ষষ্ঠ দিনে এসেছে ১০৮ নতুন বই

নজর কাড়ছে নান্দনিক স্টলগুলো

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বই মেলায় মঙ্গলবারও ছিল বইপ্রেমী ও দর্শকে ঠাসা -ফোকাস বাংলা
এবারের অমর একুশে বইমেলার স্টলগুলোর সাজসজ্জায় নান্দনিকতার ছোঁয়া লেগেছে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসছেন বইমেলায়। সাহিত্যানুরাগীরা প্রিয় লেখকের বই কিনতে এলেও, প্রথমদিকে বেশির ভাগই মেলায় আসছেন ঘুরতে। মেলার স্মৃতি ধরে রাখতে বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ছবি তোলার আগ্রহও বেশি লক্ষ্য করা গেছে। বইমেলার ষষ্ঠ দিন দেখা যায়, মেলায় বেশ কিছু স্টল-প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধারণ করে। বাংলা একাডেমি চত্বরের মেলা প্রাঙ্গণে স্টল রয়েছে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর। এর মধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের স্টল বানানো হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদের আদলে, শিল্পকলা একাডেমি শীতল পাটি দিয়ে এবং চীনা দূতাবাসের স্টল-চায়নিজ বুক সাজানো হয়েছে চায়নিজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে। এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে অন্য প্রকাশের প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে রিকশাচিত্র দিয়ে, আকাশ প্রকাশ সাজানো হয়েছে মুন্সীগঞ্জের ঐতিহাসিক টিনের ঘরের আদলে। এ ছাড়া ঘাসফড়িং, ময়ূরপঙ্খি ও অয়ন প্রকাশসহ বেশ কিছু স্টলে রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। এসব স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বই হাতে নিয়ে ছবি ও সেলফি তুলছেন দর্শনার্থীদের বড় একটি অংশ। বিক্রয়কর্মীরা জানান, অনেকে ছবি তুলতে এলেও পছন্দ হলে বই কিনছেন। অন্য প্রকাশের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন সামিয়া ইসলাম। তিনি বলেন, 'মেলায় এবারই প্রথম বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। হুমায়ূন আহমেদের বই কিনব। প্যাভিলিয়নটি দেখে চোখ আটকে গেল। তাই ছবি ও সেলফি তুলে রাখলাম সুন্দর এই আইডিয়ার জন্য।' সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসার আগে বইমেলা ঘিরে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ মুখর থাকত। বই আর সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের ভিড়ে স্টল ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই কেনা তখন হয়ে উঠত দুষ্কর। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও। এতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ২০১৪ সালে একাডেমি প্রাঙ্গণের পাশাপাশি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও বইমেলা সম্প্রসারণ করা হয়। এর পর থেকেই পাল্টে যায় মেলার চিত্র। এখন দুই চত্বরে বইমেলা বসলেও মূল আকর্ষণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। মেলার ষষ্ঠ দিন মঙ্গলবার লেখক, প্রকাশক আর পাঠকের উপস্থিতিতে উদ্যান প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে। তবে একাডেমি প্রাঙ্গণে কিছু স্টল থাকলেও নেই পাঠক-দর্শনার্থীর আনাগোনা। বলা যায়, অনেকটা নিষ্প্রাণ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ এদিকে ঢু মারছেন না। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টল আর রাজনৈতিক স্টলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বাংলা একাডেমি চত্বর। তবে এসব স্টলেও রয়েছে বিচিত্র বই। এ বছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি প্যাভিলিয়নসহ ১৭৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মূল মঞ্চও রয়েছে এখানে। তাই কিছু দর্শনার্থী মঞ্চের অনুষ্ঠানে আসছেন। তবে ব্যতিক্রম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এখানে দলবেঁধে পাঠক-দর্শক আসছেন। এবার মেট্রোরেল চালু হওয়ায় দর্শক-ক্রেতা বেড়েছে বলে লেখক-প্রকাশক মনে করছেন। গত কয়েকদিনের তুলনায় মঙ্গলবার বিক্রি বেড়েছে বলেও জানালেন কয়েকজন বিক্রয়কর্মী। নতুন বই এসেছে ১০৮টি : এদিকে বাংলা একাডেমি নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মেলার ষষ্ঠ দিনে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ, শিশুতোষ ইত্যাদি মিলিয়ে ১০৮টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া এদিন বিকালে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে 'মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন' শীর্ষক স্মরণসভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জফির সেতু। আলোচনায় অংশ নেন শাহিদা খাতুন এবং সৌমিত্র শেখর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- আবদুল খালেক। প্রাবন্ধিক বলেন, 'বাংলা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ মুহম্মদ মনসুর উদ্দীনের জন্ম ও কর্মপরিসর বিশ শতকে। তিরাশি বছরের জীবনে তিনি সংস্কৃতিসাধনায় মগ্ন ছিলেন তেষট্টি বছর। জীবনের এই দীর্ঘপরিসরে বাংলা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চায় যে অবদান তিনি রেখে গেছেন, তা তুলনারহিত।' আলোচকরা বলেন, 'বাংলাদেশের লোকসাহিত্যের পরিমন্ডলে মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন গুরুত্বপূর্ণ এক নাম। আমাদের গ্রামবাংলার লুপ্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তিনি আলোয় তুলে ধরেছেন। বাংলা লোকসাহিত্য-গবেষণায় আধুনিকতা ও আন্তর্জাতিকতার অগ্রপথিক তিনি।' সভাপতির বক্তব্যে আবদুল খালেক বলেন, 'লোকসাহিত্য সংগ্রাহক ও গবেষক মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন লোকসাহিত্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ জাগ্রত করার জন্য কাজ করেছেন। লোকসাহিত্য পরিমন্ডলে তিনি যে অসাধারণ কীর্তি রেখে গেছেন, তা বাঙালি সংস্কৃতিকে আলোকিত করেছে।' মঙ্গলবার 'লেখক বলছি' মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক খান মাহবুব, শিশুসাহিত্যিক শেলী সেনগুপ্তা, গবেষক নিগার চৌধুরী ও কবি আহমেদ শিপলু। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন- কবি সাজ্জাদ আরেফিন, ফারহান ইশরাক এবং সৌম্য সালেক। এ ছাড়াও সঙ্গীতানুষ্ঠান। আজকের অনুষ্ঠান আজ বইমেলার সপ্তম দিন বিকালে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'গোবিন্দ চন্দ্র দেব; শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন- অধ্যাপক প্রদীপ কুমার রায়। আলোচনায় অংশ নেবেন গবেষক জয়দুল হোসেন ও কবি সাইফুলস্নাহ মাহমুদ দুলাল। সভাপতিত্ব করবেন- অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। \হ