পাহাড়ে হাতি-মানুষের লড়াই
প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সাকিব আলম মামুন, লংগদু
মরলে ৩ লাখ, বাঁচলে ১ লাখ! না, এমনিতে মরলে নয়। পাহাড়ে বন্যহাতির আক্রমণে মারা গেলে সরকার বনবিভাগের মাধ্যমে দেবেন ৩ লাখ, আহত হলে ১ লাখ আর ফসল ক্ষতি হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে বনবিভাগ। এমনটাই জানিয়েছেন বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ।
দেশের সর্ববৃহৎ জেলা ও সীমান্তবর্তী জনপদ রাঙামাটি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাসও এখানে। পাহাড় ও জঙ্গলঘেরা এই জনপদে প্রায় সময় হানা দিচ্ছে খাদ্যের সংকটে পড়া বন্যহাতির দল। এতে নষ্ট হচ্ছে ফসল, ঘরবাড়ি। এদের আক্রমণে বাড়ছে প্রাণহানিও। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় হাতি-মানুষের লড়াই।
এ লড়াই যেন দেখার নেই কেউ, এমনটিই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, মানুষ ও হাতিকে রক্ষা করা যাদের দায়িত্ব, সেই বন বিভাগের স্থায়ী কোনো সমাধানের উদ্যোগ নেই।
বনবিভাগ, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকদিন আগে একটি বন্যহাতির দল ভারত থেকে দলছুট হয়ে এ অঞ্চলের পাহাড়ে চলে আসে। সেই থেকে হাতির সংখ্যা ও উপদ্রপসহ মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ছে পাহাড়ের সীমান্তে। বর্তমানে এখানে হাতির সংখ্যা ১২-১৩টি। হাতির এ দলটি ধান ও গ্রীষ্মকালীন ফলের সময় খাদ্যের সন্ধানে নেমে আসে লোকালয়ে।
উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা ভাসান্যাদম, বগাচতর ও গুলশাখালী থেকে প্রায় সীমান্ত এলাকার ৬০ কিলোমিটারের পুরো এলাকা চষে বেড়ায় এরা। তখন আতঙ্কে গ্রামবাসীর নির্ঘুম রাত কাটে। গত এক বছরে এ এলাকায় হাতির আক্রমণে মৃতু্য হয়েছে ৩ জনের। আহত হয়েছে অনেকেই।
ভুক্তভোগীরা জানান, কৃষি মৌসুমে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে মানুষ মশাল জ্বালিয়ে, হই-হুলেস্নাড় করে ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন। প্রায় আড়াই দশক ধরে এ যুদ্ধ যেন বেড়েই চলছে প্রতিনিয়ত। আগে ফসলের মৌসুমে হাতির দল হানা দিত, কিন্তু সম্প্রতি সারা বছরই সীমান্তে বিচরণ করায় ভারত সীমান্তের বেশকিছু এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকাকে দায়ী করা হচ্ছে।
উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নে রাঙ্গীপাড়া এলাকার কৃষক মনির হোসেন বলেন, 'আগে ফসলের মৌসুমে হাতি আসত। এখন তো মনে চাইলে যখন তখন এসে হানা দেয়। এতে আতঙ্কে সবার নির্ঘুম রাত কাটে।'
তিনি আরও বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের হাতিপ্রবণ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি উদ্যোগে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে সোলার ফেন্সিং সিস্টেম চালু করা হলেও লংগদুতে এটা এখনো চালু হয়নি। এমন দুর্গম পাহাড়ি জনপদে বিদু্যৎ না থাকায় এ দ্বন্দ্ব দিনদিন জটিল হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
এদিকে এলিফ্যান্ট রেস্কিউ টিমের (ইআরটি) সদস্যরা বলেন, বনবিভাগের নির্দেশে আমরা হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্যে লোকালয়ে হাতি চলে এলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গে এলাকাজুড়ে প্রচারণা চালাই এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বনবিভাগের কাছে সাহায্য-সহযোগিতার কাজ করি। তবে আমাদের এসব কার্যক্রম সম্পূর্ণই স্বেচ্ছাশ্রম। তবে সরকারের প্রতি আবেদন আমাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।
পাবলাখালী বন বিভাগের কর্মকর্তা সজিব মজুমদার বলেন, 'বনবিভাগ হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয়দের নিয়ে এলিফ্যান্ট রেস্কিউ টিম (ইআরটি) গঠন করে হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরামর্শ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।'