প্রাণের বইমেলা
এক-তৃতীয়াংশ বই কবিতার
২৮তম দিনে এসেছে ৮০টি নতুন বই
প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বীরেন মুখার্জী
বাঙালি জাতির মননের প্রতীক বাংলা একাডেমির আয়োজনে চলছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। এ বছর ৩১ দিনে গড়াচ্ছে এই মেলা। এর আগে ২০২২ সালেও একই সময়ে গড়িয়েছিল মেলাটি। এদিকে মেলার সময় বাড়ানোয় প্রকাশকের পাশাপাশি বইপ্রেমীরাও খুশি। যারা দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝে পছন্দের কিংবা আগে থেকে তালিকা করা বইটি কেনার সুযোগ পাননি, মেলার সময় দুই দিন বাড়ায় এবার তারাও বইটি কিনতে পারবেন। এদিকে মেলায় প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে নতুন নতুন বই। বুধবার পর্যন্ত মেলার ২৮ দিনে তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়েছে ৩ হাজার ১৬১টি নতুন বই। এর মধ্যে কবিতার বই ১০৬২টি। এ হিসাবে প্রকাশিত বইয়ের এক-তৃতীয়াংশ কবিতার বই।
এছাড়া এদিন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- গবেষণাগ্রন্থ ৭৩টি, ছড়া ৯৮টি, শিশুতোষ ৬১টি, জীবনীগ্রন্থ ১২০টি, রচনাবলি ২৯টি, মুক্তিযুদ্ধ ৬৫টি, নাটক ২৯টি, বিজ্ঞান ৪১টি, ভ্রমণ ৬০টি, ইতিহাস ৫০টি, রাজনীতি ২৫টি, স্বাস্থ্য ২৫টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ২৫টি, রম্য/ধাঁধা ২৭টি, ধর্মীয় ৫৭টি, অনুবাদ ৫২টি, অভিধান ১৯টি, সায়েন্স ফিকশন ৩৩টি এবং অন্যান্য ১৮৯টি।
বুধবার বিকালে মেলার দুয়ার খোলার পর থেকে দর্শনার্থী খরা চলছিল। তবে সন্ধ্যার আগে দর্শনার্থী সমাগম কিছুটা বাড়ে। অনেক বইপ্রেমী এদিন মেলায় এসে জানতে পারেন মেলায় দুই দিন সময় বাড়ানোর কথা। শিশির রায়হান নামের এক তরুণ কবি বলেন, 'কাজ থাকায় মঙ্গলবার বিকালে মেলা থেকে বের হয়ে যাই। আজ এসে জানতে পারলাম মেলার সময় দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি জেনে ভালো লাগছে।' আর বিক্রয়কর্মীরা জানান, প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হয়নি। তবে এদিনও মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে যথারীতি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের খবর, প্রকাশিত বইগুলোর নাম, লেখক ও প্রকাশকের নাম ঘোষণা করা হয়।
বুধবার বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে উপন্যাস। এর মধ্যে ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস ভালো বিক্রি হচ্ছে। ব্যক্তি হিসেবে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, হুমায়ূন আহমেদ, আহমদ ছফা, আনিসুল হক, হরিশংকর জলদাস, স্বকৃত নোমান, মোজাফ্ফর হোসেন ও সাদাত হোসাইনের বইয়ের চাহিদা বেশি।
মেলা ঘুরে জানা যায়, এ বছর অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি জীবনীগ্রন্থও বেশি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিক্রি বেড়েছে অভিধানের। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের জীবনীগ্রন্থ 'আমাদের শিল্পাচার্য'। বইটি লিখেছেন কবি ও চিত্রশিল্পী জাহিদ মুস্তাফা। লেখক জানালেন, শিল্পাচার্য জয়নুলের জীবনীগ্রন্থটি শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সববয়সি পাঠকের উপযোগী করে লেখা।
কবিতার বই বিক্রি নিয়ে বিক্রয়কর্মীরা জানান, কবিতার বই বেশি এলেও তরুণ কবিদের প্রতি পাঠকের আগ্রহ খুব কম। কবিদের পরিচিতরাই সাধারণত এসব বইয়ের ক্রেতা। তরুণ কবিরা মেলা মাতিয়ে রাখেন। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশের পর হেলাল হাফিজ, ইমতিয়াজ আহমেদ, হাসান রোবায়েতের কবিতার বইয়ের ভালো কাটতি আছে।
নতুন বই ৮০টি : বুধবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বইমেলার ২৮তম দিনে নতুন বই এসেছে ৮০টি।
মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : মুনীর চৌধুরী এবং স্মরণ : হুমায়ুন আজাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে অধ্যাপক ফিরোজা ইয়াসমীন এবং অধ্যাপক হাকিম আরিফ। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম, অধ্যাপক ইউসুফ হাসান অর্ক, ওসমান গনি এবং মৌলি আজাদ। সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার।
লেখক বলছি : অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন গবেষক ড. মোহাম্মদ হাননান, কবি তারিক সুজাত, কথাসাহিত্যিক সমীর আহমেদ এবং শিশুসাহিত্যিক আবেদীন জনি।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চ : বিকাল ৫টায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত 'সংস্কৃতি ও সদাচার' বই নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. মো. হাসান কবীর এবং সম্পাদকীয় পর্ষদের সদস্যরা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : কবিতা পাঠ করেন কবি প্রদীপ মিত্র, তাহমিনা কোরাইশী, চঞ্চল শাহরিয়ার, হাসান মাহমুদ, আসাদ আহমেদ, মীর রেজাউল কবীর, লোকমান হোসেন পলা, কাজী বর্ণাঢ্য, দীপন দেবনাথ, গোলাম মোর্শেদ চন্দন, কৌমুদী নার্গিস, ফারজানা ইসলাম এবং বোরহান মাসুদ। এছাড়াও ছিল নৃত্য, সঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত।
অস্ট্রেলিয়ায় একুশে বইমেলা ৩ মার্চ : দেশীয় আদলে প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়ার সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কে দিনব্যাপী একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলার জন্য মুখিয়ে থাকে এখানকার লেখক-পাঠকরা। মূলত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে গত ২৫ বছর ধরে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের বইমেলা আগামী ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
মেলার আগে যথারীতি বইমেলার মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলা সাহিত্যিক, কবিদের সদ্য প্রকাশিত (গত মেলা থেকে বর্তমান পর্যন্ত) বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। মেলায় লেখকদের ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয়। এছাড়া বইটির দুই কপি রেপিং করে মেলার দিন বেলা ১১টার মধ্যে প্রকাশনা সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়ার জন্য বইমেলা কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জানা যায়, মেলায় থাকবে ভাষা আন্দোলনের স্মরণে নানা আয়োজন ও সাহিত্যের অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বইমেলায় সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মেলার আয়োজক একুশে একাডেমির সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল মতিন। মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক সিডনির স্থানীয় গণমাধ্যম প্রভাত ফেরি।