বইমেলার পর্দা নামছে আজ
৩০তম দিনে এসেছে ২১৯টি নতুন বই
প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বীরেন মুখার্জী
দুই দিন বাড়তি সময় যোগ হওয়ায় ৩১ দিনের পাঠক-লেখক-প্রকাশকের মিলনমেলা সাঙ্গ হচ্ছে আজ। আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা নামছে অমর একুশে বইমেলার। প্রকাশকদের অনুরোধে সময় বাড়ানোয় এবার মেলা গড়িয়েছে ২ মার্চ শনিবার পর্যন্ত। বৈশ্বিক করোনা মহামারি, যানজট এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গত কয়েক বছর ধরে বইমেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের যে ভাটা পড়েছিল এবার মেট্রোরেলের কল্যাণে সেটি লাঘব হয়েছে। এ বছর শুরু থেকেই বইপ্রেমীদের জমজমাট উপস্থিতিতে সরগরম ছিল বইমেলার প্রতিটি দিন।
মেলার বাড়তি দিনের প্রথম দিন শুক্রবার বেলা ১১টায় খুলে দেওয়া হয় বইমেলার দুয়ার। এদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকালে বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশুরা মেলায় আসে। তারা সিসিমপুর মঞ্চে মেতে ওঠে জনপ্রিয় চরিত্র হালুম সিকু টুকটুকির সঙ্গে। এরপর অনেকেই ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই কিনেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মজীবী মানুষ বিভিন্ন স্টলে ঘুরে পছন্দের বই কিনছেন। তবে এবারের বইমেলায় মোট কতটি বই প্রকাশিত হলো এর মধ্যে ফিকশন কতটি, ফিকশনের মধ্যে কতটি কবিতা, কতটি গল্প আর কতটি উপন্যাস; নন-ফিকশনই বা কতটি- সব হিসাব শিগগিরই পাওয়া যাবে। মোট কত কোটি টাকার বই বিক্রি হলো তা-ও জানাবে বাংলা একাডেমি। আজ না জানালেও জানাবে শিগগিরই। গতবারের চেয়ে এবার বইয়ের বিক্রি বেশি হবে, এটুকু অন্তত আশা করা যায়।
প্রকাশকরা বলছেন, এবারের বইমেলার জন্য বড় আশীর্বাদ হয়ে এসেছে মেট্রোরেল। যার কারণে অন্য বছরের তুলনায় এবার মেলায় বেড়েছে মানুষের সমাগম। কারণ মেট্রোরেলের কল্যাণে রাজধানীর উত্তরাসহ নানান জায়গায় থেকে মেলায় মানুষ এসেছেন। সেটা অন্য সময় যানজটের ভয়ের কারণে মানুষ মেলায় আসতো না সাধারণত। যার ফলে, এবার মেলায় বিক্রি বেড়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ।
এবারের বইমেলায় সন্তুষ্ট কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, 'এ বছর বইয়ের বেচাকেনা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। কারণ, গত কয়েক বছর ধরেই অর্থাৎ করোনার পর থেকে বইমেলা ওইভাবে জমে ওঠেনি। সেই বিবেচনায় এ বছর শুরু থেকেই বইমেলা জমজমাট। আর বইয়ের প্রতিও মানুষের আগ্রহ রয়েছে। যার কারণে শুরু থেকেই পাঠক ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন কেউ যদি বলে থাকেন যে, এই বছর বইমেলায় বিক্রি কম হয়েছে তাহলে
আমি বলব তাদের বিক্রি করার মতো বইয়ের অভাব রয়েছে।'
বইমেলার আয়োজন নিয়ে শব্দশৈলীর প্রকাশক ইফতেখার আমিন বলেন, 'আমি মনে করি, বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমির নয়। সারা পৃথিবীতে এসব আয়োজন করে থাকে প্রকাশক সমিতি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বইমেলার আয়োজন করে প্রকাশক গিল্ড। আমার কাছে মনে হয়, বইমেলার আয়োজন করতে গিয়ে বাংলা একাডেমি সচরাচর গবেষণা বা অন্যান্য কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া এবার কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব না দেওয়ার কারণে অনেক ব্যাপারেই প্রকাশকদের আপত্তি রয়েছে।'
এদিকে, শুক্রবার বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে জানানো হয়, বইমেলার ৩০তম দিনে নতুন বই এসেছে ২১৯টি। আজ অমর একুশে বইমেলার সমাপনী দিন। এদিন মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন 'অমর একুশে বইমেলা ২০২৪'-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।