শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

নিপীড়নমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মানববন্ধন

জাবি প্রতিনিধি
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের ব্যানারে মানববন্ধন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা -যাযাদি

ধর্ষণ ও নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে 'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ'-এর ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে বহিরাগত নারী ধর্ষণের ঘটনায় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান ও হল প্রভোস্ট অধ্যাপক সাব্বির আলমের পদত্যাগসহ চার দফা দাবি জানায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় আন্দোলনকারীরা অতিসত্বর দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি দেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- আবাসিক হলে অবৈধভাবে অবস্থানরত অছাত্রদের বের করা, প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হল প্রভোস্টের পদত্যাগ, নিপীড়নের অভিযোগের অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনিকে চাকরিচু্যত করা এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সনদ বাতিল ও শাস্তি নিশ্চিত করা।

মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, 'অপরাধীদের বিচার না হওয়ায় আজ তারা ধর্ষকে পরিণত হয়েছে। আমরা আগে বলতাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সবার জন্য নিরাপদ। কিন্তু আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটছে। ধর্ষক তৈরি হয় গনরুম থেকে। ধর্ষকের কারখানা গোড়া থেকে বন্ধ করতে হবে। তাই গণরুম-গেস্টরুম কালচার বন্ধ করতে হবে।'

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রাইহান রাইন বলেন, ক্যাম্পাসে যত কিছুই হোক উপাচার্য নির্বিকার থাকেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন অভিভাবক নেই। অভিভাবক আছে ধর্ষক, চাঁদাবাজ আর মাদক ব্যবসায়ীদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে হলে রাখছে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, 'হল প্রশাসন প্রথমে ধর্ষণের কথা অস্বীকার এবং পরে ধর্ষককে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। সিন্ডিকেট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা যদি প্রশাসন বাস্তবায়ন না করে তাহলে আমরা এক দফা দাবিতে আন্দোলনে যাবো। এসময় তিনি উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমকে হুশিয়ার করে বলেন, 'আপনি আপনার চেয়ার খুবই পছন্দ করেন। যদি এ চেয়ারে থাকতে চান তাহলে অতিদ্রম্নত ধর্ষণের এই ঘটনার বিচার করুন।'

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, '২০১২-১৩ সেশনের অছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ইনান সকল অছাত্রকে হল ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ হল ছেড়ে যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও হল থেকে অছাত্র বের করার নামে পাঁচ কর্মদিবসের মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এমন প্রহসনমূলক নোটিশ এর আগেও দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এর আগেও আন্দোলনের মুখে ছাত্রলীগের ধর্ষকরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এবারও আমরা তাদের বের করে ধর্ষক ও নিপীড়ক মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ব।'

সমাপনী বক্তব্যে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধর্ষণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা না করে থানায় শুধু একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। উপাচার্য বারবার বলেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কমিটমেন্ট দেন কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেন না। যেমনটি হয়েছে মাহমুদুর রহমান জনির ক্ষেত্রে। প্রায় দেড় বছর পার হয়েছে এখন পর্যন্ত শিক্ষক জনির নিপীড়নের কোনো বিচার হয়নি।

মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এ এসএম আনোয়ারুলস্নাহ ভূঁইয়া ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান। এছাড়াও এসময় আইবিএর অধ্যাপক আইরিন আক্তার, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা ও অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রনি হোসাইনসহ প্রায় ২০ জন শিক্ষক এবং শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে