ময়মনসিংহ সিটি ভোট :প্রচারণায় এগিয়ে টিটু, টজু ও আলম
প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ময়মনসিংহ বু্যরো
দ্বিতীয়বারের মতো আগামী ৯ মার্চ ভোট হবে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রচারণার গতি বাড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু (দেওয়াল ঘড়ি), শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু (হাতি) এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া)। এই তিনজনের চেয়ে প্রচারণায় অনেকটা পিছিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ডক্টর রেজাউল হক রেজা (হরিণ) এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল (লাঙ্গল)। প্রচারণায় পিছিয়ে থাকা প্রার্থীরা বলছেন, অর্থবিত্ত কিছুটা কম থাকায় সীমিত পরিসরে আচারণবিধি মেনে প্রচারণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর ভোটাররা বলছেন, প্রচারণায় তিনজন এগিয়ে থাকলেও লড়াই হবে দুইজনের মধ্যে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে প্রচারণায় সরগরম ভোটের মাঠ। সেই সঙ্গে চলছে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের কথার লড়াই। প্রতিটি পাড়া-মহলস্নায় ঝুলছে প্রার্থীদের পোস্টার। প্রচারপত্র বিলির পাশাপাশি মাইকিংয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে চাওয়া হচ্ছে ভোট। সব মিলিয়ে ময়মনসিংহ এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। যে যত প্রচারণা করছেন তার পক্ষেই বাড়ছে ভোটারদের সমর্থন। ভোটাররা বলছেন, প্রচারণার ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে জয়ের পথে কে হাঁটছেন।
নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ী কলোনির ভোটার আবুল হাশেম বলেন, বাঁশবাড়ীতে এলেই বোঝা যায় কতোটা উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের নির্বাচন হচ্ছে। মেয়র কাউন্সিলর প্রার্থীরা পাশাপাশি তাদের প্রচার কেন্দ্র করেছে। সেসব কেন্দ্রগুলো পোস্টারে পোস্টারে সাজানো হয়েছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে চা আপ্যায়ন। বিকেল থেকে সাউন্ড সিস্টেমে চলে
প্রার্থীদের নিয়ে তৈরি করা গান-গজল। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রচারে এগিয়ে টিটু। তারপর টজুকে ধরা যেতে পারে। তবে ভোটের দুই একদিন আগে বলা যাবে হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ১
কে জয়ী হচ্ছেন।
১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার রুকন উদ্দিন বলেন, প্রচারণার শুরু থেকে টিটু এগিয়ে থাকলেও টজুকে এমপি শান্তর লোকজন সমর্থন করায় এখন তিনি এগোচ্ছেন। আর কয়েকদিন গেলেই বোঝা যাবে কার অবস্থান কতটা শক্তিশালী। তবে এবার ভোটে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শুক্রবার ছুটির দিন দুপুরে প্রচারণায় বের হন সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তিনি নগরীর ট্রাংক পট্টি, পন্ডিতপাড়া প্রচারণা করেন। এ সময় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, ৩৩টি ওয়ার্ডে আমার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। প্রতিদিন একটি করে ওয়ার্ডে যাচ্ছি। ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। চেষ্টা করছি প্রচারণায় থাকার জন্য। চলমান উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে মানুষ আমাকেই বেছে নেবে।
চরপাড়া এলাকায় প্রচারণা শেষে হাতি প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু বলেন, এমপি শান্ত অনুসারীদের সমর্থন আমার পক্ষে থাকায় প্রচার-প্রচারণার গতি আগের চেয়ে বেড়েছে। পরিবর্তনের লক্ষ্যে সাধারণ ভোটাররা মুখিয়ে আছে ভোট দেওয়ার জন্য। নেতাকর্মী ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এহতেশামুল আলমকে বসিয়ে আমার পক্ষে নির্বাচন করার জন্য চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তিনি না বসার পরও আমার পক্ষে নেতাকর্মীদের অবস্থান থাকায় আশা করছি জয় নিয়ে ফিরব।'
টাউন হল এলাকায় ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রচারণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ এহতেশামুল আলম। এ সময় তিনি বলেন, 'আমার ভোটারদের মনোবল নষ্ট করার জন্য মাঠে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। একটি পক্ষ বলছে আমি টজুকে সমর্থন দিয়ে বসে পড়েছি। আমি বলতে চাই আগামী ৯ তারিখ পর্যন্ত মাঠে আছি থাকব। ঘোড়ার পক্ষে জোয়ার উঠেছে। অপরিকল্পিত নগরীতে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে মানুষ আমাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।'
মৃতু্যঞ্জয় স্কুল রোডে প্রচারপত্র বিলি শেষে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল বলেন, 'প্রচারণা করে সাড়া জাগাতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। অন্য প্রার্থীদের মতো আমার এতো অর্থ-সম্পদ নেই। তাই প্রচারণা কিছুটা কম করছি। তবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তার লাঙ্গলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। সেই ভালোবাসায় মানুষ যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে জয় সুনিশ্চিত।'
হরিণ প্রতীকের প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হক রেজা প্রচারপত্রবিলি করেন আকুয়া এলাকায়। এ সময় তিনি বলেন, 'পরিবর্তনের মাধ্যমে নগরী থেকে সন্ত্রাস চাঁদাবাজ মুক্ত করতে চায় সাধারণ ভোটাররা। আমার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের মনের ভাব বোঝা। প্রচারণা তুলনামূলক কম করলেও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারছি তারা একটি পরিচ্ছন্ন নগর চায়, স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চিয়তা চায়, হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর দাবি তাদের। তাই তারা যদি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তাহলে নগরপিতা নয় সেবক হয়ে কাজ করব।'
এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩২ পুরুষ, ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৫ নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯ জন। তারা আগামী ৯ মার্চ ইভিএমে ১২৮ কেন্দ্রে ভোট দেবেন। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ আলম বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় কাউন্সিলর পদে ৩২ ওয়ার্ডে শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।