বিরাট রাজার ঢিবি খননে মিলেছে মধ্যযুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

এবিএস লিটন, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা)
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার 'বিরাট রাজার ঢিবি' খননে ইটের তৈরি প্রাচীন অবকাঠামোসহ নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। এগুলো মধ্যযুগের হতে পারে বলে ধারণা করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। খনন কাজ পরিচালনা করছে রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক দল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং খননকারী দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত ঢিবিটির দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার, প্রস্থ ৩৫ মিটার এবং উচ্চতা ৪ মিটার। এছাড়াও এর আশপাশে আরও ৪টি ঢিবি রয়েছে। খননে ধারণার চেয়ে বড় আকারের অবকাঠামো পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এখানে পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট (সাধারণত ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত), ভিত্তিপ্রস্তর পিলার পাওয়া গেছে, যা প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে। তবে নিদর্শনগুলো ঠিক কোন সময়ের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য ছিল, বড় আকারে খনন কাজ সম্পন্ন না হলে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়।' এদিকে জনশ্রম্নতি আছে, এখানে প্রাচীন একটি দুর্গনগরী ছিল। এর নিরাপত্তার জন্য ছিল সুউচ্চ প্রাচীর। প্রাচীরের বাইরে প্রশস্ত ও সুগভীর পরিখা ছিল। তবে খননকারী দল এখন পর্যন্ত প্রাচীন দুর্গনগরীর কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মূল অবকাঠামোর সঙ্গে আরও দুই-তিনটি মন্দিরের সংযোগ সড়ক ছিল, যা ধ্বংসপ্রাপ্ত। খাজা এম এ কাইয়ুম নামের স্থানীয় একজন গবেষক দীর্ঘ ৪০ বছর বিরাট রাজার ঢিবি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার নোটবুকের তথ্যানুসারে, বিরাট রাজা পুরো ভারতবর্ষে 'মৎস্যরাজ' হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এই অঞ্চলে মাছ চাষের জন্য তিনি ৯৯৯টি পুকুর খনন করেন। রাখাল রাজ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২৫-২৬ সালে একটি প্রতিবেদনে উলেস্নখ করেন, ১৯০৫ সালের দিকেও এ স্থানটি জঙ্গলে ঘেরা ছিল। কয়েক বছর আগে সাঁওতালরা জায়গাটি পরিষ্কার করে ঘরবাড়ি তৈরি করেন। নাহিদ সুলতানা আরও বলেন, 'প্রত্নতত্ত্বস্থলটি ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বড় পরিসরে খনন কাজ করে জায়গাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেইসঙ্গে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।' প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিরাট রাজার ঢিবি খনন কাজ শুরু করে গত বছর। অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি খনন দল এ কাজটি করছে। দলের ৮ সদস্য হলেন- ড. নাহিদ সুলতানা, ড. আহমেদ আবদুলস্নাহ, রাজিয়া সুলতানা, হাবিবুর রহমান, এস. এম হাসানাত বিন ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ, তারিকুল ইসলাম ও উম্মে সালমা ইসা। এছাড়া ২০ জন শ্রমিক খনন কজে নিয়োজিত আছেন। উলেস্নখ্য, আনুষ্ঠানিক খননকাজের আগে এখানে ১৯৭৮ সালে পাওয়া যায় সংস্কৃত অক্ষরে খোদাই করে 'নমঃ নমঃ বিরাট' লেখা ৯ ইঞ্চি দীর্ঘ মহামূল্যবান একটি শিলালিপি। যা মহাস্থান যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া কৃষ্ণ রঙের শিলা দিয়ে তৈরি হস্তি মস্তকটি রাজশাহী যাদুঘরে ও সিংহদ্বারের একটি পাথরের খাম্বা মহাস্থান যাদুঘরে রয়েছে। প্রায় ৫ টন ওজনের এক জোড়া পাথরের কপাট যুগ যুগ ধরে এখানে পতিত অবস্থায় ছিল। যা পরবর্তীতে খন্ড খন্ড করে গ্রামবাসী নিয়ে গেছে। এছাড়া এই এলাকায় বিভিন্ন সময় পুকুর বা মাটি খননে অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে।