বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ- বিপিএলের নেট অনুশীলনের সময় মাথায় আঘাত পেয়ে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
তবে সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা জানিয়েছে, এখনো খুব একটা শঙ্কা তারা দেখছেন না। তবে এসব আঘাতে পরিস্থিতি খারাপ হতে সময় লাগে না।
মুস্তাফিজুর রহমান এবারের বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লীগে খেলছেন কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে।
কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের ফিজিও এসএম জাহিদুল ইসলাম সজল জানিয়েছেন, "প্রাকটিসের সময় একটি বল এসে মাথায় আঘাত করার পর মোস্তাফিজের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। তাৎক্ষণিকভাবে রক্ত পড়া থামাতে ব্যান্ডেজ করা হয়"।
রোববার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নেট প্রাকটিসের সময় আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি।
তবে, হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও মোস্তাফিজকে নিয়ে স্বস্তির খবর দিয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ- বিপিএলে মুস্তাফিজের দল কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স।
ঐ দুর্ঘটনার পর গণমাধ্যমের কাছে একটি বার্তা পাঠান দলের ফিজিও এসএম জাহিদুল ইসলাম।
সেখানে তিনি জানিয়েছেন, "ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে করা হয় সিটি স্ক্যান। সিটি স্ক্যান রিপোর্টে কোনো অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ পাওয়া যায়নি। মূলত মাথায় আঘাতের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হলেই থাকে চিন্তা"।
চট্টগ্রামের ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক ডক্টর মঈনুদ্দীন এম ইলিয়াস বিকালে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ব্রেন ইনজুরির ক্ষেত্রে যে কোনো আঘাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো দিকে টার্ন করতে পারে। তাই এখনো নিবিড় পর্যবেক্ষণের রাখা হয়েছে মুস্তাফিজকে।
মাথায় বল লেগেই শুরু হয় রক্তক্ষরণ
রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছিল কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স। পাশাপাশি নেটে ব্যাট করছিলেন লিটন দাস ও ক্যারবিয় ব্যাটসম্যান ম্যাথু ফর্ড। এই সময় মোস্তাফিজ ও নেট বোলাররা বল করছিলেন।
বল শেষ করে মুস্তাফিজ আবার বোলিং শেষে ফেরত আসার সময় আরেকজন বোলারের বলে পাশের নেট থেকে ম্যাথু ফর্ডের শট এসে লাগে মোস্তাফিজের মাথার বাম পাশের পেছনের অংশে। এই সময় তার মাথা থেকে রক্ত পড়তে দেখা যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে সময়ের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, বল এসে তার মাথায় আঘাতের পর সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন মুস্তাফিজ। তার কাছে দৌড়ে আসেন কুমিলস্নার কোচ সালাউদ্দিন আহমেদ। এ সময় মুস্তাফিজের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।
মাঠে এই প্রাকটিস সেশনের খবর সংগ্রহ করছিলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইকরাম হোসাইন। তিনি বলেন, "বলটি যখন মুস্তাফিজের মাথায় আঘাত করে তা বেশ জোরেই আঘাত করেছিল। তখনই সবাই ছুটে যায় তার কাছে। মাটিতে বসে পরে মুস্তাফিজ"।
মাঠ থেকেই হাসপাতাল
গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মাথায় আঘাত পাওয়ার পর শুরুতে দলের ফিজিও দেন প্রাথমিক চিকিৎসা, মাথা দেওয়া হয় আইস ব্যাগ। কিন্তু আইস ব্যাগ ও ব্যান্ডেজ দিয়ে তখন রক্ত বন্ধ করা যাচ্ছিল না।
পরে দ্রম্নতই অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। সেই অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করে মাঠের বাউন্ডারির কাছাকাছি। মাঝ মাঠ থেকে স্ট্রেচারে করে দ্রম্নত বের করা হয় মুস্তাফিজকে। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সরাসারি নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রামের ইম্পেরিয়াল হাসতাপালে।
এই ঘটনার পরপর অনেকটা বিমর্ষ দেখা যায় প্রাকটিস সেশনে থাকা কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সকে। গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, ওই ঘটনার পর রোববার আর প্রাকটিস করেনি মুস্তাফিজের দল কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স।
হাসপাতলে ভর্তির পর সিটি স্ক্যান করার পর কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিটি স্ক্যান রিপোর্টে তার মাথায় কোনো অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ পাওয়া যায়নি।
তবে মাথা ফেটে যাওয়ায়, সেলাই দেওয়া হয়েছে সেখানে। যেহেতু মাথার আঘাত তাই আগামী কয়েক ঘণ্টা মুস্তাফিজকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের রাখার কথা জানিয়েছেন কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স।
গণমাধ্যমের খবর বলছে, তার এই চোট আরও গুরুত্বর হলে তাকে পাঠানো হতে পারে রাজধানী ঢাকায়।
যা বলছেন চিকিৎসক
ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক ড. মঈনুদ্দীন এম ইলিয়াস কথা বলেন গণমাধ্যমের সাথে।
তিনি জানান, "এটা একটা ইনজুরি। তার মাথায় পাঁচটা সেলাই লেগেছে। তাকে হাসপাতালে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। আমরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর আবার সিটি স্কান করব। ব্রেনে কোন রিপিটেড হ্যামারেজ আছে কী না সেটা দেখার জন্য"।
প্রাথমিকভাবে আরও দু'য়েক দিন রাখা হবে এই হাসপাতালে। সেখান থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে আবারো সিটি স্ক্যান করানোর কথা জানান ওই চিকিৎসক।
ইলিয়াস বলেন, রোববার দুপুর থেকে মুস্তাফিজ অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছেন। সবার সাথে মেশার জন্য ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে"।
আসার পর তার কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখেন নি ঐ চিকিৎসক। তিনি বলেন, ব্রেন ইনজুরির ক্ষেত্রে যেটি হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো জায়গায় যে কোনো দিকে টার্ন করতে পারে। এটা বা থেকে ডানেও যেতে পারে। যেহেতু এটা ব্রেন।
তবে এখন পর্যন্ত সিটি স্ক্যান ও ক্লিনিক্যালি মুস্তাফিজের খারাপ কিছু দেখিনি বলেও জানান এই চিকিৎসক।
এবারের বিপিএলে মিরপুর সিলেট কিংবা চট্টগ্রামে সব জায়গায় একই মাঠ ভাগাভাগি করে প্রাকটিস করছে। রোববার কুমিলস্না যখন একই মাঠে প্রাকটিস করছিল তার পাশেই প্রাকটিস করছিল রংপুর রাইডার্স। এর পাশে আউটার স্টেডিয়ামেও প্রাকটিস চলছিল অন্য একটি দলের।
মাঠের মধ্যে অনেকটা সংকীর্ণ জায়গায় প্রাকটিস হওয়ার কারণে এমন হতে পারেও বলা হচ্ছে গণমাধ্যমের খবরে।
এবার বিপিএলে এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচ খেলেছেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজ। ওভার প্রতি ৯.৫৬ করে রান দিয়ে ৯ ম্যাচে মোস্তাফিজের শিকার ১১ উইকেট। মোস্তাফিজের বোলিং আক্রমণই এবার বিপিএলএ কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সের বড় শক্তি।