নানা কর্মসূচিতে পিলখানা ট্র্যাজেডি দিবস পালিত
প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পিলখানা হত্যাকান্ডের ১৫তমবার্ষিকী পালন করেছে সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি। রোববার বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়াও সদর দপ্তরসহ বিজিবির সারাদেশের রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রম্নয়ারি বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায়
সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ।
এছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে নিহতদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এ সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং কর্মরত সামরিক সদস্যরা স্যালুট প্রদান করেন। পরে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
এছাড়াও রোববার দেশের সব সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সব স্তরের সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিজিবি
এদিকে পিলখানা হত্যাকান্ডের দিনে রোববার ফজরের নামাজের পর থেকে জোহরের নামাজের আগ পর্যন্ত নিহতদের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরসহ সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের মসজিদসমূহে খতমে কোরআন আয়োজন করা হয়। দিবসটি উদযাপনে বিজিবির সব স্থাপনায় বিজিবি রেজিমেন্টাল পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং বিজিবির সব সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করে।
বাদ আসর পিলখানায় বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিজিবির সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের সব মসজিদ ও বিওপি পর্যায়ে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রিত অতিথিরা, নিহত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়রা, পিলখানায় কর্মরত সব অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবির সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকান্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। ওই ঘটনায় দুটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল হত্যা মামলা, অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় মামলা। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃতু্যদন্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
তবে বিস্ফোরক আইনের মামলা এখনও বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণেই আটকে আছে।