কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত শিক্ষক সমিতির সদস্যরা উপাচার্য ড. এএফএম আব্দুল মঈনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে কুবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে কর্মকর্তা, কর্মচারী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিপ্রার্থী কিছু সাবেক শিক্ষার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এক পর্যায়ে শিক্ষকদের থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন উপাচার্যপন্থি এই কর্মকর্তা।
সোমবার কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে নবগঠিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষকরা মনে করেন, প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষকদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারা প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর পদত্যাগ দাবি করে উপাচার্যের কক্ষে রাত নয়টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। পরে নিরাপত্তা চেয়ে কর্মকর্তা জাকির, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কুমিলস্না সদর দক্ষিণ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান।
সরেজমিন দেখা যায়, নবগঠিত শিক্ষক সমিতির নেতারা উপাচার্যের কক্ষে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে আবেদন করা চাকরিপ্রার্থী, কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন উপাচার্যপন্থি কর্মকর্তা জাকির। তখন তাদের কক্ষে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করেন সহকারী প্রক্টর হাসেনা বেগম। এসময় বাধা না মেনে ওই সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন জাকির হোসেনসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও চাকরিপ্রার্থীরা। এক সময় উপাচার্যের দপ্তরের দরজা ভেঙে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে হাতাহাতি করে উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করেন তারা। তাদের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও উচ্ছৃঙ্খলভাবে প্রবেশ নিয়ে নবনির্বাচিত শিক্ষক নেতারা প্রশ্ন তোলেন।
এ সময় শিক্ষকদের উদ্দেশে কর্মকর্তা জাকির, চাকরিপ্রার্থী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, 'চিলস্নাইতেছেন কেন আপনারা, চিলস্নাইতেছেন কেন? আপনারা গুন্ডামি করেন। আমাদের আইন শেখান, কোথায় লেখা আছে এখানে আসা যাবে না। 'চিলস্নাইতেছেন কেন, থাপড়াইয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু।'
কর্মকর্তা জাকির ছাড়াও শিক্ষকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও গালমন্দ করেন কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশী রেজা-এ ইলাহি, মেহেদি হাসান, ইকবাল হোসেন খান, রকিবুল হাসান রকি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিপ্রার্থী ও কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কাজী নজরুল ইসলাম হলের সাবেক সভাপতি ইমরান হোসেন, পার্থ সরকার, অনুপম বাঁধনসহ (প্রকাশ তবলা বাঁধন), অনেক সাবেক শিক্ষার্থী শিক্ষকদের উদ্দেশে তেড়ে যান। এ ছাড়া তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে নিয়মিতই অশালীন মন্তব্য করে।
কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে ক্ষোভ জানিয়ে শিক্ষক সমিতির অর্থ সম্পাদক ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, 'উপাচার্য লালন করছে এক্স স্টুডেন্ট। ভিসি কক্ষ তার দুর্গ।'
ক্যাডার বাহিনী : প্রক্টরিয়াল বডি, কতিপয় কর্মচারী-কর্মকর্তা, অছাত্র-ছাত্র! সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষক হামলা। শিক্ষকরা কি কথা বলতে পারবে না?'
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, 'এমন কোনো কিছু আমি বলিনি। ওই মুহূর্তে সবাই হইচই করছিল, কে কাকে কি বলেছে আমি জানি না।'
কর্মকর্তাদের অফিস সময় বিকাল ৪টায় শেষ হয়ে গেলেও সেখানে জাকির হোসেনের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ভিসি স্যারের সঙ্গে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মিটিং ছিল। সেজন্য আমরা ভিসি স্যারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলাম।' তবে উপাচার্য দপ্তরের কর্মকর্তা হোসাইন মোর্শেদ ফরহাদ জানান, 'উপাচার্যের সঙ্গে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল না।'
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, 'আমাদেরও হু আর ইউ বলেছে, অপমান করেছে, হামলা করার চেষ্টা করেছে। একজন কর্মকর্তা কিভাবে এমন আচরণ করতে পারে? আমরা এখানে এসেছি উপাচার্যের কক্ষে এসেছি উপাচার্য স্যারের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, 'ভিসি দপ্তরে হট্টগোল হয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি সেটা সমাধানের চেষ্টা করেছি।' অছাত্ররা ভিসি দপ্তরে এসে ঝামেলা করতে পারে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখানে কেউ অছাত্র আছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা যদি কারও বিরুদ্ধে অছাত্রের অভিযোগ পাই আমরা ব্যবস্থা নেব। আর এখানে যারা আছে তারা অনেকে সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তারা এখানে যে পরিস্থিতি, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তারা আসতে পারে।
মেহেদী হাসান বলেন, 'শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর আমরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যাই। উপাচার্য আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন না জানিয়ে বলেন, 'কিসের শিক্ষক সমিতি! তখন আমরা স্যারকে বোঝানোর চেষ্টা করি দেখা করার বিষয়ে। তখন তিনি আমাকে বলেন আপনি একজন মিথ্যাবাদী। ওই মুহূর্তে রুমের ভেতর থেকে কেউ একজন কল দিলে কর্মকর্তা জাকির হোসেনসহ কিছু অছাত্র ও বহিরাগতরা এসে উপাচার্যের রুমে জোরপূর্বক প্রবেশ করে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন এবং অশালীন মন্তব্য করেন।'