রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

আইকনিক রেলস্টেশনে বসছে অত্যাধুনিক স্ক্যানার

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আইকনিক রেলস্টেশনে বসছে অত্যাধুনিক স্ক্যানার

ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ট্রেন চলাচল। এর মধ্য দিয়ে রেলযোগাযোগে যুক্ত হয়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এখানে তৈরি করা হয়েছে দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে তলস্নাশির ব্যবস্থা নেই। এমনকি ড্রাগ ডিটেকটিং স্ক্যানারও নেই। স্টেশনে মাদক শনাক্ত করতে রাখা হয়নি ডগ স্কোয়াডও। এ সুযোগে কক্সবাজার রেলপথে মাদকের গন্তব্য হয়ে উঠেছে ঢাকা। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, কক্সবাজার থেকে ট্রেনে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক পরিবহণ ঠেকাতে আইকনিক রেলস্টেশনকে বিশেষ জোন করার উদ্যোগ নিয়েছে অধিদফতর। এর অংশ হিসেবে রেলস্টেশনের প্রবেশমুখে যাত্রী এবং মালামালের ভেতর মাদক শনাক্তে ড্রাগ ডিটেকটিং স্ক্যানার ও এক্স-রে মেশিন বসানোর চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ডগ স্কোয়াডের সাহায্যে মাদক উদ্ধারে অভিযান চালাতে চাইছে সংস্থাটি। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম চেয়ে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বসানোর কথা ভাবছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।

সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও সনাতন পদ্ধতিতেই চলছিল নিরাপত্তা তলস্নাশি। স্টেশনের প্রবেশমুখে নেই আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম, স্ক্যানার বা আর্চওয়ে। এমনকি স্টেশনে অনায়াসে প্রবেশ করছেন স্থানীয় লোকজন। এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে মাদক কারবারিরা। সড়কপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চালু হওয়া ট্রেনকে মাদকের নতুন রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই আইকনিক রেলস্টেশনে ড্রাগ ডিটেকটিং স্ক্যানার ও এক্স-রে মেশিন বসানোর চেষ্টা চলছে।

মাদক ধরতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক জাফর উলস্ন্যাহ কাজল। তিনি বলেন, 'ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনে করে মাদক পাচারের তথ্য পেয়েছি আমরা। তাই রেলপথে মাদক পাচাররোধে কক্সবাজার রেলওয়েকে বিশেষ জোন করার প্রস্তাবনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বিশেষ জোনের জন্য একজন সহকারী পরিচালকসহ ৩২ জন জনবল, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ, যাত্রীদের তলস্নাশির জন্য পোর্টেবল ও অত্যাধুনিক ড্রাগ ডিটেকটিং স্ক্যানার, এক্স-রে মেশিন এবং প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াড চাওয়া হয়েছে।'

ট্রেনে মাদক পরিবহন করা হচ্ছে এই ধরনের তথ্য আমাদের কাছে আসছে প্রতিদিন, কিন্তু ধরতে পারছি না জানিয়ে জাফর উলস্ন্যাহ কাজল বলেন, 'কক্সবাজার-ঢাকা রুটের প্রতিটি ট্রেনে সাত শতাধিক যাত্রী যাতায়াত করেন। কিন্তু অল্প জনবল দিয়ে যথাযথভাবে তলস্নাশি করা যাচ্ছে না। তাই সন্দেহজনক যাত্রীদের শরীর এবং ব্যাগ বাধাহীনভাবে যাতে তলস্নাশি করা যায়, সেজন্য রেলওয়েকে চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।'

আগে সড়ক, নৌ এবং আকাশপথে কক্সবাজার থেকে সারাদেশে নানা কৌশলে মাদক পাচার হতো, নতুন করে যুক্ত হয়েছে রেলপথ এমনটি জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মেট্রোর (উত্তর) উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার বলেন, 'কক্সবাজার-ঢাকায় ট্রেন চলাচল শুরুর পর সড়কপথে মাদক পরিবহণ কমেছে। আগে যারা সড়কপথ ব্যবহার করত, তারা এখন রেলপথ ব্যবহার করছে এমন বহু তথ্য আমাদের কাছে আছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তাই মাদক ঠেকাতে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলওয়েকে ঘিরে বিশেষ জোন করার জন্য অধিদপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।'

মাদকের বিরুদ্ধে রেলওয়ে পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্স জানিয়ে রেলওয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরী বলেন, 'কক্সবাজার থেকে রেলযোগে মাদক পাচার ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তলস্নাশির পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্যরা নজরদারি বাড়িয়েছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে, আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবো।'

সম্প্রতি ট্রেনে তলস্নাশি ও অভিযান পরিচালনায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সংস্থাটির চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে দেওয়া চিঠিতে উলেস্নখ করা হয়েছে, সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজার দীর্ঘদিন ধরে পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও আইসসহ বিভিন্ন ভয়াবহ মাদক পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কক্সবাজার থেকে এসব মাদক নিত্যনতুন কৌশলে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। সড়কপথে মাদক পাচাররোধে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার সড়কে পুলিশ, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৮-১০টি চেকপোস্ট স্থাপন করেছে। এসব চেকপোস্টে নিয়মিত সব যানবাহন ও যাত্রীদের তলস্নাশি করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়, জেলা কার্যালয় ও গোয়েন্দা কার্যালয় ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দুই বছরে দুই হাজার ৯৩৭ মামলায় তিন হাজার ১৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ৯৬৯টি ঘটনা চেকপোস্টে ধরা পড়েছে। এসব ঘটনায় করা মামলায় এক হাজার ৩৩ জনকে ২০ লাখ ৬২ হাজার ৯৪২ পিস ইয়াবা, এক কেজি হেরোইন, দুই গ্রাম আইস, ৪২০ লিটার চোলাই মদ, ১০টি সোনার বারসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া মাদক পরিবহণে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, একটি মিনিবাস ও একটি মিনি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত চালু হলো আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস। বর্তমানে কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত দুটি ট্রেন চলাচল করছে। আরও ট্রেন সার্ভিস বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের। সড়কপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি এড়াতে মাদক পাচারকারীদের একটি বড় অংশ ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক ট্রেনযোগে পাচার করছে; যা ঠেকানো জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে