রাজধানী ঢাকার বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুতে (বাবুবাজার সেতু) উল্টোপথেই চলাচল করছে যানবাহন। রিকশা-ভ্যান থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহনের চাপে সড়ক সংকুচিত হয়ে পথচারী চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা এবং পুলিশের সহযোগিতায় সেতুতে উল্টোপথে যান চলাচলই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, সেতুর সংস্কার কাজ চলায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।
সোমবার বিকালে বাবুবাজার সেতুর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উল্টোপথে যানবাহন চলাচলের বহর। সেখানে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতিতেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্বল্পগতির বাহন অটোরিকশা-রিকশা ও ভ্যান। এছাড়া মোটর সাইকেল, সিএনজি, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের গাড়িও নিয়ম ভঙ্গ করে উল্টোপথে চলছে। দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, পোস্তগোলা সেতু বা রাজধানীর দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু সংস্কার চলায় এ রাস্তায় উল্টোপথে যানবাহন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।
মোটর সাইকেল চালকরা জানান, এখানে ট্রাফিক পুলিশ উপস্থিতিতেই উল্টোপথে চলাচল করা যায়, তাই নিশ্চিন্তে এ রুটে উল্টোপথে আসা যায়। যানজটের কবল থেকে রক্ষা পেতে উল্টোপথে গাড়ি চালান বলে তারা জানান। আর উল্টোপথে গাড়ি চলাচলের কারণে এ সড়কে প্রায়ই দীর্ঘ যানজটের স?ৃষ্টি হচ্ছে।
বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত মোটর সাইকেল আরোহী খন্দকার আজিজুল হক বলেন, 'অফিসে যাওয়ার তাড়া আছে। সরকারি অফিসের এক কর্মকর্তাকে উল্টোপথে আসতে দেখে আমিও তার পেছনে পেছনে চলে আসি। কেননা তার পেছনে পেছনে আসলে পুলিশ বিরক্ত করবে না। আর এখানে তো পুলিশই উল্টোপথে যেতে সহযোগিতা করেছেন।'
এদিকে বাবুবাজার-নয়াবাজার-কেরানীগঞ্জের সড়কে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যাপক সক্রিয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলে জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, 'উল্টোপথে গাড়ি চলাচল রোধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। তবে মাঝে মধ্যে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়ি আটকালে আমাদের হেনস্তা হতে হয়।'
অন্যদিকে, বুড়িগঙ্গা পোস্তগোলা সেতুতে সংস্কারকাজ চলমান থাকায় সোমবার সকাল থেকে সেতুতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় (বাবুবাজার) সেতুর উত্তর প্রান্ত রাজধানীর নয়াবাজার এলাকায় এবং দক্ষিণ প্রান্ত কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকার ঢাকা-মাওয়া সড়কে লিঙ্ক রুট থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
কেরানীগঞ্জের কদমতলী, চুনকুটিয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কের সিএনজিচালিত অটোরিকশার জটলা। এগুলো সড়কের ওপর রাখা। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নয়াবাজার এলাকায়ও যানজটের কারণে যানবাহন থেমে থেমে চলাচল করছে যানবাহন।
বিআরটিসি বাসের চালক আব্দুল মান্নান জানান, তারা সব সময় পোস্তগোলা সেতু দিয়ে চলাচল করেন। সেতুতে সংস্কার কাজের জন্য এখন ওই পথে চলাচল করতে পারছেন না। তাই কেরানীগঞ্জের কদমতলী হয়ে বাবুবাজার সেতু দিয়ে রাজধানী যাচ্ছেন। কদমতলী এলাকায় সড়কে অটোরিকশা দাঁড় করানো থাকে। এছাড়া উল্টোপথে চলাচলরত অটোরিকশা-ভ্যানের জন্য যানজটে পড়তে হচ্ছে।
মাওয়া থেকে আসা বসুমতী পরিবহণের যাত্রী সুলতান আহমেদ বলেন, 'কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকায় যানজটে পড়তে হয়েছে। বাবুবাজার সেতু পার হতে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। তাঁতীবাজার পৌঁছাতে না পেরে বিরক্ত হয়ে বাস থেকে নেমে পড়েছি।'
কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকার দায়িত্বরত ঢাকা জেলা দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক মোহাম্মদ শামীম বলেন, 'পোস্তগোলা সেতু বন্ধ থাকার কারণে এই এলাকায় যানবাহনে চাপ বেশি। অসুস্থ রোগী, অ্যাম্বুলেন্স বা জরুরি যানবাহন হাসপাতালে পৌঁছে উল্টোপথে যেতে দিচ্ছি। তবে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।'
ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের (দক্ষিণ) পরিদর্শক জাকির হোসেন বলেন, 'ট্রাফিক পুলিশ সকাল থেকে যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। ৮ মার্চ পর্যন্ত পোস্তগোলা সেতুর সংস্কার কাজ চলবে। তাই বাবুবাজার সেতুর দুই পাশেই বাড়তি ট্রাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সব ধরনের রিকশা-ভ্যান এ পথে আপাতত চলাচল নিষেধ।'