বিশ্বব্যাপী ১শ' কোটিরও বেশি মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নেরও বেশি অর্থাৎ ১শ' কোটিরও বেশি মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত। এমন তথ্যই উঠে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) এক গবেষণায়। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। মূলত আবহাওয়া ও জীবনযাপনে পরিবর্তনের কারণে দিন দিন বাড়ছে স্থূলতা। আগে মধ্যবয়সিদের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার এই লক্ষণ প্রকাশ পেলেও বর্তমান সময়ে শিশুদের মধ্যেও এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ এখন স্থূল বলে বিবেচিত হচ্ছে। মূলত স্থূলতা এমন একটি অবস্থা যা অনেকগুলো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার বর্ধিত ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দলের গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। রয়টার্স বলছে, স্থূলতা এতই প্রচলিত যে এটি বেশিরভাগ দেশে কম ওজনের তুলনায় বেশি সাধারণ হয়ে উঠেছে, যার মধ্যে অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশও রয়েছে যারা আগে অপুষ্টির মোকাবিলায় কার্যত সংগ্রাম করত। বৃহস্পতিবার বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়। গবেষণাপত্রের সিনিয়র লেখক এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক মজিদ ইজ্জাতি বলেন, 'বহুসংখ্যক মানুষ স্থূলতার সঙ্গে বসবাস করছে।' বিশ্বজুড়ে ১৯০টিরও বেশি দেশে ২২০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হয়েছে। মজিদ ইজ্জাতি বলছেন, যদিও অনেক ধনী দেশে স্থূলতার হার হয় কিছুটা কমেছে বা স্থির রয়েছে, তারপরও বিশ্বের অন্যত্র স্থূলতা দ্রম্নত বাড়ছে। এছাড়া কম ওজনের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী কমতে থাকলেও অনেক দেশেই স্থূলতা এখনো একটি তাৎপর্যপূর্ণ সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে। ডবিস্নউএইচওর পুষ্টি প্রধান ফ্রান্সেস্কো ব্রাঙ্কা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'অতীতে, আমরা স্থূলতাকে কেবল ধনীদের সমস্যা হিসেবে ভাবতাম। মূলত স্থূলতা পুরো বিশ্বের জন্যই সমস্যা।' গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতার হার দ্বিগুণেরও বেশি এবং ৫-১৯ বছর বয়সি শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই হার চারগুণেরও বেশি। একই সময়ের মধ্যে কম ওজন হিসেবে বিবেচনা করা মেয়ে, ছেলে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অনুপাত যথাক্রমে এক-পঞ্চমাংশ, এক-তৃতীয়াংশ এবং অর্ধেক কমে গেছে। ইজ্জাতি শিশুদের মধ্যে স্থূলত্বের হার বৃদ্ধিকে 'খুবই উদ্বেগজনক' বলে অভিহিত করেছেন। একই সময়ে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের এখনো পর্যাপ্ত খাবার নেই। রয়টার্স বলছে, গুরুতরভাবে কম ওজন শিশুদের বিকাশের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে এবং এর চরম পর্যায়ে এই অবস্থার কারণে মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে। এছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও কিডনি রোগের প্রাথমিক সূত্রপাত এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে স্থূল ব্যক্তিরাও অকাল মৃতু্য এবং অক্ষমতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। ডবিস্নউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, স্থূলতার হার মোকাবিলায় উচ্চ চিনি রয়েছে এমন পণ্যের ওপর কর আরোপ এবং স্কুলে স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়ার মতো ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, 'গুরুত্বপূর্ণভাবে, এটির জন্য বেসরকারি খাতের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ তাদের পণ্যের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর যে প্রভাব পড়ে সেটার জন্য তাদের দায়বদ্ধ হতে হবে।'