চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রুবেল দে নামে এক বন্দির অস্বাভাবিক মৃতু্যর ঘটনায় সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন ও বোয়ালখালী থানার ওসিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে মামলার আবেদন করেন নিহত রুবেল দের স্ত্রী পুরবী পালিত। আদালত মামলার আবেদন জমা নিয়ে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী শুনানির জন্য রেখেছেন।
মামলায় সিনিয়র জেল সুপার মঞ্জুর হোসেন ও বোয়ালখালী থানার ওসি আছহাব উদ্দিন ছাড়াও বোয়ালখালী থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম, এসআই এস এম আবু মুসা, এসআই মাঈন উদ্দিন, এসআই সাইফুল ইসলাম, কনেস্টবল কামাল, কনেস্টবল আসাদুলস্নাহ, কনেস্টবল রিযাউল জব্বার, ডিউটি অফিসার বোয়ালখালী থানা, জেলার এমরান হোসেন মিয়া, ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়া, আখেরুল ইসলাম, সুমাইয়া খাতুন, ইব্রাহিম, ওয়ার্ড মাস্টার পদ্মা ১৫।
মামলার আবেদনে উলেস্নখ করা হয়, চট্টগ্রাম বোয়ালখালী এলাকার রুবেল দেকে ২৭ জানুয়ারি নিজবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। পরে রুবেলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পরিবারের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঘুষ দারি করে পুলিশ। অন্যথায় রুবেলকে ৫০০ লিটার চোরাই মদ দিয়ে চালান দেওয়া হুমিক দেয় পুলিশ।
পুলিশের দাবি পূরণ করতে না পারায় বিভিন্নভাবে শরীরিক নির্যাতন করে ২০০ লিটার চোরাই মদ দিয়ে আদালতে সোপর্দ করে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। আত্মীয়স্বজন রুবেলকে কারাগারে দেখতে গেলে তারা তাকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসে। দেখা যায় রুবেলের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। পরে রুবেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য জেল সুপারকে আদেশ প্রদানের জন্য জুডিসিয়াল আদালতে আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিত জেল সুপারেক নির্দেশ দেন।
পরবর্তী দিন ৫ ফেব্রম্নয়ারি সকাল ৮টায় খবর পায় রুবেল দে মারা গেছেন, তার মরদেহ চমেক মর্গে আছে। পরে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত (নিবারন) আইন-২০১৩ এর ১৫(২) ধারায় বোয়ালখালী থানার পুলিশ কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের একাধিক কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার দরখাস্তটি পেশ করেন ভিকটিম রুবেল দের স্ত্রী পুরবী পালিত।
মামলার আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী অজয় ধর বলেন, 'গত ৪ জানুয়ারি ষষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জেল সুপারকে আমার মক্কেল রুবেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন, আর রাতেই তার অস্বাভাবিক মৃতু্য হয়। জেল সুপার এই দায় এড়াতে পারেন না, কারণ আমার মক্কেল গ্রেপ্তারের সময় পুরোপুরি সুস্থ ছিল।
তিনি আরও বলেন, মামলায় নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃতু্য (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত মামলার আবেদন জমা নিয়ে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী শুনানির জন্য তারিখ দেবেন বলেছেন।
মামলা বাদিনী পুরবী পালিত বলেন, 'পুলিশ যখন নিয়ে যায় আমার স্বামী তখন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। পরে দেখি তার শরীরের বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গোপন অঙ্গেও আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। আমি এখন কি করব তিনটা সন্তান নিয়ে। স্বামী মারা যাওয়ার ৭ দিনের মাথায় আমার আরেকটি নবজাতক হয়েছে। পরিবারের একমাত্র ভরসারস্থল ছিল আমার স্বামী। আমরা এখন কিভাবে চলব। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।'