প্রাণের বইমেলা
বাড়ছে অনুবাদ সাহিত্যের পাঠক
২৬তম দিনে এসেছে ২৪৬টি নতুন বই
প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বীরেন মুখার্জী
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে চলমান মাসব্যাপী বইমেলা শেষ হতে চলেছে। সোমবার ছিল বাঙালির প্রাণের এ মেলার ২৬তম দিন। এ বছর লিপইয়ার হওয়ায় ফেব্রম্নয়ারি মাস পেয়েছে ২৯ দিন। সেই হিসেবে আর তিনদিন পরই বইমেলার পর্দা নামবে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বিদায়ের ক্ষণগণনা। তবে শেষ সময়ে মেলায় লোকসমাগম বাড়ছে। একই সঙ্গে বইয়ের বিক্রিও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বইয়ের দোকানিরা।
প্রতিবছর বইমেলায় ছুটির দিনে জনস্রোত লক্ষ্য করা যায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি হওয়ায় সোমবার বইমেলায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বইয়ের দোকান বেশি হওয়ায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বেশি ভিড় হয়। সোমবার বেলা ১২টায় শুরু হয় মেলা। তিনটার পর থেকে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। নানা বয়সি মানুষ এসেছেন মেলায়। বেশির ভাগের হাতে শোভা পাচ্ছিল বইয়ের ব্যাগ। বিক্রেতারা বলছেন, মেলার শেষের দিকেই বই বিক্রি বাড়ে। এতে তারাও খুশি।
বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও টান থেকেই বইমেলা শুরু। প্রথমে ব্যক্তি উদ্যোগে শুরু হলেও কালক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সাহিত্যপ্রেমী মানুষের আগমনে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে তা। একুশে বইমেলা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাহিত্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। বাংলাদেশে মানুষের পছন্দের অন্যতম ক্ষেত্র অনুবাদ সাহিত্য। প্রকাশকরা জানান, অনুবাদ সাহিত্যের চাহিদাও বাড়ছে। সোমবার সরেজমিন গিয়ে অনুবাদ সাহিত্যের স্টলগুলোয় প্রচুর ভিড় দেখা যায়। তবে অনুবাদ সাহিত্যের মান আরও ভালো হওয়া উচিত বলে মনে করেন পাঠকরা।
পাঠকরা জানান, অনেক সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ ইংরেজির চেয়ে দুর্বোধ্য। দেশে অনুবাদ সাহিত্যের চাহিদা বাড়ছে। সেক্ষেত্রে প্রকাশকদের উচিত এর মানের দিকে নজর দেওয়া।
অন্যদিকে প্রকাশকরা জানান, মান নিশ্চিতের জন্য লেখকের পাশাপাশি, প্রকাশকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনুবাদক অনুবাদ করে পান্ডুলিপি জমা দেওয়ার পর নিজস্ব সম্পাদনা পর্ষদের মাধ্যমে সম্পাদনা করা উচিত। তাহলে অনুবাদ সাহিত্যের মান আরও বাড়বে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় পাঠক-কবি মোবারক হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, বইমেলা লেখক-পাঠকদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের একটি অনুষ্ঠান। তিনি খুঁজে খুঁজে তিনটি অনুবাদ বই কিনেছেন।
এ বছর শুরু থেকেই বইমেলা ছিল জমজমাট। ২৬তম দিনে এসেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রকাশকরা জানান, আগামী তিনদিন এমনই পাঠকের ভিড় দেখা যাবে মেলায়। বিক্রিও বাড়বে। মেলার শেষদিকে হলেও বিক্রি বাড়ায় প্রকাশকদের মুখে হাসি ফুটেছে। দর্শনার্থী শূন্য থাকা লিটল ম্যাগাজিন চত্বরেও দর্শনার্থী বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে বিক্রি।
এদিকে, পবিত্র শবেবরাতের ছুটির দিনে সোমবার অমর একুশে বইমেলা শুরুর সময় পরিবর্তন করে দুপুর ১২টায় বইমেলার দুয়ার খুলে দেওয়া হয়। এর পর থেকেই বইপ্রেমীর ঢল নামে মেলাপ্রাঙ্গণে। এদিন মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেলা ২৬তম দিনে নতুন বই এসেছে ২৪৬টি!
এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'স্মরণ: আবুবকর সিদ্দিক' এবং 'স্মরণ: আজিজুর রহমান আজিজ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফরিদ আহমদ দুলাল এবং কামরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন মামুন মুস্তাফা, মো. মনজুরুর রহমান, তৌহিদুল ইসলাম ও আনিস মুহম্মদ। সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ মান্নান।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক সরকার আবদুল মান্নান, কবি ইউসুফ রেজা, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক দিলওয়ার হাসান এবং কথাসাহিত্যিক
মোস্তফা তারিকুল আহসান।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন: বিকাল ৫টায় সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা বিষয়ে বৈঠকে অংশ নেন- সঞ্জীব পুরোহিত, তারেক রেজা, জাহিদ সোহাগ, আফরোজা সোমা, আহমেদ শিপলু, রাদ আহমদ এবং সৈয়দ জাহিদ হাসান। সঞ্চালনা করেন ফারহান ইশরাক ও খালিদ মারুফ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ, শামীম রেজা, রহীম শাহ, নভেরা হোসেন এবং ইমরান পরশ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ম ম জুয়েল, আরিফ হাসান, আলম আরা জুঁই, খোদেজা বেগম। এ ছাড়া ছিল জয়দুল হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সাহিত্য একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া', মুশতাক আহমেদ লিটনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'আমরা কুঁড়ি' এবং শাহিনুর আল-আমীনের পরিচালনায় সংগঠন 'সম্প্রীতি সংস্কৃতি বন্ধন'-এর পরিবেশনা। এ ছাড়া ছিল আরও নানা আয়োজন।
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ : ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪; ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে মনজুর আহমদ রচিত একুশ শতকে বাংলাদেশ : শিক্ষার রূপান্তর গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত যাত্রাতিহাস : বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত কিলো ফ্লাইট প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হলো। ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খিকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়েছে।
২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্যপ্রকাশ (প্যাভিলিয়ন), নিমফিয়া পাবলিকেশন (২-৪ ইউনিট), বেঙ্গল বুকস (১ ইউনিট)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়েছে।
২৯ ফেব্রম্নয়ারি বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার হস্তান্তর করা হবে।
আজকের অনুষ্ঠান: আজ বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্মরণ : সেলিম আল দীন' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন লুৎফর রহমান। আলোচনায় অংশ নেবেন রশীদ হারুন এবং জাহিদ রিপন। সভাপতিত্ব করবেন নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।