জরিপের তথ্য
ঢাকার নীরব এলাকায় শব্দের মাত্রা আড়াই গুণের বেশি
প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বহুল আলোচিত রাজধানী ঢাকার শব্দদূষণ বর্তমানে এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, নীরব এলাকার শব্দের মাত্রাও মানমাত্রার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) সাম্প্রতিক এক জরিপে শব্দদূষণের এ তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার রাজধানী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিজার পক্ষ থেকে শব্দদূষণের নানা চিত্র তুলে ধরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে পরিজার সভাপতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, 'আমরা এ বছরের জানুয়ারি-ফেব্রম্নয়ারি মাসে ঢাকার ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করি। স্থানগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- মানিক মিয়া এভিনিউ, আসাদ গেট, বাংলামটর, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, আজিমপুর, কলাবাগান, ধানমন্ডি, পান্থপথ, রাসেল স্কয়ার, ধানমন্ডি ২৭, কলেজ গেট, শ্যামলী, আগারগাঁও, পলাশী, লালবাগ সেকশন, নাজিরাবাজার, সচিবালয় এলাকা। জরিপ করা স্থানগুলো নীরব, আবাসিক, মিশ্র ও বাণিজ্যিক এলাকা। প্রতিটি এলাকায় দিন-রাতের শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাসের ভেতরে শব্দের মাত্রাও পরিমাপ করা হয়।'
তিনি বলেন, 'নীরব এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা ৮৪.৫ থেকে ১০১.৭ ডেসিবল, রাতে ৯৬.৪ থেকে ১০১.৫ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিনে ৮২.০ থেকে ৯১.০ ডেসিবল, রাতে ৮৩.০ থেকে ৯১.৬ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিনে ৯১.০ থেকে ১০১.৫ ডেসিবল, রাতে ৮৯.০ থেকে ১০৩.৮ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা ৯২.০ থেকে ৯৭.০ ডেসিবল, রাতে ৯১.০ থেকে ৯৯.০ ডেসিবল। বাসের ভেতরে ৮০.৪ থেকে ৮৩.৯ ডেসিবল। বাংলামটরে শব্দের মাত্রা ১০৩.৮ ডেসিবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৮৬.০ থেকে ৯৪.০ ডেসিবল। সচিবালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৯৬.০ থেকে ১০১.৭ ডেসিবল।'
তিনি আরও বলেন, 'নীরব এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি এবং রাতে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে আড়াই গুণের বেশি। আবাসিক এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণের বেশি। আবাসিক এলাকায় রাতে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি। মিশ্র এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণের বেশি। মিশ্র এলাকায় রাতে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি। বাণিজ্যিক এলাকায় দিন ও রাতে শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশি। নীরব এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি সচিবালয় এলাকায়, যা ১০১.৭ ডেসিবল; রাতে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ধানমন্ডি ল্যাবএইডে, যা ১০১.৫ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি বাংলামটরে, যা ১০৩.৮ ডেসিবল; রাতে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি লালবাগ সেকশন, যা ১০১.৫ ডেসিবল।'
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'শব্দদূষণের কারণে মানুষ কেবল শ্রবণশক্তি হারায় না, নানা ধরনের জটিল রোগেও মানুষ আক্রান্ত হয়। আমাদের সবার সচেতনতা জরুরি। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অতিদ্রম্নত সরকারকে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।'
সংবাদ সম্মেলনে শব্দদূষণ কমাতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা; জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো; উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন ব্যবহার থেকে বিরত থাকা; উচ্চশব্দের হর্ন আমদানি বন্ধ করা; নীরব এলাকায় হর্ন না বাজানো ও অন্যান্য এলাকায় অপ্রয়োজনে হর্ন না বাজানোর জন্য মোটরযান চালকদের উদ্বুদ্ধ করা; যানবাহন নিয়মিত মেরামত করা এবং লাউড স্পিকারের ব্যবহারে সচেতন হওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে আরও ছিলেন- নগর গবেষক মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিজার সহসভাপতি ক্যামেলিয়া চেম্বরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হাসান প্রমুখ।