রাখাইন সংঘাত
টেকনাফ সীমান্তে রাতভর গোলার শব্দে আতঙ্ক
প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘাতের কারণে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তে নাফ নদীর ওপারে দেশটির মংডু শহরে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। মর্টারশেল ও গুলির শব্দে এপারের মানুষের মধ্যে অজানা আতঙ্ক ভর করেছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল।
শহরটির উত্তর ও দক্ষিণের কয়েকটি গ্রামে সংঘাত চলছে। এ কারণে নাফ নদীর এপারে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ পৌর শহর, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নে গুলি ও মর্টারশেলের শব্দ শোনা গেছে।
এদিকে, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলছে। এতে টেকনাফের হোয়াইক্যং উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, হ্নীলা মৌলভিপাড়া, ওয়াব্রাং, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া এলাকায় সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গুলি ও মর্টারশেলের শব্দ পাওয়া গেছে। হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের পূর্ব দিকে মিয়ানমারের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরা গ্রামে গৃহযুদ্ধ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা টহল বৃদ্ধি করেছেন।
রাতে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে উলেস্নখ করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, 'রাতে সীমান্তের ওপার মিয়ানমার থেকে থেমে থেমে ভারী মর্টারশেলের শব্দ শুনতে পাই। এসব গোলার শব্দ এখন নিয়মিত ঘটনার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ চলমান রয়েছে।'
হ্নীলা সীমান্তের বসবাসকারী মো. ইলিয়াস বলেন, 'রাতভর থেমে থেমে মিয়ানমারের ভারী গোলার শব্দ আমার বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে। মাঝে মধ্যে ভারী শব্দের ভয়ে ঘুম ভেঙে যায়।'
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, 'সীমান্তে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।'
এদিকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলার শব্দ পাওয়া না গেলেও এখনও দ্বীপের জেটিতে মানুষ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার দোকানি মো. নাছির। তিনি বলেন, 'কয়েক দিন ধরে এই সীমান্তে কোনো গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নাফ নদে কোস্টগার্ড এবং সীমান্তে বিজিবি টহল রয়েছে। কিন্তু জেটি বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসায় ব্যাপক লোকসান হচ্ছে।'
এখনো মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। ইতোমধ্যে অনুপ্রবেশকালে প্রায় চারশ' রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে সীমান্তে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তাহসিন রহমান বলেন, 'ওপারের চলমান যুদ্ধের পরিস্থিতিতে নাফ নদ দিয়ে সীমান্তে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা থেকে আমরা (কোস্টগার্ড) টহল জোরদার রেখেছি। নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে আমরা দুই শতাধিকের মতো অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করেছি।'
টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদের কাছাকাছি বসবাসকারী মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, 'রাতে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বশিপাড়া (বকশিপাড়া) থেকে গোলার বিকট শব্দ এসেছে। অনেক সময় ভারী গোলার শব্দে মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে।'