ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় ব্যবসায়ী ও পলস্নী বিদু্যতের ঠিকাদার কাজিমুদ্দিন হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছের্ যাব। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আপন ভাতিজা আব্দুল লতিফ খান পরিকল্পিতভাবে হত্যকান্ডটি ঘটায়। হত্যাকান্ডের মোটিভ ঘুরিয়ে দিতে পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক খুন বলে প্রচার করা হয়েছিল।
শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজারর্ যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, চলতি বছরের ৭ ফেব্রম্নয়ারি সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন ভেন্ডাবর এলাকার লিপি ডেইরি ফার্মের বিশ্রাম কক্ষ থেকে ফার্মটির মালিক কাজিমুদ্দিনের (৫০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কাজিমুদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডের ধরন দেখে প্রথমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করেছিল জঙ্গিরা হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটাতে পারে।
কিন্তু লাশ উদ্ধারের পরপরই ঘটনাটি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড বলে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। এমন ঘটনায় হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য নিয়ে রীতিমতো এক গোলকধাঁধায় পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী গত ৯ ফেব্রম্নয়ারি আশুলিয়া থানায় ২৮ নম্বর হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। হত্যাকান্ডের
রহস্য উদঘাটনে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশির্ যাবও গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে।
র্
যাব কর্মকর্তা বলছেন, তারই ধারাবাহিকতায় গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি রাতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের সূত্র ধরের্ যাব-৪ এর সদস্যরা আশুলিয়া থেকে মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ খাঁনকে (৩২) গ্রেপ্তার করে। লতিফের পিতার নাম মৃত আলী মোহাম্মদ খাঁন। বাড়ি সাভারে। তার কাছেই পাওয়া যায় নিহত কাজিমুদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি। যেটি হত্যার পর খোয়া গিয়েছিল।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে লতিফ হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে জানায়, লতিফ নিহত কাজিমুদ্দিনের বড় ভাইয়ের ছেলে। অর্থাৎ সম্পর্কে আপন ভাতিজা। লতিফের পিতা মারা যাওয়ার পর থেকে লতিফ তার চাচাদের সঙ্গে বাস করত। পৈতৃক সম্পত্তির অংশীদারত্ব নিয়ে কাজিমুদ্দিনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল লতিফের। প্রায়ই চাচা-ভাতিজার মধ্যে বাগ্বিতন্ডা হতো।
লতিফের বরাত দিয়ের্ যাব কর্মকর্তা জানান, বিরোধের মধ্যেই গত ৬ ফেব্রম্নয়ারি কাজিমুদ্দিন স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়ির কাছেই গড়ে তোলা তার নিজস্ব ডেইরি ফার্মে বেড়াতে যান। কাজিমুদ্দিন পরে স্ত্রী সন্তানকে বাড়িতে পাঠিয়ে নিজে ডেইরি ফার্মে থেকে যান। ফার্মের বিশ্রাম কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। বিষয়টি লতিফ পরে জানতে পারে। ফার্মে চাচা একা অবস্থান করছেন জানতে পেরে ওইদিনই মধ্যরাতে লতিফ ফার্মে যায়। চাচাকে ডেকে তুলে পৈতৃক সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে কথা তোলে। কথাবার্তার একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে তুমুল বাগ্বিতন্ডা ও হাতাহাতি শুরু হয়। উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে লতিফ ওই রুমে থাকা বঁটি দিয়ে কাজিমুদ্দিনের গলায় কোপ দেয়। কোপে কাজিমুদ্দিনের গলা কেটে যায়। ঘটনাস্থলেই কাজিমুদ্দিন মারা যান। লতিফ কাজিমুদ্দিনের মোবাইল ফোন নিয়ে বাইরে থেকে রুমে তালা দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
র্
যাব কর্মকর্তা জানান, যাওয়ার সময় লতিফ হত্যায় ব্যবহৃত বঁটিটি পাশের রুমে ফেলে যায়। পরদিন কাজিমুদ্দিনের স্ত্রী ফার্মে গিয়ে বিশ্রাম কক্ষের দরজায় তালা দেখেন। স্বামী বাইরে গেছেন ভেবে তিনি বাড়ি ফিরে যান। খানিক পরই ফার্মের কাজের লোক বাড়ি গিয়ে কাজিমুদ্দিনের স্ত্রীর কাছ থেকে ফামের রুমের চাবি নিয়ে আসে। ফার্মের দুটি চাবির মধ্যে একটি কাজিমুদ্দিনের কাছে অপরটি তার স্ত্রীর কাছে থাকত। তালা খুলে গরুর খাবার আনতে গিয়ে কাজের লোকের চক্ষু চড়কগাছ। দেখে বিছানায় কাজিমুদ্দিনের রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।