রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নবম দিনে মেলায় এসেছে ১৭১টি বই

শিশুদের কলতানে মুখর মেলা

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার শিশুপ্রহরে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে শিশুরা -যাযাদি

সাপ্তাহিক ছুটির দিন মানেই অমর একুশে বইমেলায় শিশুদের দিন। শুক্রবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এদিন শিশুদের কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলার শিশু চত্বর। সকাল ১১টা থেকে ছিল বিশেষ আয়োজন শিশুপ্রহর। এছাড়া শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় দুপুর থেকেই মেলায় বাড়তে থাকে ক্রেতা-দর্শনার্থী। বিকালে নাগাদ বইমেলার আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে অনেকে হেঁটে মেলায় আসেন। এতে ফুটপাত ছাড়িয়ে মূল সড়কে নামে মানুষের ঢল। সড়কে মানুষ, রিকশা, গাড়ির সমানতালে জট বেঁধে থাকতে দেখা গেছে বিকালে।

বাংলা একাডেমি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শুক্রবার কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়াসহ মোট ১৭১টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া এদিন অনুষ্ঠিত হয়েছে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে স্মরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মাসব্যাপী বইমেলায় শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে তার আগেই মেলায় আসে শিশুরা। এই প্রহরে সিসিমপুরে মঞ্চে নাচানাচি, গান, চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে তারা।

শুক্রবার মায়ের সঙ্গে বইমেলায় এসেছিল ঢাকার নবাবগঞ্জের মারিয়া এঞ্জেল গোমেজ। ষষ্ঠ শ্রেণির এ শিক্ষার্থী জানায়, বইমেলায় এবারই তার প্রথম আসা। অন্যদিকে ফাওজিয়া অথৈ এসেছে আজিমপুর থেকে। মেলা থেকে ছবি আঁকার বই কিনেছে সে। তার আগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছে সে।

শিশুপ্রহরের অন্যতম আকর্ষণ সিসিমপুর। সকালে এই মঞ্চে অর্ধশতাধিক শিশুকে লাফালাফি করতে দেখা যায়। বইমেলায় শিশুদের আনন্দকে রাঙিয়ে দিতে সিসিমপুর মঞ্চে থাকছে ইকরি, হালুম, টুকটুকি, শিকু, জুলিয়ার সঙ্গে আড্ডা। টিভি পর্দার এই জনপ্রিয় চরিত্ররা শিশুদের সামনে এসে পুরো শিশুচত্বরের আনন্দকে বাড়িয়ে দেয়।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সকাল ১০টায় আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন হয়।

মেলার পরিচালনা কমিটি জানায়, অমর একুশে বইমেলার উদযাপনের অংশ হিসেবে এই সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে। বিভিন্ন পর্বে এ প্রতিযোগিতা চলবে ২১শে ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত।

সকালে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর মেলার শিশুচত্বরে আসে

মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী ঝুমুর ও তার ভাই আশিক। মেলায় এসে খুব ভালো লেগেছে বলে জানায় তারা।

মেলায় ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই বাবা-মায়ের হাত ধরে আসতে থাকে শিশুরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তাদের উপস্থিতি। শিশুপ্রহরে সিসিমপুরের আয়োজনে হালুম, টুকটুকি, ইকরি, শিকুর সঙ্গে নাচ, গান, আবৃত্তিতে মেতে ওঠে শিশুরা। প্রিয় চরিত্রগুলোকে সামনে পেয়ে বিস্ময়ের শেষ নেই শিশুদের। অভিভাবকরাও তাদের দিয়েছেন সমান উৎসাহ। শিশুদের উচ্ছ্বসিত দেখে খুশি তারাও।

উলেস্নখ্য, মাসব্যাপী এ মেলায় সপ্তাহের দুই দিন শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই দুই ঘণ্টা সময় থাকছে শিশুদের জন্য। এই সময়টাকে শিশুপ্রহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

মেলায় কথা হয় গুলশান থেকে আসা পাঁচ বছরের সৌহার্দ্যর সঙ্গে। কী কী দেখেছো জানতে চাইলে সে বলে, 'হালুমকে দেখেছি, টুকটুকিকে দেখেছি, ইকরিকে দেখেছি, শিকুকে দেখেছি।' সবাইকে দেখে কেমন লাগছে জানতে চাইলে সে জানায়, 'খুব ভালো লাগছে।'

মোহাম্মদপুর থেকে তিন বছর বয়সি রাহুলকে নিয়ে শিশু প্রহরে এসেছেন বাবা মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, 'ছুটির দিনে সবসময়ই বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে বের হই। বইমেলায় শুরুর পর শিশুপ্রহরে আসছি। ও টেলিভিশনে সিসিমপুর দেখে। সামনে থেকে এখন হালুম, টুকটুকি দেখে খুব খুশি। বাচ্চাদের খুশি মানে আমাদেরও খুশি।'

বেলা ১২টায় সিসিমপুরের আয়োজন শেষ হতেই বইয়ের স্টলগুলোতে ভিড় জমে শিশুদের। অভিভাবকদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে বই পছন্দ করতে ও কিনতে দেখা যায় তাদের। শিশু প্রহরে বিকিকিনিতে খুশি বিক্রয়কর্মীরাও।

আজিমপুর থেকে আসা ছয় বছরের মিম জানায়, তার কার্টুন ভালো লাগে। তাই সে কার্টুনের বই কিনেছে। তারা বাবা রাইসুল ইসলাম বলেন, 'বাচ্চাকে নিয়ে সকালে এসেছি, বিকালে ভিড় হবে তাই। ওর পছন্দের বই দেখছে, কিনছে। এর আগে সিসিমপুর দেখেছে। খুব খুশি হয়েছে।'

ময়ূরপঙ্ক্ষী স্টলে প্রকাশনাটির প্রকাশক মিথি ওসমান বলেন, 'শিশু প্রহরে আজ শিশুদের উপস্থিতি খুব ভালো। সবাই বই দেখছে, কিনছে। বেশি বিক্রি হচ্ছে কার্টুনের বই।'

শুক্রবার বিকালে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা বলছেন, একের পর এক গাড়ি ও রিকশার চাপ বাড়তে থাকায় বইমেলার আশপাশের এলাকায় বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। টিএসসি এলাকায় অবৈধ পার্কিং ও ছুটির দিনে টিএসসির বাইরের গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে জট আরও বেড়েছে। চাপ সামলাতে এক রকম হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

তবে অনেকে মনে করছেন, বইমেলার কারণে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ থাকায় এই যানজট আরও তীব্র হয়েছে।

বইমেলার এক দর্শনার্থী সামিউল বলেন, 'শাহবাগ থেকে হেঁটে এতদূর এসেছি। পহেলা বৈশাখের দিন যেমন ভিড় হয় আজ তার চেয়েও বেশি ভিড় হয়েছে।

এদিকে বিক্রেতারা জানালেন, ভিড় ও বিক্রি আগের চেয়ে দুটোই বেড়েছে। বিক্রি বাড়ায় তারা খুশি।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে