প্রাণের বইমেলা

দর্শনার্থীর ভিড়, বাড়ছে বিক্রিও

সপ্তম দিনে এসেছে ৬৯ বই

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বই মেলায় পছন্দের বই দেখছেন কয়েকজন পাঠক -যাযাদি
বুধবার ছিল অমর একুশে বইমেলার সপ্তম দিন। অন্যদিনের চেয়ে এদিন মেলায় দর্শনার্থী-ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেখকদের আনাগোনা। বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যদিনের চেয়ে এদিন বিক্রিও বেড়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই মেলায় আসছে নতুন নতুন বই। মেলার শেষ দুই সপ্তাহে বেশি বেচাকেনা হয় জানিয়ে প্রকাশকরা বলছেন, এর আগেই তাদের সব বই মেলায় চলে আসবে। এদিন মেলায় প্রকাশিত হয়েছে ৬৯টি নতুন বই। মেলা পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অমর একুশে বইমেলায় নীতিমালা লংঘন করায় পাঁচ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে মেলা পরিচালনা কমিটি। টাস্ক ফোর্সের পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে কমিটি মঙ্গলবার ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের তিন দিনের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তারা। জানা গেছে, মেলার তৃতীয় দিন শনিবার টাস্ক ফোর্স পরিদর্শনে গিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে আইএসবিএন ছাড়া পাইরেটেড বই খুঁজে পায়। পরে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তাদের পর্যবেক্ষণ জানায় মেলা কমিটিকে। তার ভিত্তিতেই কমিটি শোকজ দেয়। নিয়ম ভঙ্গ করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- গাজী প্রকাশন (স্টল ৩৭৪-৩৭৫), বঙ্গজ প্রকাশন, (স্টল ৪০৭), কুঁড়েঘর প্রকাশনী (স্টল ৪০৩-৪০৪), তৃপ্তি প্রকাশ কুঠির (স্টল ৩৭৬-৩৭৭), বাতিঘর প্রকাশনী (৪৫৫-৪৫৬)। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা জানান, মেট্রোরেল চালুর কারণে এবার বইমেলায় শুরু থেকেই লোক সমাগম হচ্ছে। বুধবার থেকে বই বিক্রিও বেড়েছে বলে জানান প্রকাশকরা। তেজগাঁওয়ে অফিস শেষ করে বিকালে মেলায় আসেন আবির হাসান। তিনি বলেন, 'মেলায় এসে অনেকের সঙ্গে আড্ডা হয়। এজন্যই আসি।' কবি শাহেদ কায়েস জানান, এবছর তার ভূমিকা ও ভাষান্তরে মেলায় এসেছে মাহমুদ দারবিশের কবিতার বই 'মুক্তিকামী মানুষের কবিতা'। বইটির প্রকাশ করেছে 'বৈভব' প্রকাশনী। বাংলা একাডেমি নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মেলার সপ্তম দিন মেলায় এসেছে ৬৯টি নতুন বই। এর মধ্যে কবিতাবই ১৫টি। এ ছাড়া গল্প ১০, উপন্যাস ১৫, প্রবন্ধ ৬, ছড়া ২, শিশুসাহিত্য ৫, জীবনী ৩, রচনাবলি ২, বিজ্ঞান ১, সায়েন্সফিকশন ৩টিসহ অন্য বই। মেলা মঞ্চের আয়োজন বুধবার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'গোবিন্দ চন্দ্র দেব' শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক প্রদীপ কুমার রায়। আলোচনায় অংশ নেন গবেষক জয়দুল হোসেন এবং কবি সাইফুলস্নাহ মাহমুদ দুলাল। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। প্রাবন্ধিক বলেন, 'ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব নানা অভিধায় অভিহিত ছিলেন। তিনি একদিকে ছিলেন অনন্য চিন্তক, দর্শনের অধ্যাপক, সর্বজনীন প্রেম ও প্রজ্ঞার এক বিরল ব্যক্তিত্ব, সর্বোপরি একজন উঁচুস্তরের মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ। তার চিন্তার পরিসর ছিল সর্বব্যাপী, তা ছিল মানবতা ও বিশ্বপ্রেম-রসে জারিত।' আলোচকরা বলেন, 'ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ছিলেন বিরল প্রতিভার অধিকারী মানবতাবাদী একজন দার্শনিক। তিনি সারাজীবন সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও অধিকারের কথাই ভেবেছেন। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে সবধর্ম সমন্বয়ী সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছেন এবং তা বাস্তবায়নের চেষ্টাও করেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত গোবিন্দ চন্দ্র দেব মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে গেছেন।' সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, 'ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব একজন স্মরণীয় বাঙালি। যুক্তি, বুদ্ধি, বিবেক ও গভীর দার্শনিক দৃষ্টি দিয়ে জীবন ও জগৎকে প্রত্যক্ষণ করেছেন তিনি। তার জীবন, কর্ম ও দর্শন তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে।' লেখক মঞ্চের আয়োজন বুধবার লেখক মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার ইসহাক খান, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মিল্টন বিশ্বাস, শিশুসাহিত্যিক সারওয়ার-উল ইসলাম এবং কবি মেঘ অদিতি। আজকের আয়োজন বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'আহমদ শরীফ' শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাজীব সরকার। আলোচনায় অংশ নেবেন মোরশেদ শফিউল হাসান এবং আফজালুল বাসার। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী।