দুই জেলায় পিতার মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় অংশ নিলেন সন্তান

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বাড়িতে পিতার মরদেহ। স্বজনরা শোকাহত। প্রস্তুতি চলছে দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের নাইম হোসেন হৃদয় ও রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার মেমেসিং মারমা নামে দুই পরীক্ষার্থী। এদিন ছিল ধর্ম বিষয়ের পরীক্ষা। গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুকসুদপুরে বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে এসে বাবার লাশ দাফন করেছে নাইম হোসেন হৃদয় মোলস্না নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি সরকারি মুকসুদপুর কলেজ কেন্দ্রে ধর্ম পরীক্ষা দিয়েছেন। তার বাড়ি উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের খাঞ্জাপুর গ্রামে। পরীক্ষার্থী নাইম হোসেন হৃদয় জানান, তার বাবার ইচ্ছা ছিল তার ছেলে বড় হয়ে বিসিএস ক্যাডার হবে। কিন্তু তার বাবা দেখে যেতে পারলেন না ছেলের ভবিষ্যৎ। তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। শিক্ষার্থীর চাচা বাবুল মোল্যা বলেন, 'আমার ভাই মনিরুজ্জামান মোল্যা ২৬ ফেব্রম্নয়ারি রাতে স্ট্রোক করে মারা যান। ভাইয়ের মৃতদেহ বাড়িতে রেখে ভাতিজাকে পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছিলাম। ভাতিজা পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি আসার পর বেলা ২টায় ভাইয়ের লাশ দাফন করেছি।' কেন্দ্র সচিব অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাস জানান, শিক্ষার্থী নাইম হোসেন হৃদয় মোল্যার বাবা মারা গেছেন। আমরা খবর পেয়ে তাকে আলাদা পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। সে জানিয়েছে, সবার সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দেবে। সে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিয়েছে। তার পরীক্ষার জন্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। এদিকে আমাদের কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় ঘরে বাবার মরদেহ রেখে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মেমেসিং মারমা নামে এক পরীক্ষার্থী। উপজেলা সদর বড়ইছড়ি নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্র ছিল ওই শিক্ষার্থীর ধর্ম বিষয়ের পরীক্ষা। তার বাড়ি ওয়াগ্‌গা ইউনিয়নের কুকিমারা পাড়ায়। মেমেসিং মারমার বাবা উপাচিং মারমা (৪৭) সোমবার বিকালে কুকিমারা পাড়ায় নিজ বাড়িতে মারা যান। তিনি পেশায় কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি রোগে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন কুকিমারা এলাকার কারবারি চিংসুই মং মারমা। কারবারি চিংসুই মং মারমা আরও জানান, মেমেসিং মারমা বাবার একটি কিডনি অনেক আগেই নষ্ট হয়। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। তার মেয়ে বাবার লাশ রেখে মঙ্গলবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। মেয়ের পরীক্ষা শেষে বিকালে ধর্মীয় কাজ শেষে তাকে কুকিমারা শ্মশানে দাহ করা হয়। এ বিষয়ে ওয়াগ্‌গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবিমল তনচংগ্যা জানান, মেমেসিং মারমা ২০২৪ সালের চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ওয়াগ্‌গা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নিচ্ছে।