আওয়ামী লীগের বহুমাত্রিক বিশ্ব রেকর্ডের মাঝে সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ১০৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন পেছানোর দৃষ্টান্তহীন আরেকটি নতুন বিশ্বরেকর্ড বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার সকালে নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকান্ডের এক যুগ পূর্ণ হলো। এটি অত্যন্ত পীড়াদায়ক যে- এক যুগেও এই বহুল আলোচিত হত্যাকান্ডের প্রকৃত তদন্ত করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রকৃত তদন্তের বিষয়টি। হত্যার পর সাগর-রুনির খুনিরা বাসা থেকে ল্যাপটপ নিয়ে যায়, অথচ সেই ল্যাপটপ ১২ বছরেও উদ্ধার হয়নি। ঠিক যেমন উন্মোচন হয়নি, সেই ল্যাপটপে কী গোপনীয় বিষয় ছিল, তার কোনো তথ্য।'
তিনি বলেন, 'রাজধানী ঢাকাতেই নিজ বাসায় সাংবাদিক দম্পতির খুনের ঘটনার পর, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। দুই দিন পর পুলিশের আইজি বলেছিলেন, তদন্তের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। অবিশ্বাস্য বাস্তবতা হলো, মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার তারিখ এখন পর্যন্ত ১০৫ বার পিছিয়েছে। দুর্নীতি-দুঃশাসন-দুর্বৃত্তায়নে আওয়ামী লীগের বহুমাত্রিক বিশ্ব রেকর্ডের মাঝে, একটি হত্যা মামলায় ১০৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন পেছানোর দৃষ্টান্তহীন আরেকটি নতুন বিশ্বরেকর্ড।'
তিনি বলেন, 'আইন ও সালিশ কেন্দ্র ২০২২ সালে জানায়, বাংলাদেশ জুড়ে প্রায়ই হত্যা, গুম, খুন ও অপহরণসহ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে এবং ১০ বছরে এই ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন ৩০ সাংবাদিক, যার বিচার আজও হয়নি। গত ১৫ বছরে সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতনের যে ৪ হাজারটিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে, এর প্রায় প্রতিটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের টেন্ডারবাজ, তদবিরবাজ ও দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীরা জড়িত বলে প্রতীয়মান।'
তিনি বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের জন্য যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী, তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি বা প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেই কারণেই বিচারের আওতামুক্ত থাকে। আওয়ামী আইন ও বিচার এদের স্পর্শ করতে পারে না। এভাবেই দেশে তৈরি করা হয়েছে এক নৈরাজ্যময় ভীতিকর পরিবেশ। সাংবাদিকদের ওপর সংঘঠিত এসব হামলা-মামলা ও নিপীড়ন-নির্যাতন প্রতিরোধে, প্রশাসনিক ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের সরাসরি প্রশয় প্রমাণ করে যে- জাতীয় থেকে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাধররা নিজেদের দুর্নীতি-অন্যায় লুকিয়ে রাখতে বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের এক যুগ আজ পেরিয়ে গেল। অথচ আজও তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলো না, খুনিদেরও বিচারের আওতায় আনা হলো না এবং বিচারের নূ্যনতম উদ্যোগ নেওয়া হলো না। বিএনপির পক্ষ থেকে, আমরা এই স্বেচ্ছাচারী রহস্য উন্মোচনের দাবি জানাই, সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাই। আমরা চাই, প্রতিটি সাংবাদিকের নিরাপত্তা, তাদের পেশাগত স্বাধীনতা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সাংবাদিক নেতা সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গণি চৌধুরী, মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।