর্বশেষ মার্চ মাস পর্যন্ত বর্ধিত বেতন পরিশোধ করার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। তাই গত তিন মাসের বর্ধিত বেতন ও প্রতিমাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধের দাবি আদায়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের মধ্যে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'শ্রীপুরের প্রায় সব কারখানা সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করছে। কিন্তু জমজম স্পিনিং কারখানাটি সেই নিয়ম মানছে না।'
শ্রমিক আব্দুল জলিল জানান, তিন মাস ধরে বর্ধিত বেতনের শুধু আশ্বাস পেয়েছেন তারা। কিন্তু পূর্বের কাঠামো অনুযায়ী বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে।
আন্দোলনরত শ্রমিক মোসা. নাজনীন আক্তার বলেন, 'সরকার বেতন বাড়ালেও কারখানা থেকে তারা আগের বেতন পাচ্ছেন। এতে তাদের ঘর ভাড়া, খাওয়া খরচসহ জীবন নির্বাহ করতে সমস্যা হচ্ছে। গত তিন মাসের বকেয়া বর্ধিত বেতন একসঙ্গে পরিশোধ করার দাবি তাদের।
জমজম স্পিনিং মিলস লিমিটেড কারখানার প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধানের জন্য শ্রমিকদের কারখানায় ফেরত আসতে বলেছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ জামান বলেন, 'শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে কারখানায় গেছেন।? কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি-দাওয়ার বিষয়টি সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক।'
মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন জানান, বেতন বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়ে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে কারখানার ভেতর নেওয়া হয়েছে।
গত বছরের শেষ দিকে শ্রমিকদের বিভিন্ন সময় দাবিদাওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার পোশাক খাতে নূ্যনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে। মোট চারটি গ্রেডে এই বেতন পরিশোধে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নিম্নতম মজুরি বোর্ড (এমডবিস্নউবি) শ্রমিকদের নতুন এই বেতন কাঠামো নিয়ে শিল্প মালিক ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে। তবে দেশের সুতা উৎপাদনকারী স্পিনিং কারখানাগুলো এই সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে কি না, তা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। মজুরি বৃদ্ধির পর থেকে এই সমন্বয়হীনতার কারণে দেশজুড়ে দফায় দফায় শ্রমিক বিক্ষোভ হতে দেখা গেছে।