বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বাবুবাজার সেতু পার হতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা!

মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
পোস্তগোলা সেতুতে সংস্কার কাজ চলায় বাড়তি চাপ পড়েছে বাবুবাজার সেতুতে। ফলে তীব্র যানজট এবং ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও পরিবহণ চালকরা। ছবিটি শনিবার তোলা -নাজমুল ইসলাম

ঢাকার প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুতে (পোস্তগোলা সেতু) সংস্কার কাজ চলায় বাবুবাজার সেতুতে (বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু) যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ফলে সকাল থেকে বাবুবাজার সেতু পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এতে তীব্র যানজট ও ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও বাস-ট্রাক চালকরা। তারা বলছেন, ট্রাফিক মনিটরিং ব্যবস্থায় ঘাটতির কারণেই জনগণের এই দুর্ভোগ।

শনিবার সকাল থেকে বাবুবাজার সেতু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেতুর ওপর বাস, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন গাড়ির দীর্ঘ লাইন। যানজটের কারণে অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। সকাল থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেস ওয়ের কেরানীগঞ্জ সংযোগ সড়ক থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলো যানজটের কারণে থমকে আছে। দীর্ঘ সময় পর যানবাহন কিছুটা এগোচ্ছে। দুপুর-বিকাল পর্যন্ত সেতুর ওপর থেমে থেমে যান চলাচল করতে দেখা গেছে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা মিরপুরগামী স্বাধীন পরিবহণের চালক ইদ্দিস আলী বলেন, 'এমনিতেই সব সময় বাবুবাজার সেতুতে যানজট থাকে। সেতুটি পার হতে মাঝেমধ্যে ঘণ্টাখানেক সময় চলে যেত। আর এখন পোস্তগোলা সেতু সংস্কার কাজ চলায় সেতুতে যানজট আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। থেমে থেমে গাড়ি চালাতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে।'

বিক্রমপুর থেকে আসা যাত্রী হাসান মাহমুদ জানান, সকাল থেকেই তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে সেতুর ওপারে। এতে গন্তব্যে যেতে বিলম্ব হচ্ছে যাত্রীদের।

বাসে বসে থাকা রাফায়েল

নাদিম নামে এক শিক্ষার্থী জানান, কলেজের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়েই জ্যামের মধ্যে পড়তে হয়েছে। যানজটের কারণে সেতু পার হতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।

ট্রাফিক মনিটরিংয়ের ব্যাপক ঘাটতি আছে নয়াবাজারে। যার জন্য যানজট সামাল দিতে পুলিশের হিমশিম অবস্থা বলেও যাত্রী ও বাস-ট্রাক চালকরা মনে করছেন।

পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার মোড় এলাকায় বাসে বসে থাকা টুম্পা পাল জানান, ঢাকামুখী ও ঢাকা ছাড়ার উভয় রাস্তায়ই জ্যাম লেগে আছে। তবে ঢাকামুখী গাড়ির চাপই বেশি। এতে বাবুবাজার সেতুতে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি মিলছে না পর্যাপ্ত গাড়িও। যেগুলোও বা চলছে, সেগুলো যাত্রীতে পূর্ণ। ফলে বিলম্ব হচ্ছে যাত্রা।

এদিকে অনেক ব্যবসায়ীকেই পণ্য হাতে সেতু পার হতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ী রোকন হোসেন বলেন, 'রাজধানীর কারওয়ানবাজার ও শ্যামবাজার থেকে পণ্য কিনে কেরানীগঞ্জের বাজারগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিদিন সকালেই। তবে আজ জ্যামের কারণে সবজি-মুরগি হাতে করে নিয়েই সেতু পার হতে হচ্ছে।'

কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাজারের মুরগি বিক্রেতা মনির হোসেন জানান, ব্রিজে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এতে পণ্য ঠিকমতো বাজারে আনতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। প্রায় ২ ঘণ্টা বসে থেকে পরে কর্মচারীদের নিয়ে হেঁটে কয়েকবারে মুরগি নিয়ে দোকানে এসেছেন।

বাবুবাজার সেতু এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আল-আমিন জানান, পোস্তগোলা সেতুর সংস্কার কাজের প্রভাব পড়েছে বাবুবাজার সেতুর ওপর। এতে এখান দিয়ে বেড়েছে বড় গাড়ির চাপ। ফলে কিছুটা ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। তবে বাবুবাজার সেতু থেকে নামার পর রাস্তা মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে।

ঢাকা জেলার ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) ইন্সপেক্টর জাকির হোসেন বলেন, 'সড়ক ও জনপদ বিভাগ যাতে নির্বিঘ্নে কাজ সম্পন্ন করতে পারে, সেজন্য বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর পোস্তগোলা সেতুর দুই পাশে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংস্কার কাজ চলার ১৬ দিনের মধ্যে ৫ দিন, অর্থাৎ ২৪, ২৬ ফেব্রম্নয়ারি এবং ১, ৪ ও ৮ মার্চ সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।'

সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) পীযুষ কুমার দে জানান, সকাল থেকে তারা যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন। যেহেতু আগামী ৮ মার্চ পর্যন্ত পোস্তগোলা সেতুর সংস্করণ কাজ চলবে তাই তারা বাবুবাজার সেতুর দুই পাশেই বাড়তি ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, 'সব ধরনের রিকশা ভ্যান এই পথে আপাতত চলাচল নিষেধ করা হচ্ছে। এছাড়া গত তিন দিন ধরে এখানে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে জরুরি প্রয়োজন অনুসারে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতাও করা হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে।'

প্রায় ৩৪ বছর বয়সি সেতুটির ১৬ দিনের এ সংস্কার কাজ চলাকালে ঢাকাসহ ২১ জেলার যানবাহনের যাতায়াতের ক্ষেত্রে আরও বাড়তি যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই বিকল্প সড়ক নির্ধারণের সেতুর সংস্কার কাজ চলাকালীন ঢাকা মহানগরের বাইরে থেকে ভারী যানবাহনগুলো চলাচলের জন্য সম্ভাব্য রুটগুলোর জন্য দুটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এর একটি ভারী ও আরেকটি হালকা যানবাহন। বাবুবাজার কেন্দ্রিক সেতুতে ভারী যানবাহন চলাচল করবে। ফিরতি পথেও একই রুট ব্যবহার করবে।

হালকা যানবাহনের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু থেকে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামমুখী যানবাহন শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ, মুক্তারপুর সেতু, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, মদনপুর হয়ে যাতায়াত করতে বলা হয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে পদ্মা সেতুমুখী যানবাহন মদনপুর থেকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু-মুক্তারপুর হয়ে শ্রীনগর দিয়ে পদ্মার ওপারে যাতায়াত করবে। আর পদ্মা সেতু থেকে ঢাকাগামী হালকা যানবাহন শ্রীনগর-দোহার-নবাবগঞ্জ- কেরানীগঞ্জ সড়ক, তুরাগ-রোহিতপুর, আব্দুলস্নাহপুর-রাজাবাড়ি বাজার-কোনা খোলা মোড়-বছিলা সেতু-মোহাম্মদপুর সড়ক ব্যবহার করবে বলে জানান সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (ঢাকা জোন) অতিরিক্ত প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন। চীনা কারিগরি সহায়তা ৭২৫ মিটার দীর্ঘ পোস্তগোলা (বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু) সেতুটি চালু হয় ১৯৮৯ সালে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে