তূর্ণা ও গোধূলিতে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক নতুন বগি

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ

প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সবচেয়ে দ্রম্নতগামী ট্রেন তূর্ণা নিশিথা ও মহানগর গোধূলি। এ দু'টি ট্রেনে যুক্ত হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত অত্যাধুনিক নতুন বগি। ফলে আগের পুরনো বগির চেয়ে অনেক বেশি আরাম ও স্বস্তিদায়ক ভ্রমণ মিলবে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত নতুন বগি চলে এসেছে। যেগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে দ্রম্নতগামী ট্রেন তূর্ণা নিশিথা ও মহানগর গোধূলিতে সংযুক্ত করা হবে। এই দুই ট্রেনে দেশের ভিআইপি শ্রেণির যাত্রীরা যাতায়াত করেন। এসব বগিও সাজানো হয়েছে লাল-সবুজের রঙে। তিনি আরও জানান, রেলকে আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ৬৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মিটারগেজ লাল-সবুজ রঙের ১৪৭টি বগি আমদানির চুক্তি হয়। চুক্তির শেষ লটের চালান গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর এসেছে। বন্দর থেকে খালাসের প্রক্রিয়া শেষে এসব নতুন বগি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী কারখানায় রাখা হয়েছে। আধুনিক এই বগিগুলো কোরিয়ান এবং বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে কমিশনিং এবং ট্রায়াল শেষে যুক্ত করা হবে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তথ্যমতে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত ১৪৭টি আধুনিক মিটারগেজ বগি ইতোপূর্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে যুক্ত হয়েছে। আরও অনেক নতুন কোচ পাহাড়তলী কারখানায় রয়েছে। যেগুলো তূর্ণা নিশিথা ও মহানগর গোধূলিতে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মেকানিক্যাল বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের ভাষ্য, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত বগিগুলো আগের পুরনো বগিগুলোর তুলনায় অনেক বেশি মানসম্মত। বগিগুলোর মধ্যে শীততপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) স্স্নিপিং বার্থ ৩০টি, এসি চেয়ার কোচ ৩৮টি, শোভন চেয়ার ৪৪টি, খাবার গাড়িরসহ শোভন চেয়ার ১৬টি, পাওয়ার কার (বিদু্যৎ সঞ্চালন বগি) শোভন চেয়ার কোচ ১২টি, একটি করে খাবার গাড়ি ও পরিদর্শন গাড়ির কোচ রয়েছে। বগিগুলোতে থাকছে বায়ো-টয়লেট। যা বিমানের টয়লেটের মতোই। ফলে রেললাইনে মল পড়বে না। পুরনো বগিগুলোতে যে ধরনের দুর্গন্ধ থাকে, নতুন বগিগুলোতে তা থাকবে না। প্রতিটি বগিতে জায়ান্ট স্টিন থাকবে। ট্রেন কোথায় থামবে, কখন থামবে, তা সেই স্টিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘোষণা হবে। বগিতে স্বয়ংক্রিয় স্স্নাইডিং ডোরসহ নানা ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এসব বগির চেয়ারও অনেক বেশি আরামদায়ক। তাছাড়া বগিগুলোর বডি থেকে সার্বিক অবকাঠামো আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি। এসব বগিতে প্রতিবন্ধীর জন্য থাকবে বিশেষ চেয়ারের ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান বাড়বে। এসব বগিতে ভ্রমণ হবে পুরনো বগির চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ ও আরামদায়ক। সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে যেসব বগি আছে সেগুলোর মেয়াদ ছিল ৩৫ বছর। তবে আমদানিকৃত নতুন বগিগুলোর মেয়াদ হবে আরও ১০ বছর বেশি। রেল চলার পথে এসব বগিতে ঝাঁকুনিও কম হবে। কমে যাবে আওয়াজ। বলতে গেলে পুরনো বগির চেয়ে আমদানি করা বগি অত্যাধুনিক। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জোবেদা আকতার বলেন, কয়েক দশক ধরে ইঞ্জিন ও বগির সংকটে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সংকটের কারণে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল ২ জোড়া যাত্রীবাহী লোকাল ট্রেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ওই অঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী। অন্যদিকে পুরনো বগিগুলো ছিল প্রায় জরাজীর্ণ। ফলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন যাত্রীরা। তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন ১১৮টি ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে। তার বিপরীতে অর্ধেকেরও কম রানিং থাকে। এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেনের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৪৭টি নতুন মিটারগেজ কোচ আমদানি করা হয়েছে। এতে বগির সংকট কিছুটা কমলেও ইঞ্জিনের সংকট থেকে যাচ্ছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস সাহা বলেন, সংকট কাটাতে ২০২০ সালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বহরে যুক্ত হয় দেড়শ'টি মিটারগেজ বগি। ২০২১ সালে এসেছে নতুন ৩০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন। বর্তমানে দোহাজারী রুটে একটি ডেমু ট্রেন ও বিদু্যৎ কেন্দ্রে তেলবাহী গাড়ি চলাচল করছে। আবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন দিনে দু'বার চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিন সংকটের কারণে রেলওয়ের সেই উদ্যোগ থেমে গেছে। এখন কবে চালু হবে তাও চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না। নতুন কোনো ইঞ্জিন আমদানি না করা পর্যন্ত এই সংকট কেটে ওঠা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।