আজকের যায়যায়দিন

দেশের সাতটি হাসপাতালে আহত রোগী ভর্তি আছেন ৫৩ হাজার ২০৭ জন। কিন্তু বিআরটিএর প্রতিবেদনে আহত রোগী সাত হাজার ৪৯৫ জন। বিআরটিএর এই প্রতিবেদনকে অসম্পূর্ণ উলেস্নখ করে সরকারি উদ্যোগে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তথ্য ব্যাংক চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত 'এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক ডাটা ব্যাংক চাই' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, বিআরটিএর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩ সালে পাঁচ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ২৪ জন নিহত, সাত হাজার ৪৯৫ জন আহত হয়েছেন। এ তথ্য বিআরটিএ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এখানে কোনো হাসপাতালের তথ্য নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান সঠিক ও নির্ভুল দাবি করলেও আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি হয়েছেন ১৪ হাজার ৩৫৭ জন রোগী। একই সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ হাজাত ৮৭৯ জন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ হাজার ২৯৩ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চার হাজার ৭৮৪ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালয়ে তিন হাজার ৫৬৩ জন, কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয় হাজার ৭৪৮ জন এবং ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতালে চার হাজার ৫৮৩ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।

বিআরটিএ সারাদেশ থেকে তুলে আনতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মাত্র এই সাত হাসপাতালে ভর্তির তথ্য মিলেছে ৫৩ হাজার ২০৭ জনের। বিআরটিএর প্রতিবেদনে দেশের একটি বিভাগীয় সদর হাসপাতালে ভর্তিকৃত সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যাও সারাদেশ থেকে তুলে আনতে পারেনি।

দেশের ৬৪টি জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে আটজন এবং বিভাগীয় হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন, এমনটা যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে বলে দাবি করেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

সারাদেশে আট হাজার নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালের চিত্রও অনুরূপ মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর ১৫ শতাংশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এমন আহত আড়াই থেকে তিন লাখ আহত রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় কী পরিমাণ মারা গেছেন, এর চিত্র বিআরটিএর প্রতিবেদনে আসেনি। ফলে তাদের প্রতিবেদনে হতাহতের সংখ্যা ও দুর্ঘটনার সংখ্যায় যে বিভ্রান্তি রয়েছে, তা স্পষ্ট।

গত এক দশকে মোটর সাইকেলের সংখ্যা ১৫ লাখ থেকে ৪৫ লাখ থেকে উন্নীত হয়েছে, একই সময় ৩০ লাখের বেশি ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটররিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহন বেড়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেসবিহীন যানবাহনও দ্বিগুণ হয়েছে বলে দাবি করেন সভায় উপস্থিত বক্তারা।

তারা বলেন, কৃষিশ্রমিকরা বেশি লাভের আশায় ইজিবাইক ও মোটর সাইকেল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। এসব কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। এর সঙ্গে পালস্না দিয়ে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসরণ করে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমে এসেছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, বিআরটিএ সেকেন্ডারি সোর্স ব্যবহারের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে পারছে না। ফলে দেশের মানুষের জীবন বাঁচাতে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

এই পরিস্থিতিতে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকারি উদ্যোগে বিআরটিএ মাধ্যমে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালুর দাবি জানান বক্তারা। একই সঙ্গে ছোট যানবাহন বন্ধ করে নিরাপদ সাশ্রয়ী ও স্মার্ট গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন।

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সড়ক নিরাপত্তা জোটের সভাপতি ড. হোসেন জিলস্নুর রহমান, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ আব্দুল হক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব রোবায়েত ফৌরদোস, বিশিষ্ট সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন প্রমুখ।