রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের
যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে শুধু রাশিয়ার সঙ্গে আমরা বন্ধুত্ব চাই না
প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রম্নতা করে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে বাংলাদেশ চায় না জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'কারও সঙ্গে শত্রম্নতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চায় বাংলাদেশ।'
সোমবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্টিটস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে চায় রাশিয়া। এ ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক আগামীতে আরও বাড়বে।'
বৈঠকে বাংলাদেশের যেসব পণ্য রাশিয়ায় রপ্তানি হয় সেগুলো আরও সহজলভ্য করারও অনুরোধ করেছে রাশিয়া।
মন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য নিতে চায় রাশিয়া। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করতে চায় তারা। তবে আমেরিকাকে সরিয়ে শুধু রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব আমরা চাই না। কারও সঙ্গে শত্রম্নতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চায় বাংলাদেশ।'
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, 'নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা ঢুকতে দেওয়া হবে না, যারা আছে তারাই বোঝা এখন। তাই নতুন করে রোহিঙ্গা আনার প্রশ্নই আসে না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কারণে এমনিতেই সমস্যায় আছে দেশ।'
'মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে'
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে আভাস দিয়ে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলন, 'মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়লে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত কাউকে সেখানে দেখা যেতে পারে।'
১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যের নতুন সরকার শপথ নেয়। বর্তমানে মন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন ২৫ জন; বাকি ১১ জন প্রতিমন্ত্রী।
মন্ত্রিসভার আকার বাড়ার গুঞ্জনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'এটা প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন। তবে এখানে সময়মতো কিছু জায়গায়, যেমন শ্রম মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এগুলোতে কোনো না কোনো সময় মন্ত্রী আসবে। এটা আমার মনে হয় সংরক্ষিত মহিলা আসনগুলো আসার পর মন্ত্রী আসতে পার। সেখানে মহিলাও আসতে পারে। সেই হিসেবে এর পরে চিন্তা-ভাবনা। প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে, তিনি এটা করবেন।'
'মেট্রোরেলের বগি বাড়বে না'
মেট্রোরেল চলাচলে মাঝের বিরতি (ফ্রিকোয়েন্স) দুই মিনিট করে কমানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে বগির সংখ্যা বাড়বে না- এ কথা জানিয়ে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশে মেট্রোরেল চালু করা যাবে- এটি কয়েক বছর আগে স্বপ্নের মতো ছিল। বিশ্বের কোনো দেশে মেট্রোরেলের বগি পাঁচের বেশি না। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ছয়টি কাজ করছে। এটা ব্যবস্থা (ম্যানেজ) করা হয়েছে। এটি তো একটি কারিগরিসংক্রান্ত বিষয়। এটা সাধারণ রেলওয়ে না। তবে ফ্রিকোয়েন্সি দুই মিনিট করে কমানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।'
'বিএনপির আন্দোলনে কোনো লাভ নেই'
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বিএনপির আসলে এখন যে লিফলেট বিতরণ, এটা একটা অ্যাকশন প্রোগ্রাম, এই আন্দোলনে কোনো লাভ নেই। দেশে ইসু্যভিত্তিক আন্দোলনের এটাই যদি চেহারা হয়, তাহলে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি খাদের কত গভীরে সেটাই বোঝা যাচ্ছে।'
বিএনপির ১৩ জন নেতাকর্মী কারাগারে মারা গেছেন বলে দাবি করেছে দলটি, এর জবাবে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'তালিকাটা প্রকাশ করতে বলুন, কবে মারা গেল? কীভাবে মারা গেল? কোন জেলে মারা গেল? কোন কাস্টডিতে মারা গেল? সেই তালিকাটা প্রকাশ করতে বলুন। অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে তো আর লাভ নেই।'
বিএনপিকে এখন আওয়ামী লীগ পাত্তা দিচ্ছে না বলে অনেকেই মনে করছে, আসলে আপনি কি মনে করছেন? জবাবে তিনি বলেন, 'বিএনপিকে পাত্তা দিচ্ছি না বিষয়টা তা না, বিএনপি এখনো বড় দল, তারা এখন নিষ্ক্রিয়। তারা ভুলের চোরাবালিতে আটকে গেছে। তাদের ভুলের খেসারত তাদের দিতে হবে। আমি দল হিসেবে তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি না, করা উচিতও না। বিরোধী হিসেবে আছে থাকবে, কার অবস্থান জনগণের চোখে কখন কি হবে, জনগণ কাকে কি চোখে দেখবে, সেটা এই দেশে সময়ের পরিবর্তনে সবকিছু স্পষ্ট হবে।'
অর্থনৈতিক সংকটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কীভাবে করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি। নতুন মন্ত্রিসভা এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট যারা এ বিষয়টা ডিল করছে তাদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কথা বেশি না বলে বেশি করে কাজ করার জন্য, এই নির্দেশ তিনি সবাইকেই দিয়েছেন। এই মন্ত্রিসভায় সেভাবেই কাজ চলছে।'
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাজার নিয়ন্ত্রণ এটা রাতারাতি ট্রান্সফরমেশন সম্ভব নয় উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'কারণ গোটা বিশ্বের চালচিত্র আমরা সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ নয়। সারা দুনিয়াতেই মূল্যস্ফীতি, ইউরোপে কমে গিয়েছিল সেই ইউরোপে মূল্যস্ফীতি এখন ১০ শতাংশের বেশি। পাকিস্তানে ৬৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতিতে চলে গেছে। সেখানে আমরা এখনো অনেক ভালো আছি। আমরা এখনো তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছি। আমাদের লোক ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে এমন কোনো উদাহরণ নেই। আমরা ক্ষমতায় আছি, সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।