ধামরাই ও ভালুকায় মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভ

৭ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ধামরাই (ঢাকা) ও ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকার ধামরাইয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও ময়মনসিংহের ভালুকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। শনিবার এই বিক্ষোভ চলাকালে মহাসড়কে অন্তত ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের বেতনের আশ্বাস দিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে প্রায় ৭ ঘণ্টা পর উভয় মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে ধামরাইয়ে থানা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে ফ্রেম হাউস ফুটওয়ার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় মহাসড়কে অন্তত ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে শিল্প ও ধামরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বেতন ভাতার বৃদ্ধির আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন। প্রায় ৭ ঘণ্টা পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। শ্রমিকরা জানান, প্রতিমাসে তাদের ৭ হাজার ১০০ টাকা বেতন হিসেবে দেওয়া হয়। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এই বেতনে তাদের স্বাভাবিক জীবন পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা সর্বনিম্ন ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনের দাবি জানিয়ে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার কথা বললেও তারা দাবি মেনে নেননি। এরই জেরে শনিবার শ্রমিকরা কারখানা সংলগ্ন মহাসড়কে অবরোধ করেন। সারোয়ার হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, 'আমরা ৭ হাজার ১০০ টাকা করে বেতন পাই। এ নিয়ে মালিকদের কাছে দাবি জানিয়েছি। তারা মানেননি। তাই আন্দোলন করছি।' মোহাম্মদ আলী নামে আরেক শ্রমিক বলেন, 'হেলপারদের ১২ হাজার ৫০০ ও অপারেটরদের ১৫ হাজার ৫০০ টাকা বেতন দিতে হবে এবং ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে। এই দাবিতে আমরা কারখানার সব শ্রমিক সড়কে নেমে আন্দোলন করছি।' শ্রমিকরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষকে বেতন বাড়ানোর দাবি জানানো হলেও মালিক কোনো কর্ণপাত করছেন না। বাজারের সব জিনিসের দাম বাড়ায় আমরা যা বেতন পাই তা দিয়ে চলতে পারছি না। তাই সরকারের ঘোষণা অনুয়ারী বেতন চাই আমরা। কারখানার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম প্রোডাকশন) জামাল বসুনিয়া বলেন, 'পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির গেজেট হলেও জুতা কারখানা শ্রমিকদের বিষয়ে গেজেট হয়নি। এরপরও শ্রমিকরা দাবি জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ আগামী মাসেই বর্ধিত বেতন দেওয়ার কথা ভাবছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।' এ ব্যাপারে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ার হোসেন খান বলেন, 'পোশাক কারখানায় যে নূ্যনতম বেতন দেওয়া হয়েছে; জুতা কারখানা শ্রমিকরা তা পাননি। একইভাবে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। মালিকপক্ষ বলছে, তাদের বিষয়ে তো গেজেট হয়নি। এ নিয়েই মূলত আন্দোলন। সকাল ৯টায় তারা সড়ক অবরোধ করে। তবে প্রায় আধাঘণ্টা আগে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।' একই দিন সকালে ছুটির টাকা ও বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে ভালুকায় রিদিশা স্পিনিং লিমিটেড ও রিদিশা বেস্নন্ডেড ইয়ার্ন লিমিটেডের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় ৪ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ জানায়, উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জামিরদিয়া স্কয়ার মাস্টার বাড়ী মায়ের মসজিদ এলাকায় অবস্থিত রিদিশা স্পিনিং মিল গেটের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে, রিদিশা স্পিনিং ও রিদিশা বস্ন্যান্ডেড ইয়ার্ন লিমিটেড প্রায় দুই হাজার শ্রমিকরা বিক্ষোভ-কর্মসূচি পালন করে। এতে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় দূরপালস্নার যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। কারখানার 'অটো-কোন' সেকশনের শ্রমিক অজুফা বলেন, 'সরকার ঘোষিত বেতন বৃদ্ধি ও দুই বছরের বকেয়া ছুটির টাকা পাওনার দাবিতে সকাল ৬টা থেকে এখানে অবস্থান করছি। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাব।' পরে এক পর্যায়ে মীর কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিয়ে কাজে যোগ দেন। শিল্প পুলিশ ময়মনসিংহ-৫ এর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, 'সরকারের বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি করা হবে।'