মায়ের ডাকের সংবাদ সম্মেলন
'গুম' হওয়া রহমত উলস্নাহকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি মায়ের
প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
'আমার ছেলে রহমত উলস্নাহ গুম হয়েছে। ছেলেকে আমার বুক থেকে নিয়ে গেছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় আছে। ছেলেকে ফেরত চাই।' সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন মা মমতাজ বেগম।
গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন 'মায়ের ডাক'-এর আয়োজনে 'আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গুম হওয়া রহমত উলস্নাহকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে' এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
প্রায় পাঁচ মাস ধরে ২০ বছর বয়সি মোহাম্মদ রহমত উলস্নাহর কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না বলে জানান তার মা। তার অভিযোগ,র্ যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাকের একটি দল তার ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে।
রহমত উলস্নাহর মা বলেন, তার ছেলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারও সঙ্গে কোনো বিবাদও নেই। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'কিছুই আমি জানি না। কোনো খোঁজ দেয় না।'
রহমত উলস্নাহর বোন রাজিয়া আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাদের বাড়ি মানিকগঞ্জের ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামে। রহমত উলস্নাহ বৈদু্যতিক মিস্ত্রির কাজ করতেন। তাদের বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তারা তিন ভাইবোন।
রাজিয়ার অভিযোগ, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত প্রায় ১২টায়র্ যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাকের একটি দল তাদের বাড়িতে যায়। রহমত উলস্নাহর জ্বর থাকায় তিনি মায়ের পাশে শুয়ে ছিলেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বাড়ি এলে তার মা দরজা খুলে দেন। এ সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কয়েকজন সদস্য ঘরের ভেতরে ঢুকে রহমত উলস্নাহকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। কারণ জানতে চাইলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানায়।
রহমত উলস্নাহকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় মমতাজ বেগমও পেছন পেছন যান। তিনি বাইরের্ যাবের একটি গাড়ি এবং একটি হায়েস মাইক্রোবাস দেখতে পান। মাইক্রোবাসটিতে রহমতকে তোলা হয়।
রাজিয়া আরও অভিযোগ করেন, পরদিন ৩০ আগস্ট রহমত উলস্নাহর খোঁজে তারা মানিকগঞ্জর্ যাব ক্যাম্পে গেলে ধামরাই থানায় খোঁজ নিতে বলা হয়। কিন্তু ধামরাই থানা কোনো তথ্য দেয়নি। নবীনগরর্ যাব ক্যাম্প ও সাভার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়েও তারা খোঁজ নিতে যান। ধামরাই থানা প্রথমে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে নেয়নি অভিযোগ করে পরিবার জানান, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর গত ৭ অক্টোবর জিডি নেওয়া হয়।
রাজিয়া আরও বলেন, তারার্ যাব, ডিবির কার্যালয় এবং কারাগারে ভাইয়ের খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু কোনো হদিস পাননি। তিনি বলেন, 'ভাই যদি কোনো অপরাধে যুক্ত থাকে, তবে প্রচলিত আইনে বিচার হোক। কিন্তু গুম করে রাখবে কেন?' তিনি সুস্থ অবস্থায় ভাইকে ফেরত চান।
তাদের অভিযোগের ব্যাপারের্ যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কারও সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে গুম হওয়া লক্ষ্ণীপুর সদর উপজেলা বিএনপির (পূর্ব) সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের ছেলে ইমন ফারুক, বিএনপি নেতা মো. কাওসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া মিম এবং নিহত ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার বক্তব্য দেন।
মায়ের ডাকের মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম এবং সংহতি প্রকাশ করেন মনোচিকিৎসক আবদুল হক পিনাক।