ছুটির দিনে লোকারণ্য বাণিজ্য মেলা

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ছুটির দিন শনিবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ক্রোকারিজ পণ্য কিনছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা -ফোকাস বাংলা
আর মাত্র তিনদিন পর পর্দা নামবে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসরের। শেষ ছুটির দিনে তাই ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে মেলা প্রাঙ্গণে। মেলার শেষ সময়ে এসে ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। এদিকে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ায় হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদের মুখে। শনিবার বিকালে সরেজমিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এমনই চিত্র দেখা যায়। পরিবার নিয়ে মেলায় আসা রাকিবুল হাসান বলেন, এতদিন সুযোগ থাকলেও মেলায় আসা হয়নি। কেননা শেষ সময় এলে তুলনামূলক কম দামে বিভিন্ন পণ্য কিনতে পাওয়া যায়। তাই শেষ ছুটির দিনে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি কেনাকাটা করতে মেলায় চলে এলাম। মন্টু ঘোষ নামে আরেক ক্রেতা বলেন, 'গতবারও শেষ সময় মেলায় আসা হয়েছিল। আজ (শনিবার) শেষ ছুটির দিন হলেও জিনিসপত্রের দাম এখনো কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। যেখানে দাম কম পাব সেখান থেকে কিনব। ব্যবসায়ীরা বলেন, মেলার শুরুর দিকে ক্রেতার চাপ কম ছিল। এখন বাড়লেও গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে আশা করছি, শেষের তিনদিন আরও ক্রেতা মেলায় আসবেন। মেলার সময় যদি আরও কিছুদিন বাড়ানো হতো তাহলে আমরা আরেকটু বেচাবিক্রির সুযোগ পেতাম। মেলার টিকিট ইজারাদার আবদুলস্নাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করেছেন এক লাখের বেশি মানুষ। গত বছরের তুলনায় এবার মেলার প্রথমদিকে কম ক্রেতা এলেও শেষের দিকে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ে। আশা করছি, শেষ তিনদিন মেলায় আশানুরূপ লোক সমাগম ঘটবে। মেলার পরিচালক বিবেক সরকার বলেন, গতবারের তুলনায় এবারের মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর বেশি ভিড় রয়েছে। মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীর জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আশা করছি, শেষ কয়েকদিন মেলায় আরও মানুষের সমাগম ঘটবে। ২০ ফেব্রম্নয়ারি মেলা শেষ হবে। মেলার সময় বাড়ানো হবে না বলেও জানান তিনি। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করে যাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে মেলা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রবেশ ফি ধরা হয়েছে বড়দের জন্য ৫০ টাকা, শিশুদের ২৫ টাকা। সময় বাড়ানোর দাবিতে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ এদিকে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসরের মেলার সময় তিনদিন বাড়ানোর দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার দুপুর ১টায় বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সামনে বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে তারা এ আন্দোলন করেন। এ সময় তারা ২১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত তিনদিন সময় বাড়ানোর দাবি জানান। বিক্ষোভকালে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ব্যবসায়ীরা এ বছর মেলা নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়ায় লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মেলা গত ১ জানুয়ারি শুরু করার পরিবর্তে ২১ জানুয়ারি মেলা উদ্বোধন করা হয়। আবার ২৬ জানুয়ারি সামরিক বাহিনীর ম্যারাথন থাকার কারণে ৩০০ ফুট রাস্তা বন্ধ রেখে অনুষ্ঠান করা হয়। এতে ওইদিন কোনো লোকসমাগম মেলাতে পারেনি। প্রতি বছর বাণিজ্য মেলা শেষে একুশে বইমেলা শুরু হয় কিন্তু এ বছর বইমেলা না পিছিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে যার কারণে লোকসমাগম একেবারেই মেলাতে কম হচ্ছে। বিশ্ব ইজতেমার কারণে মেলায় জনগণ, পর্যটক আসতে পারেনি। এতে মেলার ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তারা আরও বলেন, উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে অতিমাত্রায় শৈত্যপ্রবাহের কারণে মেলার নির্মাণকাজ সমাপ্ত করতে বিলম্ব হয়। আবার গত ১৫ ফেব্রম্নয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কারণে লোকসমাগম কম হচ্ছে। অব্যবস্থাপনার কারণে মেলার বাইরে আরেকটি মেলা দৃশ্যমান হচ্ছে যার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আকর্ষণ কমছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ী-বান্ধব সরকারের কাছে বিনীত প্রার্থনা মেলার সময় তিনদিন বাড়ানোর দাবি পূরণ করে আমাদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাবেন। এর আগে মেলার সময় বাড়ানোর বিষয়ে মেলার পরিচালক বলেন, আপাতত মেলার সময় বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আপাতত ছুটির দিন বাদেও আজ থেকে মেলার সময় ১ ঘণ্টা বাড়িয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত করেছি। আগামীতে আরও কিছু মেলা আছে। তাই এই মুহূর্তে মেলার সময় বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।