আসন্ন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু। আগামীতে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট নগরী উপহার দিতে ২৩ প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে ভোটের মাধ্যমে আবারও মেয়র নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন টিটু। তিনি প্রতিশ্রম্নতিতে নগরীর যানজট নিরসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এ ব্যাপারে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেছেন। এছাড়া অসমাপ্ত বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রম্নত শেষ করা, হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি ও সিটি করপোরেশন করকে আরও সহনীয় করার আশ্বাস দিয়েছেন। সেইসঙ্গে সিটি করপোরেশনের বিদ্যমান পাঁচটি অনলাইন সেবাস ছাড়াও অন্যান্য সেবাসমূহ ডিজিটালাইজেশন ও ৩৩টি ওয়ার্ডে স্মার্ট কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন।
মেয়র প্রার্থী টিটুর ২৩ দফা ইশতেহারে রয়েছে- নগরীর প্রধান সমস্যা যানজট নিরসনে সিটির আওতাভুক্ত সড়কসমূহ প্রশস্তকরণ দাখিলকৃত ও প্রধান সড়কের মোড়সমূহ প্রশস্তকরণে প্রকল্পসমূহ অনুমোদনের মাধ্যমে বিদ্যমান যানজট নিরসন ও বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে ওভারপাস বা ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ। যানজট নিরসনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা প্রশস্তকরণ, রেলপথ বিভাগের ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ ট্রাফিক বিভাগের জনবল বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ প্রদান ও আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনে সকল বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ। নগরীর প্রবেশদ্বারে তিনটি বাস টার্মিনাল ও একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের দাখিলকৃত প্রকল্প দ্রম্নত অনুমোনের মাধ্যমে নগরীর যানজট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ। নগরবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে চলমান রাস্তাসমূহ পাকাকরণ প্রকল্প দ্রম্নত সম্পন্নকরণ ও নতুন পুরাতন সকল ওয়ার্ডের সমস্ত রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্ট দ্রম্নত নির্মাণ। নগরীর খালসমূহ দখলমুক্তকরণের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা নিরসনের চলমান ড্রেনেজ নির্মাণ প্রকল্পসমূহ দ্রম্নত সম্পন্নকরণের উদ্যোগ গ্রহণ।
এছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি ও ট্রেড লাইসেন্স ফি যুক্তিসঙ্গত ও সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং সিটি করকে আরও সহনীয় করতে নাগরিকবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত নগরী গড়ার লক্ষ্যে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্মাণাধীন পস্ন্যান্ট দ্রম্নত বাস্তবায়ন ও অন্যন্য কার্যক্রমসমূহ আরও জোরদার করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। পাশাপাশি নগরীর সর্বত্র দূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ। বর্জ্য থেকে বিদু্যৎ উৎপাদনে প্রক্রিয়াধীন প্রস্তাবিত দ্রম্নত অনুমোনের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বর্জ্যমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ। বিভিন্ন অপতৎপরতা রোধ করে আলোকিত নগরায়ণের লক্ষ্যে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে চলমান 'সড়ক বাতি' স্থাপন প্রকল্প দ্রম্নত সম্পন্নকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় প্রদত্ত বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসমূহ সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা ও অন্যান্য নাগরিক সেবাসমূহ জনগণের নিকট সহজলভ্য করার ব্যবস্থা করা।
নাগরিক সেবা আরও সহজলভ্য করতে প্রস্তাবিত আধুনিক 'নগর ভবন' প্রকল্প দ্রম্নত বাস্তবায়ন ও নাগরিক সেবাসমূহ ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ গ্রহণ। নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে নানাবিধ যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে ও সবুজ নগরায়নের লক্ষ্যে রাস্তার দুই পাশে ও খোলা জায়গা পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ ও জলধার নির্মাণ ও সংরক্ষণের উদোগ গ্রহণ। নগরবাসীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে চলমান চারটি নাগরিক সেবাকেন্দ্রের পরিধি বৃদ্ধি ও দুটি নির্মাণাধীন হাসপাতাল দ্রম্নত সম্পন্নকরণের উদ্যোগ গ্রহণ।
কর্মসংস্থান নিয়ে টিটু উলেস্নখ করেন, নগরবাসীর বেকারত্ব রোধে নারী-তরুণরে নানাবিধ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। বেকারত্ব রোধে ময়মনসিংহ নগরীকে শিল্পনগরী ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ। বর্ধিত নতুন এলাকাসমূহে নগর বিন্যাসের পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে আগামী নগরীকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলা। নগরীর প্রত্যেক এলাকায় সহজাত তারুণ্যের বিকাশে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্লাব গঠন ও পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরিকরণে সহযোগিতা প্রদান। বিভাগীয় সাংস্কৃতিক পলস্নী নির্মাণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ।
ইশতেহারে আরও উলেস্নখ করা হয়- শিশুরে শারীরিক বিকাশের জন্য প্রস্তাবিত 'শেখ রাসেল শিশু পার্ক' প্রকল্প দ্রম্নত বাস্তবায়ন ও 'বিপিন পার্ক' আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ। সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কবরস্থান, শ্মশানঘাটসমূহ আরও সুবিধা সংবলিত উন্নতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। মাদকসেবন ও অপরাধমূলক কর্মকান্ড হতে বিরত রাখতে যুবসমাজের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা প্রদান। সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যমান পাঁচটি অনলাইন সেবাসমূহ ছাড়াও অন্যান্য সেবাসমূহ ডিজিটালাইজেশন এর মাধ্যমে সম্মানিত নাগরিকবৃন্দে হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়া এবং তেতত্রিশটি ওয়ার্ডে স্মার্ট কর্নার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ। বিভিন্ন অ্যাপস্ের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সম্মানিত নাগরিকদের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছে ইশতেহারে।
ইকরামুল হক টিটু বলেন, মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই প্রায় দুই বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধাবস্থার মধ্যে দিয়ে নগরের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে। তারপরও মাননীয় শেখ হাসিনার বেদৌলতে ময়মনসিংহ নগরীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা চলমান রেখেছি। আমি পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলমান প্রকল্পগুলো দ্রম্নত বাস্তবায়ন, বিভিন্ন দপ্তরে দাখিলকৃত প্রকল্প অনুমোদন ও দ্রম্নত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনকে একটি আধুনিক, স্মার্ট ও মডেল সিটি করপোরেশননে রূপান্তর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
শেষ মুহূর্তে প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা: রোববার টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু নগরীর ফকিরাকান্দ, মাসকান্দা, রেলওয়ে স্টেশন, নতুনবাজার, গণশার মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। হাতী প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু নগরীর বলাশপুর, ভাটিকাশর, কালীবাড়ি ও পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। ঘোড়া প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এহতেশামুল আলম নগরীর কাশর, বাঁশবাড়ি কলোনি, আকুয়া চৌরঙ্গীর মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। হরিণ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কৃষিবিদ ড. রেজাউল করিম নগরীর আঠারবাড়ি বিল্ডিং, বাসাবাড়ি হকার্স মার্কেট এলাকা, বলাশপুর, শিকারিকান্দা এলাকায় গণসংযোগ করেন। জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী শহিদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল নগরীর গন্দ্রপা, বটতলা, কেওয়াটখালী বাজার, ওয়াবদার মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন।