রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে 'পারিবারিক ক্রম ও দলীয়করণের বিরুদ্ধে' অবস্থানের কথা জানিয়ে 'গণতন্ত্র সংস্কারে' নতুন দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির প্রাক্তন মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে 'ডেমোক্রেটিক রিফর্মস পার্টি' (ডিআরপি) বা 'গণতান্ত্রিক সংস্কার পার্টি' গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।
শাহেদা ওবায়েদ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের মা এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান। নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে থাকছেন তিনি।
শাহেদা ওবায়েদ বলেন, 'আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের যাত্রা শুরু করেছি। আমাদের এটি প্রথম পদক্ষেপ। এই দলটির নাম হচ্ছে 'ডেমোক্রেটিক রিফর্মস পার্টি'-ডিআরপি। বাংলায় হচ্ছে 'গণতান্ত্রিক সংস্কার পার্টি'।'
দল গঠনের উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, '৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে আপনারা সবাই জানেন দেশে দলীয়করণ, তারপরে পরিবারকরণ, বর্তমানে আমিকরণ- এসব 'করণ' থেকে আমরা দেশকে মুক্ত দেখতে চাই। আমরা যোগ্য মেধাবী দক্ষ দেশ প্রেমিক মানুষের মূল্যায়ন চাই। আজকে সেই
উদ্দেশেই আমাদের পা রাখা।
দল গঠন করলেও নির্বাচন না করার কথা জানিয়ে শাহেদা ওবায়েদ বলেন, 'নির্বাচন হবে আরও পাঁচ বছর পরে। এখন আমার শরীর খুব ভালো নেই, ভালো থাকি না। তারপরেও একটা চেষ্টা যদি একটা শুরু করে দেওয়া যায়।
তিনি বলেন, 'আমি নির্বাচন করব না। কিন্তু তারপরও আমি চাই, একটা শুরু হোক। আমি মনে করি, ভালো একটা শুরু হলে, ভালো কিছু লোক নিয়ে শুরু করতে পারলে নিশ্চয়ই আমরা এগিয়ে যেতে পারব।'
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে দল গঠনের উদ্দেশ্য এবং ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নতুন দলের মহা সমন্বয়ক অবসরপ্রাপ্ত মেজর আমীন আহমেদ আফসারী।
তিনি বলেন, 'আমরা গঠনতন্ত্র তৈরি করব এক মাসে। আগামী দিনগুলোতে দেশে গণতন্ত্র সংস্কার এবং পুনর্গঠনে মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চাই। ঐক্যবদ্ধ, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক দল আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অত্যন্ত প্রয়োজন ও সময়ের দাবি।
'আমরা টিম লিডারশিপে বিশ্বাসী। উনার (শাহেদা ওবায়েদ) মতো আরও মোট ৯ জন সভাপতি থাকবেন এবং একজন কর্মীসহ মোট ১১ জনের সমন্বয়ে কমিটি হবে। আলোচনার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।'
শাহেদা ওবায়েদ 'গড়ব বাংলাদেশ' নামে একটি সংগঠনের আহ্বায়ক ছিলেন দীর্ঘদিন। ২০১৯ সালের দিকে এ সংগঠনের ব্যানারে তিনি বিএনপি এবং দলটির নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করে আলোচনায় আসেন।
ওই সময় শাহেদা ওবায়েদ বলেছিলেন, 'বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি মা ও ছেলের রাজনৈতিক সমিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
শাহেদা ওবায়েদের স্বামী ওবায়দুর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে বিএনপির মহাসচিব হলে পরে বহিষ্কৃতও হন। স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে জনতা দল গঠন করে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও হেরে যান। পরে ফের বিএনপিতে যোগ দিয়ে ১৯৯৬ সালে দলটির এমপি হন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হন তার স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ। তিতুমীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষও হন।
স্বামী ও মেয়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বিভিন্ন সময় দলটির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কথা বলে আলোচনায় আসেন শাহেদা ওবায়েদ।
দলে কারা থাকছেন, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, 'অতীতের বিতর্কিত কেউ থাকছে না, আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতেও চাই না। আমরা নতুনদের নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের সঙ্গে যারা আছে বা থাকবে, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখবেন, কোনো বিতর্কিত লোক নেই।'
সংবাদ সম্মেলনে রাজিয়া চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম, আফাজুল হক, কমরেড সাব্বির, জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।