ভারতের মায়া থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ নৌ রুটের উদ্বোধন আজ। এদিন এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত এই নৌ বন্দরটি চালু হতে যাচ্ছে।
ইন্দো-বাংলাদেশ প্রটোকল রুট নং ৫ ও ৬ অর্থাৎ আরিচা-রাজশাহী-সুলতানগঞ্জ-মায়া-ধুলিয়ান সুলতানগঞ্জ অংশের উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
উদ্বোধন উপলক্ষে সুলতানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করেছেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করবেন নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আসাদুজ্জামান আসাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ আব্দুল ওদুদ, রাজশাহী-৪ আসনের সাংসদ আব্দুল কালাম আজাদ।
বিআইডবিস্নউটিএ'র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহম্মেদ মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বিআইডবিস্নউটিএ'র যুগ্ম সচিব সেলিম ফকির।
ইতোমধ্যে উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিআইডবিস্নউটিএ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। এ উপলক্ষে গোদাগাড়ীতে সাজসাজ রব। শুক্রবার রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বন্দর স্থল পরিদর্শন করেছেন। নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, কাস্টমসের কর্মকর্তা, গোদাগাড়ী উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান, গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র নৌরুটের উদ্বোধনী পর্বকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
উদ্বোধনের মধ্য দিয়েই সুলতানগঞ্জ নদী বন্দরের মাধ্যমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘি থানার মায়া ঘাট বা নদী বন্দরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হবে।
নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক রফিকুল ইসলাম সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনের দিন দুপুর ১২টায় সুলতানগঞ্জ হাইস্কুলে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
উদ্বোধনী দিন ভারত থেকে একটি ভেসেলে পাথর আমদানির সম্ভবনা রয়েছে।
নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী দিন থেকে ৫টি ট্রিপ বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই পথে ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, পাথর, মার্বেল, খনিজ বালু ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী বাংলাদেশে আসবে।
অন্যদিকে এই পথে বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র, মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ভারতে যাবে। এসব পণ্য মূলত বিভিন্ন স্থলবন্দরের মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়।
সুলতানগঞ্জ থেকে ময়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত। সারা বছর সুলতানগঞ্জ পয়েন্টে পদ্মায় গভীর পানি থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মায়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪নং জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-মায়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হলে পরিবহণ খরচ অনেকাংশে কমবে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-মায়া ও গোদাগাড়ী ও ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বিপুল বাণিজ্য চালু ছিল। বাংলাদেশ থেকে এই পথে ভারতে বিপুল পরিমাণ পাট রপ্তানি হতো। বর্তমানে রাজশাহীতে প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়। এই মাছ এই নৌপথে ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
ইতোমধ্যেই অনেক ব্যবসায়ী এই নৌ পথ দিয়ে ভারতের সাথে ব্যবসা করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন ফলে এই নৌরুট এই অঞ্চলের সর্বশ্রেণির পেশার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের একটি উৎস হিসেবে কাজ করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।