দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে প্রতি মাসে, প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহেই বাজার মনিটরিং করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
মঙ্গলবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনের চতুর্থ অধিবেশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করা হয়েছে। প্রতিমাসে এবং প্রয়োজন হলে প্রতি সপ্তাহেই বাজার মনিটরিং করে। যাতে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।'
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ডিসিদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রস্তাব আসেনি বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'বিভিন্ন ধরনের কিছু ছোট ছোট পয়েন্ট যেমন- মাদকদ্রব্য নিয়ে কথা বলেছেন; জেলখানায় কয়েদিদের আরও একটু ভালো খাবার দেওয়ার কথা বলেছেন; অচল বন্দিদের কীভাবে আরও একটু ছাড় দেওয়া যায় কিনা এসব বিষয়ে কথা বলেছেন ডিসিরা। এছাড়া ভার্চুয়াল কোর্ট যেটা করোনার সময় চালু করা হয়েছিল, সেটা বাংলাদেশের সব জায়গায় চালু করা যায় কিনা; বিশেষ করে জঙ্গিদের আনা-নেওয়া রিস্ক থাকে। এই ধরনের কয়েদিদের ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে করা যায় কিনা সেটা নিয়ে তারা বলেছেন। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সারা বাংলাদেশে চালু করা যায় কিনা সেটা দেখব বলে জানিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'সচিবরা জেলা পর্যায়ের কোর কমিটির প্রতি মাসে একটি সভা করার নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে সবার সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক থাকে এবং কোনো অসুবিধা হলে সেগুলো যেন দ্রম্নত সমাধান করতে পারেন।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। তারপরও কিছু ছোট ছোট মাদকদ্রব্য যা চোখে দেখা যায় না, বা দৃশ্যমান কোনো কিছু দিয়ে পরিবহণ করা হয় না। যেমন ইয়াবা, এলএসডি; মানুষ যদি না জানে এগুলো কীভাবে পরিবহণ করে, তা বুঝতে পারবে না। এসব ড্রাগ ব্যবহার রোধে জেলা প্রশাসকদের সামাজিকভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা মাদকের ব্যবহার রোধ করছি। আমরা তামাকের, ধূমপানের বিরুদ্ধে কথা বলছি না।'
তিনি বলেন, 'আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, কেউ প্রকাশ্যে ধূমপান করে না। ধূপমান করলে কেউ আড়ালে আবডালে করে। আমরা সে জায়গাগুলোতে কাজ করার জন্য ডিসিদের বলেছি।'
নদীপথে যত্রতত্র বালু উত্তোলন না করার বিষয়েও ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'আপনাদের পাশে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন থাকবে। যখন আপনাদের প্রয়োজন হবে তখন নিরাপত্তা বাহিনী আপনার পাশে থাকবে।'
পণ্য মজুত করলে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা: আইনমন্ত্রী
পণ্য মজুত করে কেউ বাজার ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করলে ১৯৭৪ সালের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট বা বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। একই সঙ্গে মোবাইল কোর্টের মামলাগুলো দ্রম্নত পদক্ষেপ নিয়ে সুষ্ঠু নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। এছাড়া মামলা জট নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে 'জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৪' এর তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
অধিবেশনে ডিসিরা কী বলেছেন এবং আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, 'ডিসিরা কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করেছেন এবং আমাদের আইন সচিব সেই প্রশ্নের জবাবে দিয়েছেন। যেসব মাল জব্দ করা হয়, সেসব মাল নিষ্পত্তির বিষয়ে কী করা উচিত এবং আধুনিকায়নের বিষয়ে কিছু প্রস্তাব এসেছে, আমরা ই-জুডিশিয়ারির কথা বলেছি। সেখানে কতটুকু সুবিধা হবে, সে কথা বলেছি।'
মামলা জট নিরসনে ডিসিরা যেন সহযোগিতা করেন, সে বিষয়ে বলা হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'মোবাইল কোর্ট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে একটা মামলা আছে। সেটা নিষ্পত্তির জন্য আমরা ত্বরিত পদক্ষেপ নেব। এছাড়া একটা বিষয়ে স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে, সেটা হলো অনেক সময় হাইকোর্ট বিভাগে কেউ যদি মামলা করে তখন হাইকোর্ট একটা আবেদন নিষ্পত্তির জন্য একটা আদেশ দেন। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় জটিলতা দেখা দেয়, যে হাইকোর্টের আদেশ না বুঝে অনেক দেরি করা হয়। সে বিষয়ে স্পষ্টীকরণ করে দেওয়া হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং আমি বলেছি- আবেদনটি ডিসপোজ করা বা সম্ভব হলে গ্রহণ করা। আর যদি সম্ভব না হয় তাহলে একটা জবাব দিয়ে এ ব্যাপারটা নিষ্পত্তি করে দেওয়া। সে বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু ছিল না।'
বাজার ব্যবস্থায় যদি কেউ অস্থিতিশীল করে বা মজুত করে তাহলে তাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন, সে বিষয়ে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নিজেই দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য ১৯৭৪ সালে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট করা হয়েছিল। বিশেষ এই কারণটাকে চিহ্নিত করার জন্য এই অ্যাক্ট করা হয়েছে। আর আমি এখন আপনাদের মাধ্যমে বলছি, এরকম কাজ করলে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
সম্প্রতি রেস্টুরেন্টে আগুন লাগার ঘটনা ঘটল এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে, আইনের শাসন না থাকার কারণে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে বা গাফিলতির জন্য ঘটছে এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, 'তদন্ত শেষ হয়ে যদি আদালতের কাছে তদন্ত রিপোর্ট আসে এবং সেখানে যদি মামলা শুরু করা হয়। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, এই মামলা দ্রম্নত নিষ্পত্তি করার জন্য আমাদের প্রসিকিউশনকে যে নির্দেশনা দেওয়া দরকার সেটি দেওয়া হবে।'
দুই ভাগে রাজাকারের
তালিকা : মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, রাজাকারের তালিকার বিষয়ে দুই ভাগে কাজ করা হচ্ছে। একটি হলো সক্রিয়ভাবে যারা কাজ করেছে তাদের নিয়ে এবং আরেকটি হলো জীবন বাঁচানোর জন্য যারা রাজাকার হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন তাদের নিয়ে।
মঙ্গলবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৪ এর তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, 'আমাদের যে সমস্ত কাজকর্ম চলছে, যেমন- বদ্ধভূমি, যুদ্ধকালীন ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস, সে সব কাজকর্ম যেন যথাযথভাবে হয়, সেজন্য তাদের (ডিসি) তদারকি-তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের যেসব সমস্যা আছে, বা কিছু নিয়ে গেলে সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজাকারের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রাজাকারের তালিকার জন্য আলাদা কমিটি আছে। সরকারিভাবে যে তালিকা ছিল, সেটা কিন্তু আমরা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিলাম। তখন দেখা গেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা যুদ্ধের পক্ষে ছিল এমন মানুষের নাম তালিকায় এসেছে। তখন দেশবাসী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু রেকর্ডে তাদের নাম ছিল। এখন আমরা দুই ভাগে ভাগ করেছি।'
তিনি বলেন, একটি হলো সক্রিয়ভাবে যারা কাজ করেছে। যেমন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে রাস্তাঘাট চিনিয়ে নিয়ে বাড়িঘর পোড়ানোর জন্য সহযোগিতা করেছে, লুটপাট করার জন্য সহযোগিতা করেছে, অস্ত্র নিয়ে-ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের একটি তালিকা। আরেকটি হচ্ছে, যারা রাজাকার হিসেবে নাম দিয়ে রেখেছে জীবন বাঁচানোর জন্য। তখন হয়তো কিছু বলার ছিল না। এগুলো নিয়ে এখন খুবই বিভ্রান্তি-দ্বিমত হচ্ছে। কাজেই এটা একটি জটিল ব্যাপার। তারপরও শাজাহান খানের নেতৃত্বে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওনারা কাজ করছেন। ওই কমিটি আমাদের কাছে তালিকা পাঠালে আমরা সেটি প্রকাশ করব।
'মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, রমজান মাসের পরেই শিডিউল ঘোষণা করা হবে এবং মে মাসের মধ্যেই নির্বাচন হয়ে যাবে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।'