শেষ সময়ে বেড়েছে বিক্রি

২৪তম দিনে এসেছে ১৩৮টি নতুন বই শেষ শনিবারেও জমজমাট শিশুপ্রহর

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

বীরেন মুখার্জী
ছুটির দিন মেলায় ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়। ছবিটি শনিবার তোলা -যাযাদি
বাঙালির ভাষার মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলমান অমর একুশে বইমেলার শেষ সপ্তাহে এসে বই বিক্রি বেড়েছে। শনিবার সকাল ১১টায় মেলার দুয়ার খোলার পরপরই বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এদিন ছিল শিশুপ্রহর। শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে বইমেলায় এসে শিশুপ্রহর উপভোগ করে। সিসিমপুরের অনুষ্ঠান দেখার পাশাপাশি অনুষ্ঠানের মঞ্চে ছবি আঁকায় ব্যস্ত সময় পার করে তারা। এরপর বাবা-মায়ের হাত ধরে স্টলে স্টলে ঘুরে কেনে নতুন নতুন বই। এদিকে বিকাল নামতেই বদলে যায় বইমেলার চিত্র। মাসব্যাপী বইমেলার শেষ শনিবার হওয়ায় এদিন দর্শনার্থীদের ঢল নামে মেলা প্রাঙ্গণে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অনেকেই অভিভাবকসহ যোগ দেন বইমেলায়। এতে বইমেলার প্রতিটি প্রবেশপথেই লাইন তৈরি হয়। মেলার প্রায় প্রতিটি প্রকাশনীর স্টল-প্যাভিলিয়নে ছিল পাঠকের উপস্থিতি। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্যদিনের চেয়ে বেশি বই বিক্রি হয়েছে। মেলায় যারা এসেছেন তারা কমবেশি বই কিনেছেন। দর্শনার্থী-বইপ্রেমীদের এমন উপস্থিতি এবং বিক্রি বাড়ায় হাসিমুখ ছিল বিক্রেতাদেরও। সকালে রাজধানীর আরামবাগ থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুপ্রহরে আসা নাসরিন জানায়, শিশুপ্রহরে এসে তার খুবই ভালো লেগেছে। সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকিকে দেখেছে সে। এরপর কার্টুনের বই কিনেছে তিনটি। শিক্ষার্থী হাসনাত মিশু জানায়, আম্মুর সঙ্গে বইমেলায় এসে আজ সে অনেক মজা করেছে। হাসনাত রাজধানীর মহম্মদপুরে থাকে। সে দ্বিতীয় শেণির শিক্ষার্থী। আলমগীর হোসাইন নামের এক অভিভাবক বলেন, 'শিশুদের জন্য এ আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। শিশুরা এখানে এসে অনেক আনন্দ পায়। শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য বা বাড়তি আনন্দ দিতে এখানে শিশুদের নিয়ে আসা উচিত। সেই সঙ্গে শিশুরা বইমেলায় এলে বইপড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।' শিশুপ্রহরে ভিড়ের পাশাপাশি এখানে থাকা স্টলগুলোতেও ভিড় দেখা গেছে। শিশুরা পছন্দ করে বিভিন্ন ধরনের বই কিনছে। চিলড্রেন হ্যাভেন পাবলিকেশন্সের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, 'শুক্র ও শনিবারে ভিড় বেশি থাকে। বই বিক্রিও বেশি হয়। এই দুইদিন প্রায় দশ হাজার টাকা করে বা তার বেশিও বই বিক্রি হয় আর অন্য দিন তিন থেকে চার হাজার টাকার বই বিক্রি হয়। মেলায় নিজের তৈরি তালিকা দেখে বই কিনছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাঈম হাসান। তিনি বলেন, 'মেলা শুরুর পর থেকে ঘরে বসে তালিকা করেছি। নতুন বই সাধারণত মেলার মাঝামাঝিতে বের হয় বেশি। এ জন্য শেষ সপ্তাহে গিয়েই বই কেনার জন্য অপেক্ষা করি। এই সপ্তাহে বই কেনা শুরু করেছি।' সপরিবারে মুন্সীগঞ্জ থেকে বই কিনতে এসেছিলেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, 'ছুটির দিন অফিস বন্ধ তাই মেলায় আসা হলো। মেলার পরিবেশ বেশ ভালো লাগছে। বই কেনার পাশাপাশি বইমেলার যে একটা পরিবেশ সেটা উপভোগ করতেই প্রতিবার মেলায় আসি।' মেলায় পাঠকের ভিড়ে বেশিরভাগ বিক্রেতার মুখেই ছিল সন্তুষ্টির হাসি। তবে উপস্থিতি অনুসারে বিক্রি হচ্ছে না এমন অভিযোগও করছিলেন কেউ কেউ। পান্ডুলিপি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী বলেন, 'বিক্রি মোটামুটি। ছুটির দিনে হওয়ায় পাঠক-ক্রেতার উপস্থিতিও বেশি। কিন্তু উপস্থিতি অনুপাতে বিক্রি কম।' এদিকে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২৪তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৩৮টি। এদিন ছিল শিশুপ্রহর। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'মোহাম্মদ রফিক' এবং 'খালেক বিন জয়েনউদদীন' শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ এবং সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশ নেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান এবং আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন আবুল মোমেন। শনিবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও গবেষক শাহনাজ পারভীন, কবি ও অনুবাদক সাইফুল ভূঁইয়া, কথাসাহিত্যিক শাহনাজ পারভীন স্মৃতি এবং গবেষক মনিরুজ্জামান শাহীন। বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন: এই মঞ্চে বিকালে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত, মুহম্মদ মোজাম্মেল হক রচিত মুক্তিযুদ্ধ ও আলোকচিত্র বই নিয়ে লেখকের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, আশিক আকবর, মাহবুব আজীজ, বীরেন মুখার্জী, আরেফিন রব, কাফি শেখ, সালেহ মুজাহিদ এবং তিথি বালা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নূরুল হাসনাত জিলান, লুৎফুন নাহার লতা, নিমাই মন্ডল, সাহিত্য ভঞ্জ চৌধুরী। এছাড়াও ছিল আসাদুজ্জামান মান্নার পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন 'কুষ্টিয়া আবৃত্তি পরিষদ', মাসুম হুসাইনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন 'পরম্পরা নৃত্যালয়', মাহবুব রিয়াজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী' এবং হাসান আবদুলস্নাহ বিপস্নবের পরিচালনায় 'ঘাসফুল'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, সালাউদ্দিন আহমদ, সুজিত মোস্তফা, নফিসা মাহজাবিন, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, তাপসী ঘোষ, বর্ণালী সরকার, ফারহানা আক্তার এবং ঝর্ণা রায় ভাবনা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন কাজী মো. ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), রবিন্‌স চৌধুরী (কী-বোর্ড), মো. হাসান আলী (বাঁশি), ফিরোজ খান (সেতার), বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা)। আজকের অনুষ্ঠান: আজ রোববার অমর একুশে বইমেলার ২৫তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কাজী নূরুল করিম দিলু। আলোচনায় অংশ নেবেন তানভীর নেওয়াজ এবং মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদ। সভাপতিত্ব করবেন জেবুন নাসরীন আহমেদ।