প্রাণের বইমেলা
বিকাল হতেই জমজমাট মেলা
সপ্তম দিনে মেলায় এসেছে ৮০টি বই
প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
সপ্তাহ শেষে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই অমর একুশে বইমেলায় বাড়তে থাকে বইপ্রেমীদের ভিড়। উদ্বোধনের পর থেকে যত দিন গড়াচ্ছে, ততই মেলায় ভিড় বাড়ছে পাঠক, লেখক ও দর্শনার্থীর। এদিন অফিস শেষে অনেকেই দলবেঁধে বইমেলায় আসেন। বইও কিনেছেন অনেকে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, এখনো আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি। আর প্রকাশকরা তাদের নতুন বই মেলায় আনতে প্রেসপাড়ায় ঘোরাঘুরির পরও আসছেন মেলায়। খোঁজ নিচ্ছেন বেচাবিক্রির।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, এদিন দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই এসেছেন দলবেঁধে। কেউ কেউ বন্ধুবান্ধব আবার কেউ পরিবার-পরিজন ও প্রিয় মানুষকে নিয়ে। শিশু, কিশোর-কিশোরী এসেছে তাদের মা-বাবার সঙ্গে। সব মিলিয়ে জমে উঠেছে প্রাণের মেলা, বইমেলা।
বড়দের মতো শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরাও ভিড় জমিয়েছেন বইমেলায়। তাদের সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বা সায়েন্স ফিকশন বইয়ে। সে অনুযায়ী আগে থেকে জেনে আসা বইয়ের নাম খুঁজছেন, হাতের কাছে পেলে কিনেও নিচ্ছেন তারা। প্রাণের এই বইমেলায় সপ্তাহের শেষ দিন বইপ্রেমী ক্রেতা, দর্শনার্থীদের পদচারণায় সন্তোষ প্রকাশ করেন মেলার সংশ্লিষ্টরা।
আজিমপুর গার্লস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুঁই বইমেলা ঘুরে ঘুরে দুটি সায়েন্স ফিকশন বই কিনেছেন। তিনি বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই সায়েন্স ফিকশন বই পড়তে ভালো লাগে। তাই বইমেলার শুরুতেই বই কিনতে এসেছি। বইমেলা চলাকালে আরও যেসব সায়েন্স ফিকশন বই আসবে, সেগুলোও কিনব। আমার মতো বয়সিদের কাছে সায়েন্স ফিকশন বই খুবই জনপ্রিয়।'
এদিকে কয়েকজন লেখক আক্ষেপের সঙ্গে বলছেন, এই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের হাটবাজারে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হলেও লেখকরা ঠিকমতো সম্মানী পান না। হাতেগোনা কয়েকটি প্রকাশনী ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে লেখকরা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এ বিষয়ে নীতিমালার দাবি জানান তারা।
এবারের মেলা বৃষ্টির মতো দুর্যোগ দিয়ে শুরু হলেও আর প্রকৃতির দুর্যোগে পড়তে হয়নি কাউকে। ফলে মেলায় বাড়ছে ভিড়। মেট্রোরেলের কল্যাণেও এবার মেলায় যাত্রীদের যাতায়াতে খুবই সুবিধা হয়েছে।
একটি-দুটি করে বই কিনতে কিনতে বাড়িতে বেশ ভালো একটি পাঠাগার গড়ে তুলেছেন মোহাম্মদপুরের মো. নাহিদ আখতার। একটি বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন। স্ত্রী ইফরাত সুলতানাও বেসরকারি ব্যাংকের চাকুরে। মেলার মাঠে দেখা গেল ব্যাগভরা বই নিয়ে স্টলে স্টলে ঘুরছেন।
নাহিদ আখতার বললেন, আবুল মকসুদ ও আকবর আলি খানের দারুণ ভক্ত তিনি। ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর মেলা থেকে অন্তত ২০-২৫টি বই কেনেন। পত্রপত্রিকায় বইয়ের রিভিউ দেখে বই কেনার তালিকা করেন। মেলা ছাড়াও সারা বছরই সেই তালিকা থেকে বই কেনেন।
মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান
বৃহস্পতিবার মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'আহমদ শরীফ' শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজীব সরকার। আলোচনায় অংশ নেন মোরশেদ শফিউল হাসান এবং আফজালুল বাসার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী।
প্রাবন্ধিক বলেন, 'শিক্ষক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও সমাজ রূপান্তরকামী বুদ্ধিজীবী-বহুমাত্রিক পরিচয়ে ভূষিত আহমদ শরীফ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি চিন্তাবিদ। রেনেসাঁর প্রতি তার ছিল গভীর অনুরাগ। আহমদ শরীফের ইহজাগতিক জীবনদর্শনের মূলে কাজ করেছে রেনেসাঁস চেতনা। মানুষের কল্যাণ সাধনই ছিল তার ব্রত।
আলোচকরা বলেন, বিংশ শতাব্দীর একজন আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ছিলেন অধ্যাপক আহমদ শরীফ। তিনি বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ নিয়ে মৌলিকভাবে গবেষণা করেছেন। গভীর অনুসন্ধিৎসা ও জ্ঞানতৃষ্ণা ছিল তার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। জ্ঞানের আড়ষ্টতা ছাড়িয়ে জ্ঞানের গতিশীলতার প্রতি আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়েছেন তিনি। বস্তুবাদী ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন আহমদ শরীফ সমাজব্যবস্থায় বিপস্নব ঘটানোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, 'অধ্যাপক আহমদ শরীফের চিন্তাজগৎ ছিল সুদূরপ্রসারিত। জ্ঞান অন্বেষণের ধারাবাহিকতায় তার চিন্তাজগতে বিবর্তনও ঘটেছে। নতুন বিষয়কে সহজভাবে গ্রহণ করার ক্ষমতা ছিল তার। এই মহান চিন্তকের ইহজাগতিক ও রেনেসাঁ-চিন্তা আজও প্রাসঙ্গিক।'
লেখক বলছি মঞ্চ
বৃহস্পতিবার নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শিশুসাহিত্যিক দীপু মাহমুদ, গবেষক আলী আকবর টাবী, কবি সুমন সরদার এবং কথাসাহিত্যিক শাহরিয়া দিনা।
এ ছাড়া মূল মঞ্চে কবিতা পাঠ করেন কবি আশরাফ আহমদ, নাসরীন জাহান, কামরুল হাসান এবং আলফ্রেড খোকন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন- আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম, শাকিলা মতিন মৃদুলা এবং অতনু করঞ্জাই।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুথি পাঠ করেন- মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও ছিল এ. কে. আজাদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'আনন্দন' এবং শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সুর সুধা সঙ্গীতায়ন'-এর পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন- কণ্ঠশিল্পী আকরামুল ইসলাম, আবুবকর সিদ্দিক, দেলোয়ার হোসেন বয়াতি, আমজাদ দেওয়ান, লাভলী দেব এবং আবদুল আউয়াল। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন- তুলসী সাহা (তবলা), সুমন রেজা খান (কী-বোর্ড), মো. মনিরুজ্জামান (বাঁশি) এবং শাহরাজ চৌধুরী তপন (গীটার)।
আজকের অনুষ্ঠান
আজ শুক্রবার বইমেলার নবম দিন। সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করবেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। সকাল ১০টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিকালে বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'এস. ওয়াজেদ আলি' শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন- আবু হেনা মোস্তফা এনাম। আলোচনায় অংশ নেবেন ইকতিয়ার চৌধুরী এবং কুদরত-ই-হুদা। সভাপতিত্ব করবেন- অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।
চট্টগ্রামে বইমেলা আজ শুরু
চট্টগ্রামে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ২৩ দিনের অমর একুশে বইমেলা। তবে এবার জিমনেসিয়াম মাঠে মেলার অনুমতি না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন লেখক ও প্রকাশকরা। এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের সিআরবির শিরীষতলা মাঠে। মেলায় অংশ নিচ্ছে দেশের শতাধিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
মেলায় অংশগ্রহণ করা প্রকাশনীগুলো জানায়, এরই মধ্যে বাহারি সাজে স্টল সাজানো শুরু করেছে প্রকাশনীগুলো। তবে আগে যেখানে বইমেলা হতো, সেই জায়গাটি বইমেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা হিসেবে স্বীকৃত ছিল। আর এখন বইমেলার নতুন জায়গার বিষয়ে সবার কাছে প্রচার চালাতে হচ্ছে। এ কারণে নতুন জায়গায় তারা এবার বইমেলা কতটা জমাতে পারবেন, সে ব্যাপারে সন্দিহান। তবে ধীরে ধীরে বইমেলা জমজমাট হবে বলে আশা তাদের।
চট্টগ্রাম প্রজ্ঞালোক প্রকাশনী থেকে রেহেনা চৌধুরী জানান, নতুন জায়গায় বইমেলার বিষয়টি বই কেনা-বেচায় একটা প্রভাব ফেলবে।
রাদিয়া প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী গোফরান উদ্দিন টিটু বলেন, 'এবার নতুন জায়গায় হলেও আগামী বছর আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারব বলে আশা করছি।'
এদিকে ২৩ দিনের এই মেলাকে আকর্ষণীয় ও সফল করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি জানান, বইমেলার জন্য নতুন নির্ধারিত স্থানটি যথোপযুক্ত হয়েছে।
প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এই বইমেলা।