সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৮ ডিগ্রি ১৫-১৬ তারিখে বৃষ্টির আভাস
মাঘের শেষে শীতের দাপট শৈত্যপ্রবাহ ১৯ জেলায়
প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
মাঘের শেষে এসে আবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। শুক্রবার দেশের ১৯ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। তবে রাজধানীসহ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বৃহস্পতিবারের চেয়ে আজ কিছুটা বেড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এমন অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। আজ শনিবার থেকে একটু একটু করে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। তবে দেশের তিন বিভাগে তাপমাত্রা আবার কমতে পারে। তবে এবারের মৌসুমে শীতের বৃদ্ধি এটাই শেষ, আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস তেমনই।
তবে গত দু'দিন ধরে প্রচন্ড শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকছে শৈতপ্রবাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলো। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায়। ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিয়ে মৌসুমের শেষের দিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে অঞ্চলটিতে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়াতে রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া শুক্রবার দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৯ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১০ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি এবং রংপুরে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার যা ছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এবার ডিসেম্বরে শীত তেমন একটা ছিল না। তাপমাত্রা বরং স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশিই ছিল। কিন্তু জানুয়ারির শুরু থেকেই শীত পড়তে শুরু করে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া ফেব্রম্নয়ারির দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস কম ছিল। জানুয়ারিতে চার দফায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। বৃহস্পতিবার থেকে আবার শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৯টায় দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলার সংখ্যা ১৬। সেই অনুযায়ী দেশের ১৯ জেলায় আজ শৈত্যপ্রবাহ বইছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, 'তাপমাত্রা কাল থেকে একটু একটু করে বাড়তে থাকবে। আজই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকালের চেয়ে বেড়েছে। কাল অবশ্য চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের তাপমাত্রা একটু কমতে পারে।'
এদিকে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলা অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমিক, দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষ। প্রচন্ড শীতের কারণে কর্মহীন অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। অন্যদিকে শীতজনিত রোগ কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া আর শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুছ আলী জানিয়েছেন, হাসপাতালে ৯ ও ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে বেডের বাইরেও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুরা। এর বাইরে হাসপাতালের আউটডোরেও প্রতিদিন শত শত শিশুকে নিয়ে আসছেন তাদের মায়েরা। এ অবস্থায় শিশুদের সকালে এবং সন্ধ্যার পরে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোতে পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকার আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
শুক্রবার সকালে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। দক্ষিণাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং উত্তরাঞ্চলে তা বৃদ্ধি পেতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শনিবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
রোববার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।
পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাতে গিয়ে আবহাওয়া বিভাগ বলছে, তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে এবং বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা ও তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে প্রতিনিধিরা জানান, চুয়াডাঙ্গা এবং পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কুয়াশা না থাকলেও সকাল থেকে দেখা মিলেছে সূর্যের, তবে শৈত্যপ্রবাহের কারণে কমেনি শীতের দাপট।
চুয়াডাঙ্গা শহরের মুরগি বিক্রেতা ইয়ারুল আলি বলেন, 'কয়েক দিন পর সকালে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। গ্রাম থেকে খুব সকালে শহরে মুরগি বিক্রি করতে হয়। প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে লোকজনের দেখা মিলছে না।'
কয়েকজন দিনমজুর জানান, কনকনে শীত, সঙ্গে বাতাস আরও তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভোরে কৃষিকাজের জন্য মাঠে এসে ঠান্ডায় হাত চলছে না।
এদিকে শীতজনিত কারণে শিশু ডায়রিয়ায় সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া নিউমোনিয়া রোগীও বাড়ছে। প্রতিদিন শীতজনিত কারণে শিশু ও বয়োবৃদ্ধসহ ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান হক বলেন, 'শুক্রবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। চুয়াডাঙ্গায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামীকালও একই রকম আবহাওয়া থাকতে পারে। এরপর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। আর আগামী ১৫ থেকে ১৬ তারিখের দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।'