অমর একুশে বইমেলা আরও দুই দিন বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। প্রতিষ্ঠানটি মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও দিয়েছে। এতে আগামী ১ ও ২ মার্চ যথাক্রমে শুক্র ও শনিবার সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।
শনিবার এই চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, 'মেলার স্টল বরাদ্দ পেতে বিলম্ব হওয়ার কারণে এবং প্রথম দিকেই বৃষ্টি হওয়ার কারণে প্রকাশকরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এজন্য প্রকাশকদের চাওয়া মেলা যেন দুদিন বাড়ানো হয়।'
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা চিঠি পেয়েছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আলোচনা করে এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত হয়, তা জানানো হবে।'
এদিকে, বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মেলার ১৮তম দিন রোববার নতুন বই এসেছে ৮৩টি। এদিন বিকাল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বরোচিষ সরকার। আলোচনায় অংশ নেন লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং এম আবদুল আলীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল চৌধুরী।
প্রাবন্ধিক বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় নির্মাণ বিষয়ক গবেষণাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন বিভিন্ন সংকলনগ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনার মধ্য দিয়ে। তিনি তার প্রবন্ধগুলোতে এমন সব প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন যা সমকালের মুসলমান বাঙালির হীনম্মন্যতা দূর করে, বাঙালির সমন্বিত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করে, সাংস্কৃতিক বহুত্বের মধ্যে উদার মানবিক দিকগুলোকে সামনে নিয়ে আসে, বাঙালির আত্মপরিচয়ের মূল বিন্দুগুলোকে স্পর্শ করে, সর্বোপরি, বাঙালির জাতীয়তাবাদী উপাদানগুলো সামনে তুলে ধরে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তার কর্মময় জীবনে জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় নানা দুর্যোগে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পরিমিতিবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, আন্তরিকতা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা তার জীবনচর্যা ও সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। আজীবন তিনি বাঙালির সংস্কৃতির শেকড়ের সন্ধান করেছেন। তার মূল্যবান চিন্তা ও জ্ঞানসমৃদ্ধ প্রবন্ধ দেশের বাইরেও সমাদৃত হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে কামাল চৌধুরী বলেন, 'জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বহুমাত্রিক ও বর্ণাঢ্য জীবনযাপন করেছেন। সমগ্র জীবনব্যাপী তিনি বাঙালির মুক্তি ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন এবং এই স্বপ্ন আমাদের সবার মাঝে সঞ্চারিত করেছেন। তিনি তার পান্ডিত্য, জ্ঞান ও কর্মের মধ্য দিয়ে তরুণ সমাজকে পথ দেখাবেন।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, শিশুসাহিত্যিক রোমেন রায়হান, কবি সৈকত হাবিব এবং গীতিকবি মনোরঞ্জন বালা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন- কবি কামাল চৌধুরী, মুস্তাফিজ শফি, নজমুল হেলাল, মাহবুবা ফারুক, রাকীব হাসান, রিশাদ হুদা এবং নাজমা আহমেদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মো. শওকত আলী, মো. এনামুল হক, শিরিন সুলতানা, সুপ্রভা সেবতী, অনিকেত রাজেশ ও ফেরদৌসী বেগম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মামুনুর রশীদের রচনা ও নির্দেশনায় 'কহে ফেসবুক' নাটক পরিবেশন করে 'আরণ্যক নাট্যদল'।
আজকে সময়সূচি
আজ ৬ই ফাল্গুন, সোমবার। অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩:০০টায় এবং চলবে রাত ৯:০০টা পর্যন্ত। এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : হাসান আজিজুল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মোজাফ্ফর হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ফারুক মঈনউদ্দীন এবং মহীবুল আজিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী।