১৩তম দিনে এসেছে নতুন ১১০টি বই

প্রাণবন্ত বইমেলায় বসন্তের ছোঁয়া

প্রাণের বইমেলা

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

বীরেন মুখার্জী
অমর একুশে বইমেলায় বসন্ত সাজে এসেছিলেন বইপ্রেমীরা। ছবিটি মঙ্গলবার তোলা -ফোকাস বাংলা
মঙ্গলবার বইমেলায় যেন বসন্তের আগমনী ছোঁয়া লেগেছিল। মেলায় আসা নারীদের অনেকের পরনে হলুদ, কমলা, বাসন্তিসহ নানা রঙের শাড়ি আর খোঁপায় গাঁদা গোলাপ ফুল মেলাকে করে তুলেছিল আরও রঙিন। ভাষার মাস ফেব্রম্নয়ারির প্রায় মাঝামাঝি সময়ে এসে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বাঙালির প্রাণের মেলা, অমর একুশে বইমেলা। এদিন মেলা শুরু হয় বিকাল ৩টায় এবং চলে যথারীতি রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিকে বইমেলায় প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন বই। মঙ্গলবার মেলার ত্রয়োদশতম দিনে নতুন বই এসেছে ১১০টি। সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার মেলার দুয়ার খোলার পর থেকেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। সেই রেশ দেখা গেছে শেষেও। ভালোবাসা দিবসের আগের দিন ক্রেতা-দর্শনার্থীতে পূর্ণ হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ। তবে সেই অনুযায়ী বিক্রি বাড়েনি বলে জানালেন বিক্রেতারা। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার বিকালে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্‌' শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমাদ মোস্তফা কামাল। আর আলোচনায় অংশ নেন হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ১ হরিশংকর জলদাস এবং ফারজানা সিদ্দিকা। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। প্রাবন্ধিক বলেন, 'সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্‌ যেভাবে তার পরবর্তী প্রজন্মের লেখকদের কাছে এক অনিবার্য প্রসঙ্গ হয়ে উঠলেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। ১৯৪০-এর দশকে পূর্ব বাংলার ভিন্নতর এক কণ্ঠস্বর নির্মাণের প্রয়াস যারা নিয়েছিলেন, সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্‌ তাদের মধ্যে অন্যতম। লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন তীব্র সংবেদনশীল, সচেতন, সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী এবং বহুমাত্রিক। সাদামাটা গল্প বলার ছলেই তিনি পাঠকদের নিয়ে গেছেন এক দার্শনিক উচ্চতায়, দৃশ্যমান করে তুলেছেন একটি জনগোষ্ঠীর সামষ্টিক চিন্তা-বিশ্বাস-সংস্কারের বিমূর্ত রূপ।' আলোচকরা বলেন, 'জনজীবনের ভাষাকেই সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্‌ তার সাহিত্যের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সমাজের ক্ষমতা ও ক্ষমতা-কাঠামোর সঙ্গে জনগণের মনোজগতের পারস্পরিক সম্পর্ক বা দ্বন্দ্বটি তার সাহিত্যে বিশেষ রূপ লাভ করেছে। সমাজের গভীরে দৃষ্টিপাত করে প্রান্তিক মানুষের সংকটকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তিনি। সমাজ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় আকস্মিক ছন্দপতন তার গল্পের উপজীব্য হয়েছে। সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্‌র প্রাসঙ্গিকতা এখানেই যে তিনি অতীতের চরিত্রগুলোর সঙ্গে আমাদের একটি নিবিড় যোগসূত্র তৈরি করে দেন।' সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, 'সাহিত্যের ভেতর দিয়ে জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরার নিপুণ কারিগর সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্‌। তার সাহিত্যে তিনি সমকালীন জনগোষ্ঠীর অনুভূতির কাঠামোকে ধারণ করেছেন। ফলে কেবল আমাদের সময়েই নয় ভবিষ্যতেও সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্‌ ও তার সাহিত্যকর্ম অনিবার্য এবং প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবে।' লেখক বলছি মঞ্চ এদিকে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন নাট্যকার ও অনুবাদক খায়রুল আলম সবুজ, গবেষক আফরোজা পারভীন, কবি শিহাব শাহরিয়ার এবং শিশুসাহিত্যিক কামাল হোসাইন। এছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদ হায়দার, হেনরী স্বপন, শিহাব শাহরিয়ার, মতিন রায়হান, জুনান নাশিত, টিমোনী খান রিনো, সাকিরা পারভীন এবং মু. আহসান উলস্নাহ ইমাম খান তমাল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নাসিমা খান বকুল, ফয়জুলস্নাহ সাঈদ এবং চন্দ্রিমা দেয়া। এছাড়াও ছিল তুনাজ্জিনা রহমত মৌরীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'গীতিকবি আনিসুল হক স্মৃতি পরিষদ', 'হামিবা সাংস্কৃতিক একাডেমি' এবং সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনীর পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন 'প্রিয়দর্শিনী'র পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী মো. হারুনুর রশিদ, মিতা চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী সরকার, আফরোজা খান মিতা, শহীদ কবীর পলাশ, মো. মজিবুর রহমান, ফারহানা ফেরদৌসী তানিয়া, মাহবুবা রহমান এবং এম এম উম্মে রুমা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন পুলিন চক্রবর্তী (তবলা), রবিনস্‌ চৌধুরী (কী-বোর্ড), মো. মামুনুর রশিদ (বাঁশি), ফিরোজ খান (সেতার)। আজকের অনুষ্ঠান আজ ১ ফাগস্নুন অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিনে মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাফাত আলম মিশু। আলোচনায় অংশ নেবেন সুজাতা হক এবং মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী। \হ