বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১

জমে ওঠেনি লিটল ম্যাগ চত্বর

নতুন বই এসেছে ৯২টি
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অমর একুশে বইমেলায় রোববার প্রিয় লেখকের বই দেখছেন কয়েকজন পাঠক -যাযাদি

রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন। প্রতিদিনের মতো এদিন দুপুর ৩টায় শুরু হওয়া মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলার অন্য সব অংশে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও এখন পর্যন্ত জমে ওঠেনি লিটল ম্যাগ চত্বর। তবে ছুটির দিন কিছু মানুষের সমাগম মেলে।

এদিকে, রোববার মেলায় নতুন বই এসেছে ৯২টি। এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : কলিম শরাফী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে অবস্থিত লিটল ম্যাগ চত্বর ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় নেই মেলার এ অংশে। যদিও বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, মেলার অন্য অংশ থেকে বরাবরই এ অংশে ভিড় কম থাকে। ছোট কাগজ দোলন স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি আফরোজা আক্তার বলেন, আমাদের স্টলে ১৪টি বই আছে। লোকজন এ চত্বরে কম আসে। তেমন বিক্রি হয় না।

ভিন্নচোখ'র বিক্রয় প্রতিনিধি আবির বলেন, আমি ফেব্রম্নয়ারির ৪ তারিখ থেকে এখানে আছি। আজ একটাও বিক্রি হয়নি। এমনিতে এখানে ক্রেতা কম আসে। সবাই আসা-যাওয়ার কাজে এ চত্বরের পথ ব্যবহার করে।

নান্দনিক ম্যাগের সুদীপ্ত মাহমুদ বলেন, বিক্রয় কম। ক্রেতা আসে না। আজ একটাও বিক্রি হয়নি। আমাদের স্টলে ৩০টির মতো বই আছে।

লিটল ম্যাগ চত্বরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেলায় আসা দর্শনার্থী মিনহাজ তালুকদার বলেন, বইমেলার অন্য সব স্টলে ভিড় থাকলে লিটল ম্যাগ চত্বরে তেমন ভিড় দেখা যায় না?অনেকে জানে না এ চত্বরে কী ধরনের বই পাওয়া যায়। সম্ভবত এ কারণেই এ অংশে তেমন ভিড় থাকে না।

এদিকে, বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার মেলায় নতুন বই এসেছে ৯২টি। এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : কলিম শরাফী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরওয়ার মুর্শেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাহমুদ সেলিম এবং গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রূপা চক্রবর্তী।

অনুষ্ঠানে প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে কলিম শরাফী প্রাতিস্বিক এক নাম। কেবল একজন সংগঠক বা শিল্পীই নন, তিনি ছিলেন প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বিশ শতকের অখন্ড বাংলা, দেশ-বিভাগোত্তর পূর্ববঙ্গ এবং বাংলাদেশের সব পর্বের সব ধরনের সংকট-উত্তরণে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা সবিশেষ স্মরণযোগ্য। তার যাপিত জীবন ও সংগ্রামের মূলে ছিল গণ-মানবচেতনা, মুক্তবুদ্ধি এবং প্রগতিকামিতা। তিনি ছিলেন মানুষের সামষ্টিক কল্যাণপ্রত্যাশী।

আলোচকরা বলেন, আজীবন সংগ্রামী শিল্পী কলিম শরাফী ছিলেন আপসহীন একজন মানুষ। দেশ ও জাতির সংকটে সম্মুখ সারিতে দাঁড়িয়ে তিনি প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রচন্ড বৈরিতা সত্ত্বেও গণমানুষের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা, মানবতাবাদী সংস্কৃতিবোধ, কল্যাণমুখী, অসাম্প্রদায়িক এবং প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা তিনি কখনো ত্যাগ করেননি। সমাজ-সংস্কৃতির সব ক্ষেত্রেই তিনি তার সৃজনশীল প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন। মানবতাবাদী কলিম শরাফী বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোকেই তার জীবনের আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক রূপা চক্রবর্তী বলেন, বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব কলিম শরাফী তার দীর্ঘ কর্মময় জীবনে অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। তার দু্যতিময় ব্যক্তিত্ব, অকুতোভয় চিত্ত এবং লড়াকু জীবনাদর্শ আমাদের প্রত্যয়ী করে।

আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সরকার মাসুদ, কথাসাহিত্যিক নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন এবং নাট্যগবেষক মাহফুজা হিলালী।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আসলাম সানী, তপন বাগচী, মারুফ রায়হান, জাহিদ মুস্তাফা, স্নিগ্ধা বাউল এবং শাহিদা পারভীন রেখা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সোহরাব হোসেন, তামান্না তিথি এবং ফয়জুল আলম পাপ্পু। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুঁথি পাঠ করেন লাল মাহমুদ। এ ছাড়া সিদ্দিকুর রহমান পারভেজের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন 'মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র' দলগত আবৃত্তি পরিবেশন করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল সুরাইয়া পারভীনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী' এবং সবুজ শামীম আহসানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'কৃষ্টিবন্ধন'-এর পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী আলম দেওয়ান, আজগর আলীম, পাগলা বাবলু, আজমল শাহ, শিলা দেবী এবং ফারজানা আফরিন ইভা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন দীপক কুমার দাস (তবলা), ইফতেখার হোসেন সোহেল (কী-বোর্ড), মো. শহিদুল ইসলাম (বাঁশি), রণজিৎ কুমার বৈরাগী (দোতারা) এবং মো. হাসান মিয়া (বাংলা ঢোল)।

আজকের সময়সূচি : আজ সোমবার অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : হেনা দাস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ঝর্না রহমান এবং ফওজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শিরীণ আখতার।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে