২৩তম দিনে মেলায় এসেছে ১৯৭টি বই

কলকাকলিতে মুখর শিশুপ্রহর

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

বীরেন মুখার্জী
শিশুপ্রহরে শুক্রবার কচি-কাঁচাদের আনন্দ-উলস্নাসে মুখর হয়ে ওঠে অমর একুশে বইমেলা -যাযাদি
চলতি বছরের অমর একুশে বইমেলার ২৩তম দিনে শিশুপ্রহর নিয়েই আগ্রহ বেশি ছিল শিশুদের। আকাশে মেঘ আর বৃষ্টির শঙ্কা ঘরবন্দি রাখতে পারেনি তাদের। সকাল ১১টায় মেলার দুয়ার খোলার পরপরই শিশুদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে শিশুচত্বর। বাংলা একাডেমির বিশেষ আয়োজন 'শিশুপ্রহরে' এদিন মঞ্চে যথারীতি উপস্থিত ছিল জনপ্রিয় কার্টুন সিসিমপুরের চরিত্র হালুম, ইকরি, শিকু ও টুকটুকি। তারা নাচ আর গানে মাতিয়ে তোলে শিশুপ্রহর। গানে গানে শিশুদের শেখায় নিরাপদে সড়ক পারাপার সম্পর্কে। শিশুরাও ছিল মনেপ্রাণে উচ্ছ্বসিত। দিনটি মাসের শেষ শুক্রবার হওয়ায় শিশু প্রহর ঘিরে ভিড়ও ছিল কিছুটা বেশি। সকালে বাবা-মায়ের হাত ধরে মেলায় আসে শিশুরা। শিশু প্রহরে অভিভাবকদের হাত ধরে তারা ঘুরে বেড়ায় বইয়ের স্টলে স্টলে। নিজেদের বা বাবা-মায়ের পছন্দমতো বই কেনে তারা। গল্পের, ছড়ার বা কমিকসের বই কেনাকাটা ছাড়াও সিসিমপুরে মঞ্চে নাচ, গান, চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে শিশুরা। এদিন বিকাল সাড়ে ৩টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়ও সিসিমপুরের শো অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে শিশুপ্রহরে সিসিমপুরের আয়োজন শেষ হতেই শিশু ও অভিভাবকরা ভিড় করেন স্টলগুলোতে। তবে রাতে বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত শিশুচত্বরে ভোগান্তি হয়েছে অভিভাবক ও শিশুদের। অনেকটা পা টিপে টিপে হাঁটতে হয়েছে সবাইকে। ভোগান্তি থাকলেও বইমেলায় আসার আনন্দে কমতি ছিল না কারও। মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কথা হচ্ছিল রাদ্ধ প্রকাশের প্রকাশক ও সহকারী অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি মেলা আয়োজনের নানা অব্যবস্থাপনার কথা বলছিলেন। স্টল বরাদ্দ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই ফেয়ার নয় বলে দাবি তার। তিনি অভিযোগ করেন, স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির অযাচিত হস্তক্ষেপ আছে। ফলে ভালো বই প্রকাশ করেও অনেকে স্টল পান না। এছাড়া মোড়ক উন্মোচনের হিসাব কষে তিনি বলেন, 'প্রতি লেখকের বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য ১০ মিনিট করে সময় দেওয়া হলেও মেলা ঘিরে যেসব বই প্রকাশ পায় তার জন্য অঢেল সময়ের প্রয়োজন। এর জন্য মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ সংখ্যা বাড়ানো দরকার।' বইমেলা অন্যত্র সরানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় খেলার মাঠ রয়েছে। এটি নেওয়া গেলে বইমেলার ঐতিহ্য কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।' বিষয়টি বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মেলায় আসা প্রাবন্ধিক-গবেষক মানবর্দ্ধন পাল জানান, এ নিয়ে তিনি তিন দিন এসেছেন। বইমেলায় আসা মানেই তো অন্যরকম আনন্দের। 'বাংলার বিপস্নবী চরিতাভিধান' নামে তার একটি নতুন বই কথাপ্রকাশ প্রকাশনী থেকে এসেছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, 'সিপাহি বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলার বিপস্নবীদের নিয়ে মূলত এই বইটি। এই বইয়ে দেড় হাজার বিপস্নবীর তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে।' কলি প্রকাশনীর মালিক কলি আহমেদ জানান, এ বছর তার প্রকাশনী থেকে ৫০টির মতো বই প্রকাশিত হচ্ছে। এর মধ্যে শুক্রবার এসেছে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখকনির্জন মোশাররফের রোমান্টিক থ্রিলার 'বস্ন্যাক রোজ' বইটি। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় বইমেলার মূলমঞ্চে ছিল বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসা আনিকা তাবাসসুম বলেন, 'সকালে আবৃত্তি প্রতিযোগিতার পুরস্কার অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। পরে মেলায় মেয়েকে নিয়ে ঘুরেছি, বই কিনেছি।' শিশুচত্বরে ঘাসফড়িং, জনতা প্রকাশ, বাংলা একাডেমি, তাকধুমসহ কয়েকটি স্টলে কথা বলে জানা যায়, বই বিক্রি মন্দ হয়নি। এসব স্টলের বিক্রয় কর্মীদের ভাষ্য, মেলায় যারা আসছেন, তাদের বেশিরভাগই বই হাতে বাড়ি ফিরছেন। বাংলা একাডেমি বিজ্ঞপ্তিতে জানায় মেলার ২৩তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৯৭টি। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এএফএম হায়াতুলস্নাহ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'আখতারুজ্জামান ইলিয়াস' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মামুন হুসাইন। আলোচনায় অংশ নেন ওয়াসি আহমেদ এবং জাফর আহমদ রাশেদ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চ: বিকালে এই মঞ্চে পারস্য সাহিত্যের অনুবাদক ও লেখক অধ্যাপক শাকির সবুর রচিত সমকালীন ইরানের কবি ও কবিতা এবং ফারসি থেকে অনূদিত বুজুর্গে আলাভির তার চোখগুলো বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি অঞ্জনা সাহা, নূরুন্নাহার শিরিন, মতেন্দ্র মানখিন, মাসুদুল হক, তিথি আফরোজ, ফিরোজ শাহ, আহমদ জামাল জাফরী, রাজীব কুমার সাহা এবং নাদিরা খানম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী বেলায়েত হোসেন, রুবিনা আজাদ, সায়েরা হাবীব, ঝর্ণা পারুল, তনুশ্রী মলিস্নক এবং জেসমিন বন্যা। এছাড়াও ছিল রুবিনা আজাদের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন 'উদয় দিগঙ্গন', ফাতেমা-তুজ-জোহরার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'গ্রহস্বর', কাজী মাহতাব সুমনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন 'পরম্পরায়' এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বাঙালি সাংস্কৃতিক বন্ধন'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সেলিম চৌধুরী, সন্দীপন দাস, রহিমা খাতুন, লাকী সরকার, প্রত্যাশা চাকমা, ডা. তাপস বোস, মো. বদিয়ার রহমান এবং সিদ্দিক কবির। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন কেশব সরকার (তবলা), রবিন্‌স চৌধুরী (কী-বোড), মো. মামুনুর রশিদ (গিটার), খোকন বাউলা (দোতারা) এবং আবদুস সোবহান (বাংলা ঢোল)। আজকের অনুষ্ঠান:বইমেলার ২৪তম দিনে আজ মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত থাকবে শিশুপ্রহর। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'মোহাম্মদ রফিক' এবং 'খালেক বিন জয়েনউদদীন' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ এবং সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশ নেবেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান, আসলাম সানী এবং আমীরুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করবেন আবুল মোমেন।