সাত ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদিত ব্যয় হবে ২২৭৭ কোটি টাকা

তিন কার্গো এলএনজি ও ড্রেজার কিনবে সরকার

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ২৭৪ কোটি টাকায় ৩ কার্গো লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি), পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে প্রায় ১৫৭ কোটি টাকায় একটি কাটার সাকশন ড্রেজার কেনাসহ সাত ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের একটি, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের দুটি এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের চারটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২২৭৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির তৃতীয় বৈঠকে প্রস্তাবগুলো অনুমোদিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহমুদ খান প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। অতিরিক্ত সচিব বলেন, 'অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২০২৪ সালের ২য় এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩য় সভা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৭টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ক্রয়ের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ৪টি, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের ২টি এবং সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। এতে মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ২৭৭ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ৪৩১ টাকা।' তিনি বলেন, 'সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন' প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডবিস্নউপি-০৬, লট নং-১২বি-এর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পূর্ত কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ১০টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে ৯টি কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে জেডজেডএইচই, চায়না; এবং এমআইএল, বাংলাদেশ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৬৬৮ কোটি ৩৮ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৮ টাকা।' সাঈদ মাহমুদ খান বলেন, 'পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর খনন (প্যাকেজ-৩, লট-২) এর পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তার মধ্যে ২টি প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭৬ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১০০ টাকা।' 'সভায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর খনন (প্যাকেজ-৩, লট-৩) এর পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তার মধ্যে ২টি প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এনডিই এবং ভিসিএল, ঢাকাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৭৯ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার ৪৯৯ টাকা।' অতিরিক্ত সচিব বলেন, 'বিদু্যৎ ও জ্বালানির দ্রম্নত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১'-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৪ সালের ৫ম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভার অনুমোদনক্রমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২২টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেলস অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য ২২টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। ৪টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এই এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ৯.৮৪৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে ৪২৫ কোটি ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৯০৪ টাকা।' তিনি বলেন, 'সভায় বিদু্যৎ ও জ্বালানির দ্রম্নত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১'-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৪ সালের ৭ম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। ২টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশের প্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর এই এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ৯.৭৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে ৪২২ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার ৬৪০ টাকা।' অতিরিক্ত সচিব জানান, 'শ্রীকাইল গ্যাস ক্ষেত্রের জন্য ওয়েলহেড কম্প্রেসর সংগ্রহ' প্রকল্পের আওতায় ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। গ্যাসে ক্ষেত্রের জন্য ওয়েলহেড কম্প্রেসর সংগ্রহ, স্থাপন, টেস্টিং ও কমিশনিংসহ এক বছর যৌথভাবে পরিচালনার জন্য ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ৪টি দরপত্র কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান এস সি ইউরো গ্যাস সিস্টেম এস.আর.এল- রোমানিয়াকে সরবরাহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১৭৮ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার ৬০৬ টাকা।' এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা হয়। সভায় সাভার চামড়া শিল্পাঞ্চলের সিইটিপির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি প্রকল্প পিপিপি ভিত্তিতে পরিচালনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা ও সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রলণালয়ের সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী এদিকে সংসদ অধিবেশন থাকায় আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসার কথা থাকলেও সেটা বাতিল হয়েছে। সংসদ অধিবেশনসহ অন্যান্য কারণে তিনি এখন আসছেন না। পড়ে আসবেন। সেটা কবে তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। জানা গেছে, টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দ্রব্যমূল্য নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে। সামনে রমজান মাস থাকায় সরকারের প্রধান চিন্তা নিত্যপণ্যের দাম। নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও দাম নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেই পরিদর্শনের শীর্ষে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরের ধাপেই রেখেছেন কৃষি মন্ত্রণালয় পরিদর্শন। প্রসঙ্গ, ২০১৯ সালে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক পরিদর্শন শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার চতুর্থবার নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন। গত আমলে সরকারপ্রধানের মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের কারণে সচিবালয়ের কাজে গতি এসেছিল। এবারও একই ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি।