রাজধানীর বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু (পোস্তগোলা সেতু) মেরামতের জন্য ১৯ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ৬ মার্চ ভারী যানবাহন (ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, কাভার্ডভ্যান, কনটেইনারবাহী লরি) চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। একই সঙ্গে ২২, ২৩, ২৭ ফেব্রম্নয়ারি এবং ৩ ও ৬ মার্চ হালকা যানবাহন চলাচলও বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জোন সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সাজ্জাদ চৌধুরী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুড়িগঙ্গা সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ৮০-এর দশকে এবং চালু হয় ১৯৮৯ সালে। এটি প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু হিসেবেও পরিচিত। এটি বাংলাদেশ ও চীন যৌথভাবে তৈরি করেছে। সেতুটি ৭২৫ মিটার দীর্ঘ।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ জুলাই মুন্সীগঞ্জ থেকে সকাল সোয়া আটটায় রওনা দিয়ে এমভি মর্নিং বার্ড নামের একটি ছোট লঞ্চ ১
সোয়া নয়টার দিকে সদরঘাটের কাছাকাছি শ্যামপুরে এসে পৌঁছায়। এ সময় চাঁদপুরগামী এমভি ময়ূর-২ লঞ্চটি পেছনের দিকে বাঁক নিতে গিয়ে ছোট লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে এর ওপর দিয়ে চলে যায়। ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লঞ্চটি ডুবে যায়। তখন উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ডুবে যওয়া লঞ্চটিতে প্রায় ৬০ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ডুবুরিরা ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করেন। কিন্তু লঞ্চটি উদ্ধারেও বিপত্তি ঘটে। পরদিন সকাল পর্যন্ত উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু (পোস্তগোলা সেতু) পার হওয়ার সময় সেতুতে ধাক্কা দেয় ও আটকে যায়। তখন উদ্ধারকারী লঞ্চটির ধাক্কায় সেতুর নিচের পাটাতন ও বিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পরপরই কয়েক দফায় সংস্কার করা ঝুঁকিপূর্ণভাবে সেতুতে যানবাহন চলাচল করছিল।
ভারী যানবাহনের জন্য নির্দেশনা
সওজ সূত্রে জানা যায়, সংস্কার কাজ চলাকালে গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কগামী (কেরানীগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ) যানবাহন বেড়িবাঁধ রোড দিয়ে বাবুবাজার সেতু ব্যবহার করে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া হয়ে মহাসড়কে প্রবেশ করবে। যাত্রাবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক যানবাহন ধোলাইরপাড় বাসস্ট্যান্ড ও বাবুবাজার সেতু ব্যবহার করে তেঘরিয়া ইন্টারসেকশন হয়ে মহাসড়কে প্রবেশ করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক দিয়ে গাবতলীগামী যানবাহন কেরানীগঞ্জ তেঘরিয়া ইন্টারসেকশন হতে বাবুবাজার সেতু-বেড়িবাঁধ হয়ে গাবতলী প্রবেশ করবে। এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক হতে যাত্রাবাড়ীগামী যানবাহন তেঘরিয়া ইন্টারসেকশন-বাবুবাজার সেতু ব্যবহার করে ধোলাইরপাড় হয়ে যাত্রাবাড়ী প্রবেশ করবে।
হালকা যানবাহনের জন্য নির্দেশনা
২২, ২৩, ২৭ ফেব্রম্নয়ারি এবং ৩ ও ৬ মার্চ (বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশা ইত্যাদি) বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সওজ জানায়, পদ্মা সেতু হতে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামমুখী যানবাহন শ্রীনগর-মুন্সীগঞ্জ-মুক্তারপুর সেতু-৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু-মদনপুর সড়ক ব্যবহার করতে পারবে। সিলেট, চট্টগ্রাম হতে পদ্মা সেতুমুখী যানবাহন মদনপুর হতে ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু-মুক্তারপুর সেতু, মুন্সীগঞ্জ-শ্রীনগর সড়ক ব্যবহার করতে পারবে। পদ্মা সেতু হতে ঢাকাগামী যানবাহন শ্রীনগর দোহার-নবাবগঞ্জ- কেরানীগঞ্জ (আর-৮২০) সড়ক, তুরাগ-রোহিতপুর (জেড-৫০৬৯), আব্দুলস্নাহপুর-রাজাবাড়ী বাজার-কোনাখোলা মোড়-বছিলা সেতু-মোহাম্মদপুর সড়ক ব্যবহার করতে পারবে।
জনপথ বিভাগের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান জানান, গত ২০২০ সালে সেতুর নিচে পিলারে লঞ্চের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেতু সংস্কার কাজের জন্য এটি টানা বন্ধ থাকবে না। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। ১৯ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ভারী যানবাহন এবং ২২, ২৩ ও ২৭ ফেব্রম্নয়ারি এবং ৩, ৬ মার্চ হালকা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে এবং বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সেতুর পাটাতনগুলো আগের থেকে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতেই সংস্কারের জন্য নির্ধারিত তারিখ সকাল-সন্ধ্যা সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্কারকাজ শেষ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা খুলে দেওয়া হবে।